Type to search

চাপ কমাতে নাগরিকদের ঢাকার বাইরে স্থায়ী ঠিকানা খোঁজার পরামর্শ প্রধানমন্ত্রীর

জাতীয়

চাপ কমাতে নাগরিকদের ঢাকার বাইরে স্থায়ী ঠিকানা খোঁজার পরামর্শ প্রধানমন্ত্রীর

ন্যাশনাল ডেস্ক :
ঢাকার গণচাপ কমাতে নাগরিকদের রাজধানীর বাইরে বসবাস ও স্থায়ী ঠিকানা খোঁজার পরামর্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সে জন্য ঢাকায় কর্মক্ষেত্রে আসা-যাওয়ার জন্য যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়ন করা হচ্ছে বলেও জানিয়েছেন তিনি। রোববার ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে নতুনভাবে অন্তর্ভুক্ত ১৮টি ওয়ার্ডের সড়ক অবকাঠামো ও ড্রেনেজব্যবস্থা নির্মাণ ও উন্নয়ন (ফেজ-১) শীর্ষক প্রকল্পের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি সংযুক্ত হয়ে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, ‘ঢাকা শহরে একটা বাড়ি বা ফ্ল্যাট না থাকলে জীবন বৃথা—এই চিন্তা মাথা থেকে সরিয়ে দিতে হবে। আমরা রাস্তার উন্নয়নকে গুরুত্ব দিচ্ছি। খুব সহজেই ঢাকায় আসা-যাওয়া করতে পারবেন এমন যোগাযোগব্যবস্থা করে দিচ্ছি।’

ঢাকা পরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠেনি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যত্রতত্র যে যেভাবে পেরেছে, বসত গড়ে তুলেছে। ফলে ধীরে ধীরে মানুষের চাপে এটি বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। চাপ কমাতে তাই আমি ঢাকা সিটি করপোরেশনকে দুই ভাগে ভাগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। পাশাপাশি আশপাশের এলাকাগুলো দুই সিটি করপোরেশনের অন্তর্ভুক্ত করেছি, যাতে সেখানে বসবাসরত মানুষও নাগরিক সুবিধা পায়।’

নতুন এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে সেনাবাহিনীর ২৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেড। তাদের সক্ষমতার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যত কঠিন কাজ আছে, সেটা আমরা তাদের দিয়ে থাকি। তারা অত্যন্ত সুচারুরূপে বাস্তবায়ন করে থাকে। একই সঙ্গে সেখানকার নাগরিক ও নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদেরও তাদের সহযোগিতা করতে হবে। তাদের পাশে থেকে কাজ করতে হবে। কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করতে হবে। তাহলে কাজটা সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হবে।’

রাজধানীর গুলশান, বনানী, বারিধারার মতো উন্নত এলাকার বিষয়ে সরকারপ্রধান বলেন, ‘গুলশানে জায়গা পাওয়া মুশকিল। বড়লোকের জায়গা, সব পয়সাওয়ালা লোক। আমার কিছু অভিযোগ আছে, কেউ এক ইঞ্চি জায়গা ঠিকমতো ছাড়েনি। দুইটা বাড়ির ভেতরে এমন চাপা জায়গায় থাকে, সেখানে আবার ময়লাও ফেলা হয়। রান্নাঘরের ময়লা তারা জানালা দিয়ে ছুড়ে মারে।’

এ বিষয়ে ঢাকা উত্তর সিটির সাবেক মেয়র আনিসুল হককে নির্দেশনা দেওয়ার পর তিনি কিছু উদ্যোগ নিয়েছিলেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বর্তমান মেয়র মো. আতিকুল ইসলামকেও এ বিষয়ে নজর দিতে নির্দেশনা দেন। এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রী নগরের রাস্তা করার সময় ফুটপাত ঠিক রাখার বিষয়ে বিশেষ দৃষ্টি রাখতে প্রকৌশলীদেরও নির্দেশনা দেন তিনি।

উত্তর সিটিতে সর্বশেষ সংযুক্ত ১৮টি ওয়ার্ডের জন্য হাতে নেওয়া ‘অবকাঠামো ও ড্রেনেজ ব্যবস্থা নির্মাণ ও উন্নয়ন (ফেজ-১) ’ প্রকল্পের মাধ্যমে এসব এলাকার নাগরিকদের জীবনমান উন্নয়ন হবে এমন আশাবাদ ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ঢাকা শহর গড়ে উঠে গেছে। এরই মধ্যে যতটুকু সুন্দর করা যায়। এই ১৮টা ওয়ার্ডকেও যতটুকু সম্ভব।’

এ সময় প্রধানমন্ত্রী গুলশানে বিজিএমসির ১০ বিঘা জমিতে শুধু খেলার মাঠ করার ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, ‘স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধুর লক্ষ্য ছিল একেবারে তৃণমূলের মানুষের জীবনমানের উন্নয়ন করা। অর্থাৎ, ক্ষমতাটাকে বিকেন্দ্রীকরণ করে একেবারে তৃণমূল পর্যায় থেকে উন্নয়নটা নিয়ে আসা। কিন্তু দুর্ভাগ্য, পঁচাত্তরে জাতির পিতাকে হত্যার পরে সেটা আর করা হয়নি, যার ফলে মানুষ কর্মসংস্থানের জন্য রাজধানীমুখী হয়ে পড়ে। এতে চাপটাও বেশি আসে। তা ছাড়া একটা বিপ্লবের পরে বিবর্তনও হয়, কিছু মানুষের আর্থিক সচ্ছলতাও এসে যায় বা কিছু মানুষ একেবারেই হারিয়ে যায়। সে ক্ষেত্রে ঢাকা শহরের ওপর জনসংখ্যার একটা চাপ সৃষ্টি হয়েছে।’

রাজধানীর পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের আবাসনের জন্য সরকারের নেওয়া উদ্যোগের বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘ঢাকা শহরে যারা পরিচ্ছন্নতাকর্মী, এরই মধ্যে তাদের জন্য অনেকগুলো ফ্ল্যাট নির্মাণ শেষ হয়েছে।’ এ সময় প্রধানমন্ত্রী জানান, বিএনপি সরকার ক্ষমতায় থাকাকালে পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের আবাসনের টাকা লোপাট করেছিল।

প্রধানমন্ত্রী আরও জানান, বস্তিবাসীদের জীবনযাপন সুন্দর করতে ফ্ল্যাট নির্মাণ করা হচ্ছে। এসব ফ্ল্যাটে বস্তিবাসী ভাড়ায় থাকবে। তারা চাইলে প্রতিদিন, চাইলে সপ্তাহে কিংবা মাসে ভাড়া পরিশোধ করতে পারবে। বস্তিবাসীদের জীবনমান এবং তাদের সন্তানের ভবিষ্যৎ চিন্তা করেই এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ মাথা উঁচু করে চলবে, সম্মানের সঙ্গে চলবে, বিজয়ী জাতি হিসেবে মাথা উঁচু করে চলবে।’ স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দীন আহমেদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম। আরও বক্তব্য রাখেন স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম ও সেনাপ্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ।

@pb#bm#6/3/22