Type to search

কথা বলার আদব/ সুন্নাত অথবা, কথায় ব্যক্তিত্বের পরিচয়

লাইফস্টাইল

কথা বলার আদব/ সুন্নাত অথবা, কথায় ব্যক্তিত্বের পরিচয়

বিলাল হোসেন মাহিনী

অন্য যে কোনো জীবের সাথে মানুষের মৌলিক পার্থক্য হলো বাকশক্তি বা কথা বলার সামর্থ্য। মানুষের ভালো-মন্দ যাচাই হয় কথা ও আচরণে। কথার মধ্যে ফুটে ওঠে তার ব্যক্তিত্ব ও স্বভাব। ভালো কথা মানুষকে যেমন জান্নাতে পৌঁছাতে সাহায্য করে, তেমনি মন্দ কথা বা গর্হিত আলাপ মানুষকে জাহান্নামের পথেও নিয়ে যেতে পারে। একজন মু’মিনের কথাবার্তা ও আচরণ কেমন হবে, কেমন হবে তার সম্বোধন- তার উত্তম দৃষ্টান্ত রয়েছে রাসুল (সাঃ)-এর কথাবার্তা ও আচার ব্যবহারে। মোদ্দাকথা, কথাবর্তায় সুন্নাহ’র অনুসরণ মানুষকে দুনিয়া ও আখিরাতে পরিত্রাণের পথ দেখায়।

কথায় সত্যবাদিতা : কথায় আছে, সত্য মানুষকে মুক্তি দেয়, আর মিথ্যা ধ্বংস করে। কথার ব্যাপারে সত্যতা হলো, কথার সাথে বাস্তবতার মিল থাকা। সত্যের একটি অলৌকিক প্রভাব রয়েছে, যা মানুষকে অতি সহজেই আকর্ষণ করে। কুরআনে সত্য কথার প্রতি গুরুত্ব দিয়ে বর্ণিত হয়েছে- ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং সত্যবাদীদের সাথে থাকো।’ (সূরা তাওবাহ-১১৯) এ ব্যাপারে নবি করিম (সাঃ) বলেন, ‘নিশ্চয়ই সত্য ভালো কাজের পথ দেখায় আর ভালো কাজ জান্নাতের পথ দেখায়। আর মানুষ সত্য কথা বলতে অভ্যস্ত হলে আল্লাহর কাছে সত্যবাদী হিসেবে (তার নাম) লিপিবদ্ধ হয়। নিশ্চয়ই অসত্য পাপের পথ দেখায় আর পাপ জাহান্নামের পথ দেখায়। কোনো ব্যক্তি মিথ্যায় রত থাকলে পরিশেষে আল্লাহর কাছে মিথ্যাবাদী হিসেবেই (তার নাম) লিপিবদ্ধ করা হয়।’ (সহিহ বুখারি-৬০৯৩)

কোমল ও মিষ্ট কথা বলা : আল্লাহর রাসুল (সাঃ) কথাবার্তায় ও আচার-আচরণে কোমলতা অবলম্বন করতেন। কর্কশ ও শক্ত ভাষায় কারো সাথে কথা বলতেন না এবং কাউকে সম্বোধনও করতেন না। পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে- ‘আপনি যদি কঠোর হৃদয়ের হতেন, তবে মানুষ আপনার থেকে দূরে চলে যেত।’ (সূরা আলে ইমরান-১৫৯)
কথায় স্পষ্টতা ও ধীরস্থিরতা : স্পষ্টতা কথার অন্যতম গুণ। শ্রোতার মনে স্পষ্ট কথার প্রভাব বেশি পড়ে। আয়েশা (রাঃ) বলেন, ‘রাসুল (সাঃ)-এর কথা এত সুস্পষ্ট ছিল যে, প্রত্যেক শ্রোতা তাঁর কথা বুঝতো।’ (আবু দাউদ-৪৮৩৯)
কথার শালীনতা : বিশ্বনবি (সাঃ)-এর কথাবার্তায় শালীনতা ছিল অতুলনীয়। তিনি কখনো অশালীন কথা বলেননি। হযরত আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, ‘রাসুল (সাঃ) অশালীন, অভিশাপকারী ও গালিদাতা ছিলেন না। তিনি কাউকে তিরস্কার করার সময় শুধু এটুকু বলতেন, কী হলো তার? তার কপাল ধূলিমলিন হোক।’ (বুখারি-৬০৬৪)
বিশুদ্ধভাষায় কথা বলা : আল্লাহর রাসুল (সাঃ) ছিলেন সবচেয়ে বিশুদ্ধ ভাষার অধিকারী। তাঁর উচ্চারণ, শব্দ প্রয়োগ ও বাচনভঙ্গি সবই ছিল বিশুদ্ধতার মাপকাঠিতে উত্তীর্ণ। হিন্দ ইবনে আবু হালা (রাঃ)-কে রাসুলুল্লাহ সা:-এর বাচনভঙ্গি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বেশির ভাগ সময় নীরব থাকতেন। বিনা প্রয়োজনে কথা বলতেন না। তিনি স্পষ্টভাবে কথা বলতেন। ‘তিনি ব্যাপক অর্থবোধক বাক্যালাপ করতেন। তাঁর কথা ছিল একটি থেকে অপরটি পৃথক। তাঁর কথাবার্তা অতি বিস্তারিত কিংবা অতি সংক্ষিপ্তও ছিল না। অর্থাৎ তাঁর কথার মর্মার্থ অনুধাবনে কোনো প্রকার অসুবিধা হতো না। তাঁর কথায় কঠোরতার ছাপ ছিল না, থাকত না তুচ্ছতাচ্ছিল্যের ভাব।’ (শামায়েলে তিরমিজি-১৬৭)

কথার আঘাত না দেয়া : মানুষ শরীরের আঘাত ভুলে গেলেও কথা আঘাত ভুলতে পারে না। তাই কথাবার্তায় শালীন হতে হবে। মনে রাখতে হবে আমাদের বাকযন্ত্র থেকে একবার একটি কথা বের হয়ে গেলে আর তা ভিতরে ফেরত দেয়া যায় না। সুতরাং কথা বলার আগে দশ বার ভাবতে হবে। কথা বলার ক্ষেত্রে সুন্নাহ’র অনুসরণ করতে পারলে দুনিয়া ও আখিরাতের বেশিরভাগ বিপদাপদ থেকে মুক্তি মিলবে। ইন শা আল্লাহ।