ঈদ স্মৃতি – অঘটনের ঘনঘটা

বিশ্বব্যাপী করোনা অতিমারির মহাবিপর্যয় এখনো পুরোপুরি কাটেনি। গত দু’বছর স্বাস্থ্যঝুকি ও নানা বিধি-নিষেধের কারণে আকিজ আইডিয়াল স্কুল এন্ড কলেজের প্রাক্তন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের বার্ষিক মিলনমেলা হয়নি। এবার তাই একটু আগেভাগে প্রস্তুতি শুরু হলো। কুরবানী ঈদের কয়েকদিন আগে অনলাইন ও অফলাইনে দুটি মিটিং হলো। সিদ্ধান্ত হলো- ঈদের তৃতীয় দিন মঙ্গলবার বিকেলে নৌকা ভ্রমণ ও বার্ষিক মিলনমেলা হবে।
১০ তারিখে ঈদ হলো। ২০২২, ১২ জুলাই মঙ্গলবার। ভোরে ঘুম থেকে উঠে পৌনে ন’টায় চান্দু তার স্ত্রী মিলি ও অসুস্থ ফুফুকে নিয়ে নওয়াপাড়ার উদ্দেশ্যে বের হলো। চান্দু’র ফুফু বিগত দু-তিন সপ্তাহ অসুস্থ। কোমরে ব্যাথা। এক্স-রে করাতে হবে। চান্দু মটর বাইক বের করে দেখল- গাড়ির পেছন চাকায় হাওয়া কম। সিংগাড়ী বাজারে কোনো গ্যারেজ খোলা না পেয়ে বাজারের সন্নিকটে রানাপ্লাজার গ্যারেজ থেকে হওয়া দিলো। এরপর ভাটপাড়া খেয়াঘাট পার হয়ে শেষসীমানা পৌঁছার সাথে সাথে বাইকের পেছনের চাকা হঠাৎ ফুলে উঠলো। মহাবিপদ! ভাগ্যিস টায়ার ফেটে যায়নি। তাতে অসুস্থ ফুফুসহ বাইকের তিনজনই দুর্ঘটনার শিকার হতো।
জোহরের সালাত ও গপ্সে গপ্সে ভাত খেয়ে বেরিয়ে পড়লো আকিজ আইডিয়াল স্কুল এন্ড কলেজের প্রাক্তনদের নৌকা ভ্রমণে। ঈদের দুদিনের ধকল শামলে চান্দু ভেবেছিলো মঙ্গলবার সারাদিন আনন্দে কাটাবে। কিন্তু মড়ার উপর খাড়ার ঘা! একদিকে হাসপাতাল অন্যদিকে গাড়ি পানচার। সারাদিন শত ঝক্কিঝামেলা শেষে বিকেল থেকে রাত ৮টা অব্দি নৌকা ভ্রমণ ও বার্ষিক মিলনমেলায় যুক্ত হলো চান্দ্।
কিন্তু আজকের এই আনন্দময় দিনটা একদিকে চান্দুর ফুফুর অসুস্থতা, হাসপাতাল নেয়া; অন্যদিকে মোটরবাইক পানচার এবং নতুন টায়ার কেনা… একগাদা খরচা! আব্বার কাছ থেকে ধার করে ছোটভাই ইউসুফকে দিয়ে বিকাশ করিয়ে এ যাত্রায় বাইকটা চড়ার উপযোগী হলো। এই ধার-দেনা আর নানা বিড়ম্বনার মধ্যেও আকিজ আইডিয়ালের প্রাক্তনদের মিলনমেলা ও নৌকা ভ্রমণের কথা ভুলবার নয়।
অভয়নগর উপজেলার নওয়াপাড়া সরকারী কলেজ অডিটোরিয়ামে উক্ত ঈদ পুনর্মিলনী সংগঠনের আহ্বায়ক অধ্যাপক শওকত হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়। গ্রিন অভয়নগর’র সদস্য সচিব এ্যাড. হুমাউন কবির তানিমের সঞ্চালনে অনুষ্ঠানে গ্রিন অভয়নগরের সংগঠক ড. মো. তবিবুর রহমান, নওয়াপাড়া প্রেসক্লাবের সভাপতি নজরুল ইসলাম মল্লিক, অধ্যক্ষ এসএম খায়রুল বাসার, অধ্যক্ষ শফিকুল ইসলাম, মো. হাবিবুর রহমান, ইউএসএ প্রবাসী সুমন, প্রভাষক সেলিম রেজা, গাজী আবুল হোসেন, সাংবাদিক জিয়াউর রহমান, কবি বিলাল মাহিনী প্রমুখ।
উক্ত পুনর্মিলনীতে আরও উপস্থিত ছিলেন সাংবাদিক ও শিক্ষক ইকবাল হোসেন, তরিকুল ইসলাম, শিক্ষক মো. কাবিল হোসেন, সাংবাদিক জাকির হোসেন হৃদয়, মো. আশিকুজ্জামান, মাসুম রেজা প্রমুখ। ঈদ পুনর্মিলনী শেষে গ্রিন অভয়নগরের বৃক্ষ রোপণ কর্মসূচিসহ ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা নিয়ে বিশেষ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
বাড়ি ফিরতে রাত সাড়ে নয় বাজলো চান্দুর। খেয়েদেয়ে বিছানায় মাথা রাখতেই ভোর! কীভাবে যে কেটে গেলো রাত, কে জানে?