হাইকোর্টের নিদের্শনাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় শিক্ষা অফিস

হাইকোর্টের নিদের্শনাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় শিক্ষা অফিস
জেলা অফিস থেকে হাইকোর্টের নিদের্শনা উধাও করে ঝিকরগাছায় প্রধান শিক্ষক নিয়োগ
আফজাল হোসেন চাঁদ, ঝিকরগাছা : যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার পানিসারা ইউনিয়নের সুরতজান মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে বিজ্ঞ আদালতে মামলা চলমান। দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের জানানোর পরও তাদের অজান্তেই উক্ত মামলার বিপরীতে নিম্ন আদালত থেকে গত ০৪/০১/২০২৩ইং তারিখে কমিটির কার্যক্রমে কেউ বাধা দিতে পারবে না এই মর্মে রায় প্রদান করেন। পরবর্তীতে ১৩/০৩/২০২৩ইং তারিখে মহামান্য হাইকোর্ট উক্ত রায় স্থগিত করে একটি নির্দেশনা প্রদান করেন। যার কারণে উক্ত কমিটির সকল কার্যক্রম স্থগিত হয়ে যায়। এমতাবস্থায় উল্লেখিত বিষয় উল্লেখ করে এলাকাবাসীর পক্ষে মীর বাবরজান বরুন নামের এক ব্যক্তি জেলা শিক্ষা অফিসারের নিকট ১১/০৪/২০২৩ইং তারিখে মহামান্য হাইকোর্টের নির্দেশনা সম্পর্কে অবগতকরণ এবং বর্তমান প্রক্রিয়াধীন নিয়োগ বন্ধকরণ প্রসঙ্গে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। যার সাথে নিম্ন আদালত এবং হাইকোর্টের নির্দেশনার কপি সংযুক্ত করে জেলা শিক্ষা অফিসের হিসাব রক্ষক কাম-ক্লার্ক সাজ্জাদ হোসেন। পরবর্তীতে সুরতজান মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নিয়োগের বিষয়ে ৪জন শিক্ষক প্রার্থীদের ফাইল ঝিকরগাছা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস প্রার্থীদের তথ্য ঠিকমত যাচাই-বাছাই না করেই জেলা শিক্ষা অফিসের প্রেরণ করেন। তবে জেলা শিক্ষা অফিসের ফাইলে সকল কাগজপত্র থাকলেও মীর বাবরজান বরুনের অভিযোগ ও অভিযোগের সাথে নিম্ন আদালত এবং হাইকোর্টের নির্দেশনার কপি উধাও করে হাইকোর্টের নিদের্শনাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ১৩ মে ২০২৩ইং তারিখে ঝিকরগাছা সুরতজান মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নিয়োগ প্রক্রিয়ায় সম্পূর্ণ করা হয়েছে এবং প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হন মোঃ আনারুল ইসলাম। তিনি ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালী ইউনিয়নের জাফরনগর গ্রামের মৃত নুর বক্স বিশ্বাসের ছেলে।
প্রধান শিক্ষক নিয়োগের বিষয়ে এমপিও নীতিমালা ২০২১ এর পরিশিষ্ট ঘ এর ৩০ নং পৃষ্ঠার ৮ নং ক্রমিকের শর্তানুযায়ী প্রধান শিক্ষক পদে আবেদন করতে হলে নিম্ম মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পদে ৩ বছরের অভিজ্ঞতা থাকা বাধ্যতামুলক হলেও ডিজির প্রতিনিধি, ঝিকরগাছা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা, জেলা শিক্ষা অফিসকে ম্যানেজ করে তিন বছরের বিপরীতে দুই বছরের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন আনারুল ইসলামকে অর্থনৈতিক সুবিধা নিয়ে সুরতজান হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ প্রদান করা হয়েছে বলে এলাকার সচেতন মহল দাবী করেছেন। ঘটনার বিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের নিকট তথ্য সংগ্রহের জন্য সংবাদকর্মীরা গেলে ঘটনার বিষয় শুনে তিনি অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষককের সাথে আলাপ করবেন জানান। প্রায় ৫মাস পূর্বে নতুন শিক্ষা কারিকুলামে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ৮শত ৫৫ জন শিক্ষকের ট্রেনিং এ বরাদ্দ অর্ধেক নাস্তা উধাও শিরোনামে একাধিক দৈনিক ও অনলাইন নিউজ পোর্টালে সংবাদ প্রকাশের পরে শিক্ষকদের সাথে তিনি (উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার) একটা সমঝোতা করে নেন।
ঘটনার বিষয়ে তথ্য অনুসন্ধানে সোমবার (০৫ জুন) জেলা শিক্ষা অফিসের সংবাদকর্মীরা হাজির হলে জেলা শিক্ষা অফিসার হিসাব রক্ষক কাম-ক্লার্ক সাজ্জাদ হোসেনকে সুরতজান মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নিয়োগের ফাইল আনতে বলেন। সাজ্জাদ ফাইল নিয়ে আসলে ফাইলে স্কুল কর্তৃপক্ষের নিয়োগ বৈধ করার জন্য নিম্ন আদালতের রায় পাওয়া যায়। কিন্তু এলাকাবাসীর পক্ষে মীর বাবরজান বরুনের ১১/০৪/২০২৩ইং তারিখের অভিযোগ ও সংযুক্ত নিম্ন আদালত এবং হাইকোর্টের নির্দেশনার কপি উধাও, কোথাও খুঁজে পায় না। ঠিক সেই সময় সাজ্জাদ অভিযোগের রিসিভ কপি দেখে বলে ফেলেন অভিযোগটা আমার রিসিভ করা। তখন সংবাদ কর্মীরা অভিযোগের কপি দেখতে চাইলে তখন তিনি বলেন হয়তো আছে কনে। এই বলেই সংবাদকর্মীদের নিকট থাকা অভিযোগের কপি, নিম্ন আদালতের রায় ও মহামান্য হাইকোর্টের নির্দেশনা গুলো তিনি (সাজ্জাদ) আবার ফটোকপি করে নেন।
অভিযোগকারী মীর বাবরজান বরুণ বলেন, জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে অবহিত করার পরেও ম্যানেজিং কমিটি তাদের অবৈধ ক্ষমতায় সভাপতি, স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার, জেলা শিক্ষা অফিসার ও ডিজির প্রতিনিধির পরস্পর যোগসাজশে মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে হাইকোর্টের রায়কে অবজ্ঞা করে একজন অযোগ্য ব্যক্তিকে প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ প্রদান করা হয়েছে। এটা খুবই দুঃখজনক ঘটনা। আমি এই অনিয়মের সাথে জড়িত সকলের শাস্তি দাবি করছি।
জেলা শিক্ষা অফিসের হিসাব রক্ষক কাম-ক্লার্ক সাজ্জাদ হোসেনের অভিযোগ ফাইলে না থাকার বিষয় জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন স্যারের সাথে কথা বলে জানাচ্ছি বলতেই ফোন কেটে দেন।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার কামরুজ্জামান মোঃ জাহাঙ্গীর হুসাইন মিঞা বলেন, তাকে আমি আজ সকালে ডেকে ছিলাম। তার আগে ও পরের নিয়োগের সকল কাগজপত্র নিয়ে আসতে বলেছি। সে আমাকে বলেছে আগামী পরশুদিন নিয়ে আসবে। আর হাইকোর্টের বিষয়টা নিয়ে আমরা কাল সন্ধ্যার পর জেলা শিক্ষা অফিসে গিয়েছিলাম। তো তাদের হাইকোর্টের রায়টা ঠিক আছে কোনো সমস্যা নেই। আপনারা যেটা দেখিয়েছেন ওই অর্ডারের পরে আবার অর্ডার হয়েছে জেলা শিক্ষা অফিসার নিজে দেখেছেন ওতে কোনো সমস্যা নেই। হাইকোর্টের বিষয়টা আমি জানতাম না। তবে জেলা শিক্ষা অফিসে মীর বাবরজান বরুন মহামান্য হাইকোর্টের নির্দেশনা দিয়ে যে অভিযোগ করেছিলো বা যে অভিযোগটা উধাও হয়ে গেছে সেটার অনুলিপিও এই উপজেলা মাধ্যমিক অফিসে জমা দেওয়া হয়েছিলো।
জেলা শিক্ষা অফিসার মোঃ মাহফুজুল হোসেন বলেন, আমি এখানে নতুন। কিভাবে কি হয়েছে সেটা আমি বুঝতে পারিনি। তবে আমরা যেমন নিয়োগ দিতে পারি তেমনি বাতিলও করতে পারি। আপনারা আমার নিকট একটা অভিযোগ দায়ের করেন। আমি অভিযোগের উপর ভিত্তি করে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণ করব। তার পরামর্শ অনুযায়ী মীর বাবরজান বরুন বাদী হয়ে মঙ্গলবার (০৬ জুন) প্রধান শিক্ষক নিয়োগে অনিয়ম তদন্তে ব্যবস্থা গ্রহণ এবং নিয়োগ বাতিলের বিষয়ে অভিযোগ দায়ের করেছেন। এ বিষয়ে জেলা শিক্ষা অফিসার বলেন বিষয়টি আমি নিজেই তদন্ত করব এবং তদন্তের উপর ব্যবস্থা গ্রহণ করব।