করোনাকালীন শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ভাবনা -বিলাল মাহিনী

বাংলাদেশে লক্ষণবিহীন করোনা রোগীর সংখ্যা অনেক বেশি এবং মাস্কের ব্যবহার, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখাসহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ক্ষেত্রে বেশিরভাগ মানুষ উদাসীন। শতভাগ মানুষ যদি শুধু মাস্ক ব্যবহার করতো, তাহলে ৯০ শতাংশ মানুষই সুস্থ থাকতো। জনসমাগম এড়িয়ে চলা এবং একে অপরের থেকে যদি কমপক্ষে ১ মিটার দূরত্ব বজায় রাখা যেতো, তবে আক্রান্তের সংখ্যা কমে যেতো।
বহির্বিভাগে রোগীর সংখ্যা কমিয়ে আনার জন্য অনলাইনে ফ্রি রেজিস্ট্রেশন ও টেলিমেডিসিনের মাধ্যমে চিকিৎসা প্রদান করা প্রয়োজন। একজন চিকিৎসকের একদিনে ১০ জনের বেশি রোগী দেখা উচিত নয়। এতে চিকিৎসকরা নিজেদের রক্ষা করতে সক্ষম হবেন এবং সাধারণ রোগীদের মধ্যে করোনা সংক্রমণ কমানো যাবে। গাড়িচালক ও ঘরের কাজের লোকদের স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। অফিস-আদালত ও গণপরিবহনে স্বাস্থ্যবিধি না মানলে জরিমানা করা দরকার।
শিক্ষাখাতেই এ সময় সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে। এখানে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ক্ষতির মাত্রা ও পরিমাণ অনেক। প্রত্যক্ষভাবে, গত বছরের মার্চের মাঝামাঝি থেকে শুরু হওয়া বিক্ষিপ্ত লক-ডাউনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার ক্ষতির পরিমাপ করা প্রায় অসম্ভব। পরোক্ষভাবে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় দুটি খাতে বেশি ক্ষতি হয়েছে। প্রথমত, শিক্ষা উপকরণের চাহিদা কমে যাওয়ায় এ খাতের ব্যবসায়ীরা মারাত্মকভাবে লোকসানের মুখে পড়েছেন। দ্বিতীয়ত, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় পরিবহন খাতে সেবা প্রহীতার সংখ্যা অনেক কমে গেছে। আর্থিক সংকটে বন্ধ হয়ে গেছে অসংখ্য কিন্ডারগার্টেনসহ বহু স্কুল মাদরাসা।
অনলাইনে পাঠদান নিয়ে সুনির্দিষ্টভাবে কয়েকটি বিষয় তুলে ধরতে চাই। এক. অনলাইনে পাঠদানের কার্যকারিতা হিসাব করলে দেখা যায় এ প্রক্রিয়ায় শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকগণ সমান গুরুত্ব বহন করেন। তাই অনলাইন শিক্ষায় অভিভাবকের সম্পৃক্ততা জরুরি। এতে শিক্ষার্থীদের অনলাইন অবব্যবহার কমবে। দুই. অনলাইনে সকল আয়ের শিক্ষার্থীদের সমান সুযোগ না থাকায় বৈষম্য হতে পারে। তাই ইলেক্ট্রনিক্স ডিভাইস ও ইন্টারনেটের সহজলভ্যতা প্রয়োজন। শিক্ষার্থীদের জেলা ও উপজেলা শিক্ষা অফিসের মাধ্যমে অনলাইন ক্লাস নিবন্ধন করিয়ে দেশের সকল শিক্ষার্থীকে বিনামূল্যে অথবা নামমাত্র মূল্যে ইন্টারনেট প্যাকেজ দেয়া যেতে পারে। তিন. অনলাইনে শিক্ষা দান ও গ্রহণে অভ্যস্থতা না থাকায় কোনোরূপ ফলপ্রসূ ট্রেনিং ছাড়াই এ কার্যক্রম পরিচালিত হলে তাতে কার্যত কোনো ফল নিয়ে আসবে না।
শিক্ষা, স্বাস্থ্য খাতসহ প্রায় সব খাতে বিশাল ছাপ রেখেছে করোনা মহামারি। এ সংকটে বিশ্বের উন্নত দেশগুলোই রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছে। সেখানে তৃতীয় বিশ্বের অনুন্নত কিংবা উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য চ্যালেঞ্জটা আরো বড়ো। বিগত এক দশকে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক উন্নয়নে অনেকাংশে এগিয়ে গেলেও করোনার কারণে অনেকটাই বাধাগ্রস্থ হয়েছে উন্নয়নের অগ্রযাত্রা। বিপুল জনসংখ্যার কারণে সরকারের সদিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও চ্যালেঞ্জ দিন দিন বাড়ছে। শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতের অবস্থা সবচেয়ে বেশি এলোমেলো। এখানে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ক্ষতির মাত্রা ও পরিমাণ অনেক। ইউনিসেফের তথ্য মতে, বাংলাদেশ ছাড়া আরো ১৩টি দেশে ২০২০ সালের মার্চ মাস থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। দেশের শিক্ষা সেক্টর জাতীয়করণ করা, শিক্ষায় ডিজিটালাইজেশন করাসহ শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে চলতি বাজেটে বরাদ্দ বাড়ানো দরকার।