ঠিকাদার কাজ শুরু করে দিয়েছেন,ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথাও জানায়নি কর্তৃপক্ষ

যশোরের অভয়নগর
জেলেদের জমিতে সেতু হচ্ছে ক্ষতিপূরণের উদ্যোগ ছাড়াই
যশোরের অভয়নগর উপজেলায় ইছামতী খালের ওপর নির্মাণ করা হচ্ছে নতুন সেতু। খালের ওপর নির্মিত ৩০ মিটার দৈর্ঘ্যের পুরোনো সেতুটি ভাঙা হচ্ছে। দৈর্ঘ্য প্রায় দ্বিগুণ বাড়িয়ে সেখানে নির্মাণ করা হবে নতুন সেতু। নতুন এই সেতুর দৈর্ঘ্য হবে ৬০ দশমিক শূন্য ৫ মিটার। সেই সঙ্গে সেতুটির সংযোগ সড়কের বর্তমান প্রস্থ ১২ ফুট থেকে বাড়িয়ে ১৮ ফুট করা হচ্ছে।
নতুন সেতুর এক পাশের বর্ধিতাংশ পড়েছে স্থানীয় জেলেপাড়ার বাসিন্দাদের জমিতে। নতুন সেতু নির্মাণ ও সড়ক সম্প্রসারণের ফলে ভিটাবাড়ি থেকে উচ্ছেদের শঙ্কায় দিন কাটাচ্ছেন জেলেরা। এদিকে এ জমির জন্য কোনো ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথাও জানায়নি কর্তৃপক্ষ। অথচ ঠিকাদার ইতিমধ্যে কাজ শুরু করে দিয়েছেন।
অভয়নগর এলজিইডি সূত্র জানায়, অভয়নগর উপজেলার ইছামতী এলাকায় ইছামতী খালের ওপর এই সেতু ভাঙ্গাগেট বাদামতলা-আমতলা ভায়া মরিচা নাউলী বাজার সড়কে পড়েছে। বর্তমানে ওই খালে ৩০ মিটার দৈর্ঘ্য ও ৩ দশমিক ৬৬ মিটার প্রস্থের একটি সেতু রয়েছে। সরকার ও বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) গ্রামীণ সেতু সহায়তা কর্মসূচির আওতায় পুরোনো সেতুটির জায়গায় ৬০ দশমিক শূন্য ৫ মিটার দৈর্ঘ্য ও ৫ দশমিক ১৮ মিটার প্রস্থের একটি আরসিসি গার্ডার সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে।
সেতুটির ব্যয় ধরা হয়েছে ৫ কোটি ৩৩ লাখ ৭০ হাজার ৬৮২ টাকা। মাদারীপুরের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স আনোয়ারা ট্রেডার্স সেতুটির দরপত্র পেয়েছে। গত বছরের ২৬ ডিসেম্বর সেতুটির নির্মাণকাজ শুরু হয়েছে এবং ২০২৩ সালের ১৮ জুন তা শেষ হওয়ার কথা।
সরেজমিনে গত শনিবার ইছামতী এলাকায় দেখা যায়, পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে বিস্তৃত ইছামতী খালের ওপর পুরোনো সেতুটি আড়াআড়িভাবে উত্তর-দক্ষিণ বরাবর। সেতুটি ভাঙা হচ্ছে। সেতুর উত্তর পাশে ছোট একটি বাজার। দক্ষিণ পাশে জেলেপল্লি। জেলেপল্লির মধ্য দিয়ে চলে গেছে ভাঙ্গাগেট বাদামতলা-আমতলা ভায়া মরিচা নাউলী বাজার সড়ক। সেতুর দক্ষিণ প্রান্তের সংযোগ সড়কের বাঁ পাশে কয়েকটি দোকান। সেতুর নিচে খালের মধ্যে মাটি ফেলে এক্সকাভেটর দিয়ে সেই মাটি সমান করা হচ্ছে।
এ সময় কথা হয় জেলেপল্লির কয়েকজনের সঙ্গে। তাঁরা জানান, প্রায় দুই মাস আগে উপজেলা থেকে প্রকৌশলীরা এসে সেতুর দক্ষিণ প্রান্তের বর্ধিতাংশ তাঁদের জমিতে দেখিয়ে দিয়ে গেছেন। প্রকৌশলীরা তাঁদের সঙ্গে এ ব্যাপারে কোনো কথা বলেননি। এরপর ঠিকাদার কাজ শুরু করেছেন।
ওই অংশে সেতুর জন্য তাঁদের প্রায় ১৫ শতক জমি চলে গেছে। ওই জায়গায় একজনের রান্নাঘর ও ছয়টি দোকান রয়েছে। রান্নাঘর ও দোকান ভেঙে নিতে বলা হয়েছে। কিন্তু তাঁদের কোনো ক্ষতিপূরণ দেওয়া হচ্ছে না। তাঁরা জানান, সেতুর সংযোগ সড়কটিও তাঁদের জায়গার ওপর দিয়ে গেছে। বর্তমানে সড়কটির প্রস্থ ১২ ফুট থেকে বাড়িয়ে ১৮ ফুট করা হচ্ছে। এরও কোনো ক্ষতিপূরণ দেওয়া হচ্ছে না।
সেতুর পাশেই জেলেপল্লির বাসিন্দা মন্টু পদ বিশ্বাসের বাড়ি। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার আট শতক জমির ওপর ভিটেবাড়ি। তার মধ্যে প্রায় তিন শতক জমির ওপর নতুন ব্রিজ চলে এসেছে। ইঞ্জিনিয়াররা দেখিয়ে দিয়ে যাওয়ার পর কন্ট্রাক্টর কাজ শুরু করেছেন। আমার সঙ্গে কেউ কোনো কথাও বলেননি। ওই জায়গার প্রতি শতকের দাম প্রায় সাড়ে তিন লাখ টাকা। কিন্তু আমাকে কোনো টাকা দেওয়া হয়নি। আমি জমির ক্ষতিপূরণ চাই।’
পল্লির আরেক বাসিন্দা বিপ্লব কুমার গাইন বলেন, ‘আমার ২০ শতক জমি ছিল। এর মধ্যে রাস্তায় কিছু জমি চলে গেছে। বাকি জমি থেকে ব্রিজের কারণে আমার প্রায় আট শতক জমি চলে যাচ্ছে। ওখানে আমার ছয়টি দোকান আছে। দোকানগুলো ভাঙার জন্য বলা হচ্ছে। কোনো ক্ষতিপূরণ আমি পাচ্ছি না।’
ধন্য বিশ্বাস নামের আরেকজন বলেন, ‘নতুন ব্রিজের কারণে আমার চার শতক জমি চলে যাচ্ছে। ওই জায়গায় আমার রান্নাঘর রয়েছে। রান্নাঘর আর রাখা যাচ্ছে না। এ ক্ষতি কীভাবে মানি?’
জানতে চাইলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স আনোয়ারা ট্রেডার্সের প্রকল্প ব্যবস্থাপক লিটন মিয়া বলেন, ‘উপজেলা ইঞ্জিনিয়ার অফিস থেকে এসে সেতুর লে-আউট দিয়ে গেছে। আমরা সেই লে-আউট অনুসারে কাজ শুরু করেছি। জমি আমাদের দেখার বিষয় নয়।’
জানতে চাইলে উপজেলা প্রকৌশলী সানাউল হক বলেন, ‘নতুন সেতুর জন্য কয়েকজন জমির মালিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। কিছুদিন আগে প্রকল্পের কর্মকর্তারা যশোরে এসেছিলেন। আমরা তাঁদের কাছে জমির ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের বিষয়টি তুলেছিলাম। তাঁরা অধিগ্রহণের জন্য জমির একটি সার্ভে করে প্রস্তাব পাঠাতে বলেছেন। কয়েক দিনের মধ্যে সার্ভে করে প্রস্তাব পাঠানো হবে।’
সুত্র প্রথম আলো