Type to search

আজ রক্তাক্ত ভবদহ দিবস

অপরাধ

আজ রক্তাক্ত ভবদহ দিবস

 

​যশোর জেলার মণিরামপুর, কেশবপুর ও অভয়নগর উপজেলার মুক্তেশ্বরী-টেকা-হরি আপারভদ্রা -হরিহর -বুড়িভদ্রা নদী দিয়ে বেষ্টিত ভবদহ ।বৃষ্টির পানি ও উজানের বাহিত পানি উল্লেখিত নদী সিস্টেম ও এর সাথে সংযুক্ত খালের মাধ্যমে ভাটিতে অত্র এলাকার ২৭ টি বিলের নিষ্কাশিত হয়।

সমুদ্রের নোনা পানি প্রতিরোধে এবং কৃষিযোগ্য মিঠাপানি ধরে রাখার জন্য ষাটের দশকে হরি-টেকা নদীর অভয়নগর উপজেলার ভবদহ নামক স্থানে ২১ ভেন্ট স্লুইস নির্মাণ করা হয়।
কিন্তু সত্তরের দশকের পর হত এই অঞ্চলে নদীগুলোর মূল উৎস্য প্রবাহ পদ্মা হতে বিছিন্ন হওয়ায় সাগর বাহিত পলি উজানের দিকের নদী ও খালের তলদেশে পড়ে নদীগুলোর নাব্যতা হারাতে শুরু করে।
ফলে যশোর জেলার সদরের আংশিক, অভয়নগর, মনিরামপুর ও কেশবপুর সম্পূর্ণ এলাকাতে স্থায়ীভাবে জলাবদ্ধতা দেখা দেয় এবং নব্বইয়ের দশকে স্থায়ী জলাবদ্ধতা প্রকট আকার ধারণ করে।
আর এই স্থায়ী জলাবদ্ধতা নিরসনের লক্ষ্যে ‘ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটি’ আশির দশক থেকে শুরু ২০২৩ সালের আজও আন্দোলন সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে । জলাবদ্ধতার স্থায়ী সমাধানের দাবিতে তারা প্রতিনিয়ত সভা-সমাবেশ, বিক্ষোভ, সড়ক ও রেলপথ অবরোধ, স্মারকলিপি পেশ, মানববন্ধন,সেমিনারসহ নানা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করছে।
কিন্তু ২০১৬ সালের ৫ অক্টোবর যশোর জেলার অভয়নগর উপজেলার নওয়াপাড়া শিল্প নগরীতে
ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির পূর্ব ঘোষিত রাজপথ ও রেলপথ অবরোধ কর্মসূচিতে ভবদহ এলাকার সাধারণ জনগণের উপর পুলিশ নির্বিচারে লাঠিচার্জ করে।এতে কমপক্ষে ২৫ জন আহত হয়।
আহতদের মধ্যে ছিলেন ওয়ার্কার্স পার্টির পলিটব্যুরোর সদস্য বর্তমানে বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ইকবাল কবির জাহিদ, ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির আহ্বায়ক রণজিত বাওয়ালী, ভারপ্রাপ্ত সদস্য সচিব চৈতন্য কুমার পাল,বৈকুণ্ঠ বিহারী রায়, দেবুজিৎ বিশ্বাস, হরেকৃষ্ণ, শিবপদ বিশ্বাস, রাজুসহ অন্তত ২৫ জন আহত হন।
আহতদের মধ্যে কয়েকজন চিরতরে পঙ্গু হয়ে জীবন যাপন করছেন।
দুঃখ ও পরিতাপের বিষয় পুলিশ প্রশাসন ও যেসব লোক পর্দার অন্তরালে থেকে সাধারণ জনগণকে নির্যাতন করলো তাদের কোন বিচার হয়নি এবং আজও ভবদহ জলাবদ্ধতার স্থায়ী কোন সমাধান হয়নি।

এ জনপথের মানুষেরা ত্রাণ চান না, চান পরিত্রাণ চায়।এ জলাবদ্ধতা থেকে চিরো মুক্তি এবং সে মুক্তি মিলবে নিম্ন লিখিত প্রকল্প গুলোর যথাযথ বাস্তবায়ন হলেঃ

১. অবিলম্বে বিল কপালিয়ায় পরিকল্পিত জোয়ারাধার /টিআরএম চালু করতে হবে।
২. সমস্ত বিল কপালিয়াকে টিআরএমের আওতাধীন
করতে হবে।
৩. দ্রুত ফসলের ক্ষতিপূরণ আরএস রেকর্ডের পর্চার
ভিত্তিতে প্রদান এবং কাগজপত্র ইউনিয়ন পরিষদ
অফিস থেকে নেওয়ার ব্যাবস্থা করতে হবে।
৪. নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে
হবে, প্রকল্প অন্তে কাট পয়েন্টে বাধ দিতে হবে ও
বিলে বিদ্যমান খাল দুটি সংস্কার করতে হবে।
৫. উত্তর ও দক্ষিণ পাশে গ্রাম-রক্ষা বাঁধ দিতে হবে,
বিলকে সমতল করে নিতে হবে।
৬. গ্রামের বৃষ্টির পানি সংযোগ খালের মাধ্যমে
টিআরএমের মধ্য ঢুকতে পারার ব্যবস্থা রাখতে হবে।
৭. রাজবংশী পাড়ার পাশে কাট পয়েন্টের জন্য সম্ভব্য
ক্ষতিতে-পড়া মন্দিরের জন্য ব্যবস্থা গ্রহন ও
টিআরএম বাস্তবায়ন অন্তে মন্দিরটি রাজবংশী
পাড়াতে পুন:স্থাপনের ঘোষণা দিতে হবে।
৮. বিলের ভাগচাষী ও দিনমুজুরদের এফ, ভিজিডি
কার্ড প্রদান ও মাছ মারার জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ সরবারাহ করতে হবে।
৯. পূর্ববর্তী সিদ্ধান্ত মোতাবেক ভবদহ সুইচ গেইটের
২১ ও ৯ ভেন্টের মাঝ দিয়ে সরাসরি নদী সংযোগ
দিতে হবে।
১০. অবিলম্বে আমডাঙ্গা খাল সংস্কার করতে হবে।
১১. পর্যায়ক্রমে জোয়ারাধার/টিআরএম করার জন্য
বিল নির্ধারণ করে এখনই প্রস্তুতি নিতে হবে।
১২. উজানে মুত্তেশ্বরী-ভৈরব-মাথাভাঙ্গা নদীর সাথে
সংয়োগ দিতে হবে।
১৩. দুর্নীতি-অনিয়ম বন্ধ ও কাজের স্বচ্ছতা নিশ্চিত
করার জন্য আন্দোলনকারী সংস্থা, ট্রশিসন, পানি
উন্নয়ন বোর্ড ও নির্বচিত প্রতিনিধি নিয়ে শক্তিশালী
তদারকি কমিটি করতে হবে।
★ আসুন উপরোক্ত দাবির ভিত্তিতে আমরা ঐক্যবদ্ধ হই এবং গ্রামে গ্রামে সংগ্রাম কমিটি গড়ে তুলি।