Type to search

শীতার্ত মানুষের সেবা

লাইফস্টাইল

শীতার্ত মানুষের সেবা

বিলাল হোসেন মাহিনী

শীতার্ত অসহায় ও আর্ত মানবতার সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করা মহৎ কাজ। বিশেষ সময়ে বিশেষ আমলের রয়েছে বিশেষ প্রতিদান। ঠিক তেমনি এই শীত মৌসুমে হত-দরিদ্র ও অসহায় মানুষের সেবা করা সামর্থবানদের জন্য আবশ্যক। শীতে কাঁপছে গোটা দেশ। কনকনে ঠা-ায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছে জনজীবন। ফুটপাথ ও গ্রামের অসহায় অনেকের জন্য দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে এই শীত। সবচেয়ে বেশি বিপদে পড়েছে উত্তরাঞ্চলের অভাবী ও গরিব মানুষ। শিশু ও বয়স্কদের দুর্ভোগও বর্ণনাতীত। শীতে অভাবী মানুষের জন্য জরুর হয়ে পড়েছে শীতবস্ত্রের। জীবনযাত্রা কষ্টকর হয়ে পড়ছে দিনমজুর, ভ্যানচালক, ইজিবাইক চালক, শ্রমিকসহ সাধারণ কর্মজীবি এবং ছিন্নমূল মানুষের। প্রত্যহ হিম ভোরে কাজে যোগ দিতে দুর্ভোগে পড়ছেন খেটে খাওয়া মানুষজন। কাজে যেতে না পারায় পরিবার-পরিজন নিয়ে সমস্যায় রয়েছেন তারা। প্রয়োজনীয় শীতবস্ত্রের অভাবে সবচেয়ে বেশি কষ্টে পড়েছে শিশু, নারী, প্রতিবন্ধী ও বয়স্করা। বাড়ছে ঠন্ডাজনিত রোগ-ব্যাধি। বাড়ছে সর্দি-কাশি, হাঁপানিসহ ফুসফুসজনিত বিভিন্ন রোগ।
সমাজের বিত্তবান ও মানবিক বোধসম্পন্ন মানুষদের দুর্দশাগ্রস্থ এসব মানুষের পাশে দাঁড়ানো দরকার। নইলে সাধারণের দুর্ভোগ আরও বাড়বে। এ ক্ষেত্রে সবাইকে নিজ নিজ দায়িত্ববোধ থেকে এগিয়ে আসতে হবে। ব্যক্তি পর্যায়ের উদ্যোগের মাধ্যমেও এমন পরিস্থিতি থেকে শীতার্তদের রক্ষা করা যায়। অন্তত পুরোনো পোশাক দিয়ে হলেও শীতার্তদের পাশে দাঁড়ানো কর্তব্য। রাসুল (সা.) এরশাদ করেন, ‘যে মুসলমান অন্য কোনো মুসলমানকে বস্ত্রহীন অবস্থায় বস্ত্র দান করবে, আল্লাহতায়ালা তাকে জান্নাতে সবুজ রঙের পোশাক পরাবেন। খাদ্য দান করলে তাকে জান্নাতের ফল খাওয়াবেন। পানি পান করালে জান্নাতের শরবত পান করাবেন।’ (সুনানে আবি দাউদ : ১৬৮২)।
হতদরিদ্র মানুষের জন্য শীতবস্ত্র বিতরণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মানবসেবা। এটা সওয়াবের কাজও বটে। বদর যুদ্ধের বন্দী হযরত আব্বাস (রা.)-কে রাসুল (সা.) পোশাকের ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন। রাসুল (সা.)-এর কাছে মুদার গোত্র থেকে গলায় চামড়ার আবা পরিহিত বস্ত্রহীন কিছু লোক আগমন করলো। তাদের করুণ অবস্থা দেখে রাসুল (সা.)-এর চেহারা বিষণœ হয়ে গেলো। তিনি নামাজ শেষে সাহাবায়ে কেরাম (রা.)-কে লক্ষ্য করে দান-সদকার জন্য উৎসাহমূলক বক্তব্য দিলেন। ফলে সাহাবায়ে কেরাম (রা.) এতো অধিক পরিমাণ দান করলেন যে, খাদ্য ও পোশাকের দুটি স্তুপ হয়ে গেলো। এ দৃশ্য দেখে রাসুল (সা.) অত্যন্ত আনন্দিত হলেন। তাঁর চেহারা উজ্জ্বল হয়ে উঠলো। অভাবীকে বস্ত্র দানের গুরুত্ব প্রসঙ্গে রাসুল (সা.) এরশাদ করলেন, ‘কোনো মুসলমান অপর মুসলমানকে কাপড় দান করলে যতোক্ষণ ওই কাপড়ের টুকরো তার কাছে থাকবে, ততোক্ষণ পর্যন্ত দানকারী আল্লাহর হেফাজতে থাকবে।’ (জামে-তিরমিজি : ২৪৮৪)।
চলতি শীতে করোনাভাইরাসের ব্যাপক সংক্রমণের আশঙ্কা করছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। তা ছাড়া এ সময়ে শীতজনিত প্রাদুর্ভাব (যেমন সর্দি-কাশি, হাঁপানিসহ) নানা রোগে আক্রান্ত থাকে বেশির ভাগ মানুষ। তাই রাষ্ট্রীয় উদ্যোগের পাশাপাশি অসহায় মানুষের চিকিৎসাসেবা প্রদানে বিত্তশালীদের এগিয়ে আসা উচিত। প্রভাবশালী হাসপাতাল মালিকরা অস্থায়ী মেডিক্যাল ক্যাম্পের মাধ্যমে ফ্রি চিকিৎসা সহায়তা দিতে পারেন। কারণ মানুষের অসুস্থতার আপদ দূর করলে আল্লাহ তায়ালা দুনিয়া-আখেরাতে তার বিপদাপদ দূর করে দেন। এই হাড়কাঁপানো শীতে যে বিপুল জনগোষ্ঠী বর্ণনাতীত দুঃখ-কষ্টে দিনাতিপাত করছে, তাদের পাশে দাঁড়ানো আমাদের দীনি দায়িত্ব। এ প্রসঙ্গে রাসুল (সা.) এরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো মুমিনের দুনিয়াবি সমস্যাগুলোর একটি সমাধান করে দেয়, আল্লাহ তায়ালা তার আখেরাতের সংকটগুলোর একটি মোচন করবেন। যে ব্যক্তি কোনো অভাবগ্রস্থের অভাব মোচনে সাহায্য করবে, আল্লাহ তায়ালাও তাকে দুনিয়া ও আখেরাতে স্বাচ্ছন্দ্য দান করবেন।’ (মুসলিম : ২৬৯৯)।
শীতের তীব্রতা খুব বেশি বেড়ে গেলে কিংবা টানা শৈত্যপ্রবাহ থাকলে আমরা শীতবস্ত্র বিতরণের প্রয়োজন অনুভব করি। অথচ দান করার ইচ্ছে থাকলে শীতের শুরুতেই অসহায়দের শীতের উপকরণ পৌঁছে দেওয়া উচিত। এতে শীতার্তদের কষ্ট লাঘব হয়। তা ছাড়া হাদিসে যথা সময়ে দ্রুত দান করার আদেশ দেওয়া হয়েছে। হযরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, এক সাহাবি রাসুল (সা.)-এর কাছে এসে বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল (সা.)! কোন দানে সওয়াব বেশি পাওয়া যায়?’ রাসুল (সা.) বললেন, ‘সুস্থ ও কৃপণ অবস্থায় তোমার দান করা, যখন তুমি দারিদ্র্যের আশঙ্কা করবে ও ধনী হওয়ার আশা রাখবে। দান করতে এ পর্যন্ত বিলম্ব করবে না, যখন প্রাণবায়ু কণ্ঠাগত হবে, আর তুমি বলতে থাকবে, অমুকের জন্য এতোটুকু অমুকের জন্য এতোটুকু। অথচ তা অমুকের জন্য হয়ে গেছে।’ (সহিহ বুখারি : ১৪১৯)। তাই এখনই সময়, শীতার্ত মানুষের প্রতি সাহায্য ও সহানুভূতির হাত সম্প্রসারিত করা। পর্যাপ্ত পরিমাণে শীতবস্ত্র সরবরাহ করে সাধ্যমতো শীতার্তদের পাশে এসে দাঁড়ানো। নিঃস্বার্থভাবে বিপদগ্রস্থ মানুষের সাহায্য ও সেবা করাই মানবধর্ম। এ মহৎ ও পুণ্যময় কাজই সর্বোত্তম ইবাদত।

অসহায় মানুষের দুর্দিনে সাহায্য, সহানুভূতি ও সহমর্মিতার মানসিকতা যাদের নেই, তাদের ইবাদত-বন্দেগি আল্লাহর দরবারে কবুল হয় না। সুতরাং নামাজ-রোজার সঙ্গে কল্যাণের তথা মানবিকতা ও নৈতিকতার গুণাবলি অর্জন করাও জরুরি। এ সম্পর্কে পবিত্র কুরআনে এরশাদ হচ্ছে, ‘পূর্ব ও পশ্চিম দিকে তোমাদের মুখ ফেরানোতে কোনো পুণ্য নেই। তবে পুণ্য আছে কেউ আল্লাহ, পরকাল, ফেরেশতাগণ, সব কিতাব এবং নবীদের প্রতি ইমান আনলে। আর আল্লাহপ্রেমে আত্মীয়স্বজন, এতিম-মিসকিন, মুসাফির, সাহায্যপ্রার্থীদের এবং দাসমুক্তির জন্য অর্থ দান করলে, নামাজ প্রতিষ্ঠা করলে ও জাকাত প্রদান করলে। সর্বোপরি প্রতিশ্রুতি দিয়ে তা পূর্ণ করলে, অর্থ-সংকটে, দুঃখ-ক্লেশে ও সংগ্রাম-সংকটে ধৈর্য ধারণ করলে। এরাই তারা, যারা সত্যপরায়ণ এবং তারাই মুত্তাকি।’ (সুরা বাকারা : ১৭৭)।
ব্যক্তি ও সামজিক সংগঠনের মাধ্যমে দরিদ্র, অভাবী ও বস্ত্রহীন শীতার্ত মানুষকে সাধ্যানুযায়ী সাহায্য-সহযোগিতা করতে হবে। এটাই মানব-মানবতা ও ইসলামের দাবি।