Type to search

যশোরের ভবদহ বিলে ভরা পানি, নদীতে কম

জেলার সংবাদ যশোর

যশোরের ভবদহ বিলে ভরা পানি, নদীতে কম

ভবদহের জলাবদ্ধতা নিরসনে জোয়ারাধার (টাইডাল রিভার ম্যানেজমেন্ট–টিআরএম) ফলপ্রসূ বলে প্রমাণিত হয়েছে। তবে গত কয়েক বছর এ অঞ্চলের কোনো বিলে টিআরএম চালু নেই। এ অবস্থায় এলাকার পানিনিষ্কাশনের একমাত্র মাধ্যম মুক্তেশ্বরী, টেকা, শ্রী ও হরি নদী পলি জমে উঁচু হয়ে পড়েছে। গত বছর বর্ষা মৌসুমে নদী দিয়ে পানি নিষ্কাশিত না হওয়ায় বৃষ্টির পানিতে এলাকার বিলগুলো প্লাবিত হয়। বিল উপচে পানি ঢোকে বিলসংলগ্ন গ্রামগুলোতে। পানিতে অভয়নগর ও মনিরামপুর উপজেলার শতাধিক গ্রাম পানিতে তলিয়ে যায়। এলাকার ভুক্তভোগী মানুষেরা আশঙ্কা করছেন, চলতি বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টিপাত বেশি হলে জেলার কয়েকটি ইউনিয়নে ভয়াবহ জলাবদ্ধতা দেখা দেবে।

এ সম্পর্কে পানি উন্নয়ন বোর্ডের যশোর কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী তাওহীদুল ইসলাম বলেন, ২০টি পাম্পসেট (সেচযন্ত্র) দিয়ে পানি সেচে বের করা হচ্ছে। প্রতিদিন ১০-১২টি সেচযন্ত্র চলছে। প্রতিটি সেচযন্ত্রের ক্ষমতা ৫ কিউসেক। ৫০ কোটি টাকার একটি ডিপিপি (উন্নয়ন প্রস্তাব পরিকল্পনা) তৈরি করা হয়েছে। এটি পাস হলে ৩৫ থেকে ৪০ কিউসেক ক্ষমতাসম্পন্ন ১০টি সেচযন্ত্র বসানো হবে। তাতে অনেক পানি সেচ সম্ভব হবে।

তাওহীদুল ইসলাম আরও বলেন, ‘টেকা নদীতে ৩ দশমিক ৭৬ কিলোমিটার পাইলট চ্যানেল কাটার কাজ চলছে। বড় সেচযন্ত্র বসানোর পর পানির যে স্রোত হবে, তাতে ভাটিতে হরি নদীর ১৮ কিলোমিটার অটো ড্রেজিং হয়ে যাবে। নদী খনন করা লাগবে না। আশা করছি, এবার ভবদহ এলাকায় কোনো জলাবদ্ধতা হবে না।’

যশোরের অভয়নগর, মনিরামপুর ও কেশবপুর এবং খুলনার ডুমুরিয়া ও ফুলতলা উপজেলার অংশবিশেষ নিয়ে এ ভবদহ অঞ্চল। সেখানে ছোট–বড় ৫২টি বিল আছে। এ অঞ্চলের পানি ওঠানামার পথ মুক্তেশ্বরী, টেকা, শ্রী ও হরি নদী। কিন্তু সব নদীই এখন কমবেশি ভরাট হয়ে বিলের চেয়ে উঁচু হয়ে গেছে। পলি পড়ে মুক্তেশ্বরী, টেকা, শ্রী ও হরি নদী নাব্যতা হারিয়েছে। ফলে নদী দিয়ে পানি নিষ্কাশিত হচ্ছে না।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের যশোর কার্যালয় সূত্র জানায়, ভবদহ এলাকায় যাতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি না হয়, সে জন্য গত বছর প্রায় ২৪ লাখ টাকা ব্যয়ে শ্রী নদীর ১ হাজার ৩০০ মিটার, প্রায় ৩৫ লাখ টাকা ব্যয়ে ভবদহ স্লুইসগেটের উজান ও ভাটিতে শ্রী নদীতে ২০০ মিটার করে ৪০০ মিটার এবং ১ কোটি ৪০ লাখ টাকা ব্যয়ে মুক্তেশ্বরী নদীর ২ দশমিক ১০ কিলোমিটার খনন করা হয়। কিন্তু খননের পর জোয়ারের সঙ্গে আসা পলিতে নদীর খনন করা অংশ পুনরায় ভরাট হয়ে যায়। এ বছর ২ কোটি ৮০ লাখ টাকা ব্যয়ে টেকা নদীতে ৩ দশমিক ৭৬ কিলোমিটার পাইলট চ্যানেল কাটা এবং ৪০ লাখ টাকা ব্যয়ে আমডাঙ্গা খাল সংস্কার করা হচ্ছে। এ ছাড়া প্রায় ৬০ লাখ টাকা ব্যয়ে সেচযন্ত্র বসিয়ে পানি সেচে বের করা হচ্ছে।

গত মঙ্গলবার সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, মুক্তেশ্বরী, টেকা, শ্রী ও হরি নদী শুকিয়ে সরু খালের মতো হয়ে গেছে। অনেক জায়গায় বৃষ্টির পানি জমে আছে। ভবদহ ২১ ভেন্ট জলকপাটের (স্লুইসগেট) পর্যন্ত নদীতে ক্ষীণ জোয়ার আসছে। ভবদহ স্লুইসগেটের (২১ ভেন্ট) ওপর ১৪টি বৈদ্যুতিক সেচযন্ত্র বসানো আছে। এর মধ্যে ১০-১২টি সেচযন্ত্র দিয়ে স্লুইসগেটের একপাশের নদী থেকে পানি সেচে পাইপের মাধ্যমে অপর পাশের নদীতে ফেলা হচ্ছে। ৯ ভেন্ট স্লুইসগেটের ওপর ৬টি বৈদ্যুতিক সেচযন্ত্র বসানো রয়েছে। কিন্তু সেগুলোতে বৈদ্যুতিক সংযোগ দেওয়া হয়নি। দুটি এক্সকাভেটর দিয়ে টেকা নদীর মধ্যে নালা কাটা হচ্ছে। নদীর মাটি কেটে প্রায় নদীর মধ্যেই স্তূপ করে রাখা হচ্ছে।

মনিরামপুর উপজেলার সুজাতপুর গ্রামের মানব মণ্ডল বলেন, ‘প্রতিবছর নদী কাটা হচ্ছে। নদী কেটে খাল বানানো হচ্ছে। কিন্তু তাতে কোনো লাভ হচ্ছে না। কয়েক দিনের মধ্যে তা ভরাট হয়ে যাচ্ছে। টিআরএম ছাড়া নদী বাঁচানো যাবে না। আমাদেরও বাঁচার কোনো পথ নেই।’ অভয়নগর উপজেলার কোটা গ্রামের কৃষক মীরন আহমেদ তরফদার বলেন, সেচযন্ত্র দিয়ে পানি সেচে কোনো দিনও ভবদহ সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়।

ভবদহ পানিনিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির উপদেষ্টা ইকবাল কবির জাহিদ বলেন, ভবদহে চলমান সেচ প্রকল্প সমস্যার সমাধানে চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে। আসন্ন বর্ষা মৌসুমে পানি বের হওয়ার আর কোনো সুযোগ নেই। ফলে ভবদহ অঞ্চলে ভয়ংকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে যাচ্ছে।সূত্র,প্রথমআলো