শিক্ষকের অপমানে শিক্ষার্থীর বিষপানে আত্মহত্যার চেষ্টা

সোমবার রাতে (১০ জানুয়ারি) রাফির বিষপান ও হাসপাতালে ভর্তির বিষয়টি রামেক হাসপাতাল পুলিশ বক্সের ইনচার্জ উপ-পরিদর্শক (এসআই) রুহুল আমিন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এসআই রুহুল আমিন বলেন, ওই সময় রাফির অবস্থা খারাপ হওয়ায় তার রুমমেটরা (রাফি)কে প্রথমে নওদাপাড়া ইসলামি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। পরে অবস্থা আরও আশঙ্কাজনক হয়ে পড়ায় সেখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসকরা রামেক হাসপাতালে রেফার করেন। পরবর্তীতে তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। তার শরীর থেকে বিষ পরিষ্কার করা হলেও বর্তমানে তার অবস্থা বেশ আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন রামেকের দায়িত্বরত চিকিৎসক।
ছেলের বিষপানের বিষয়ে রাফির বাবা রবিউল ইসলাম বলেন, বার্ষিক বা মাসিক শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মিটিংয়ে শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন সমস্যা ও পড়াশোনার মানন্নোয়নের বিষয়ে আলোচনা হয়। এতে আর-হ্যাবিট অর্থাৎ প্রতিষ্ঠানটির বেশকিছু বাইরের গণ্যমান্য শিক্ষক যারা অন্য জেলায় রয়েছেন এবং হেড অফিসে কিছু কর্তাব্যক্তি আসেন। তারা শিক্ষার্থীদের কাছে তাদের সমস্যার কথা জানতে চান। আমার ছেলে সরল মনেই পড়াশোনার মানন্নোয়নসহ প্রতিষ্ঠানটির বিভিন্ন সমস্যার কথা তুলে ধরেন। এতেই উপাধ্যক্ষ ক্ষিপ্ত হন।
‘এরপর তিনি আমার ছেলেকে জিজ্ঞাসা করেন, তোমার বাবা কী করেন? ছেলে উত্তর দেয়- বাবা শিক্ষকতা করেন। তখন তিনি অশ্লীল ও অপমানের সঙ্গেই বলেন তুমি শিক্ষকের ছেলে নও। তুমি শিক্ষকের ছেলে হলে এভাবে কথা বলতে না। তোমার বাবা যিনি শিক্ষক তুমি তার ছেলে না’
এমনকি উপস্থিত অন্যান্য শিক্ষকরাও তার সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন। এতে ছেলে খুব লজ্জা পায় এবং সে তার মেসে ফিরে আসে। মেসে ফিরে ফেসবুকে একটি স্ট্যাস্টাস দেয় এবং বিষপান করে বলে জেনেছেন তিনি।
রাফির বাবা আরও জানান, সে (রাফি) ছোটবেলা থেকেই স্পষ্টভাষী। হয়ত সমস্যার কথা জানতে চেয়েছে তাই বলেছে। সে দাবি করেছিল, ‘আমার বাবা প্রত্যেক সেমিস্টারে কষ্ট করে টাকা দেয়। তাদের কষ্টের টাকায় এখানে পড়তে এসেছি। তাই আমাকে একটু ভালোভাবে ক্লাস নেন ও পড়ার মানন্নোয়ন করেন’ এসব বলা কি তার অপরাধ?। সে ছাত্র হিসেবেও ভালো। দুই সেমিস্টারেই ফার্স্টক্লাস ফাস্ট হয়েছে। পড়ার মান ভালো চাওয়াটাই কি তার অপরাধ ছিল?
এ ঘটনার পর কলেজ থেকে রোববার তিনজন শিক্ষক বিকেলে আসেন দেখা করতে। সোমবার সন্ধ্যায় যান উপাধ্যক্ষ আব্দুল্লাহ আল মামুনসহ কয়েকজন। গিয়েই তিনি রাফির বাবাকে জানান, আমার সামান্য কথার প্রেক্ষিতে রাফি এমন কাণ্ড করবে আমি ভাবতেও পারিনি। আমাকে দেখে রাফির শরীর যেন আরও খারাপ না হয় তাই আসিনি।
আইনি কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন কিনা জানতে চাইলে রাফির বাবা বলেন, এখন ছেলের সুস্থতার বিষয়ে চিন্তিত। বিপদ এখনো কাটেনি। কোনো অঘটন ঘটলে বা ছেলের কিছু হলে সেটি দেখা যাবে। এখন শুধু ছেলের সুস্থতা কামনা করছি।
এ বিষয়ে প্রতিষ্ঠানটির উপাধ্যক্ষ মো. আব্দুল্লাহ আল মামুনকে তার মোবাইলের দুটি নম্বরে একাধিকবার কল করা হয়। কিন্তু তিনি ফোন রিসিভ না করায় তার মন্তব্য পাওয়া যায়নি।