থামছেই না ভৈরব পাড়ের মাটি ছিনতাই

থামছেই না ভৈরব পাড়ের মাটি ছিনতাইবহিস্কৃত স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতার ক্ষমতার উৎস নিয়ে প্রশ্ন নেতৃবৃন্দের
চৌগাছা প্রতিনিধি
যশোরের চৌগাছায় ভৈরব নদের তীরের মাটি স্কেভেটর দিয়ে কেটে অবৈধভাবে ইটভাটায় বিক্রি করে দেয়া থামছেই না। প্রশাসনের পক্ষ থেকে বারবার নিষেধ করার পরও বৃহস্পতিবার দিবাগত গভীর রাতেও মাটি কেটে ট্রাক-ট্রলি ভরে নিয়ে গেছে চক্রটির সদস্যরা। এদিকে চক্রটির মূল হোতা পাতিবিলা গ্রামের বাসিন্দা ও পাতিবিলা ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবকলীগের বহিস্কৃত সভাপতি সিদ্দিকুর রহমানের ক্ষমতার উৎস কোথায় এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন স্থানীয় নেতৃবৃন্দ।
কৃষকদের অনুমতি ছাড়াই ভৈরব পাড়ের মাটি কেটে ফসলী জমির উপর দিয়ে ট্রাক্টরের ট্রলি ও ড্রামট্রাকে করে নিয়ে ইটভাটায় বিক্রি করে দিচ্ছে চক্রটি। এতে একদিকে কৃষক ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে অন্যদিকে ভৈরব খননকরে জলাধার সৃষ্টির সরকারি উদ্যোগ বিনষ্ট হচ্ছে। নিয়ামতপুর, ইছাপুর, মুক্তদহ, রোস্তমপুর ও সাদিপুর গ্রামের কৃষকরা জানিয়েছেন মাটি কেটে নেয়ার সময় তাঁরা বলে আমরা প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই মাটি কাটছি। তা না হলে বারবার তোমরা বাঁধা দিয়েও কি আমাদের থামাতে পেরেছো?
বৃহস্পতিবার রাত দশটার দিকে পাতিবিলা ইউনিয়নের সাদিপুর গ্রামের মাটিকাটতে থাকেন চক্রটির সদস্যরা। রাতেই স্থানীয়রা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) ইরুফা সুলতানার কাছে মুঠোফোনে অভিযোগ করেন। অভিযোগের ভিত্তিতে বহিস্কৃত স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতা সিদ্দিকুর রহমানকে মুঠোফোনে মাটি কাটা বন্ধের নির্দেশ দেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। তখন তাঁরা সাদিপুরে মাটি কাটা বন্ধ করেন। তবে গভীর রাতে আবারও নিয়ামতপুর পালপাড়া থেকে মাটি কেটে নিয়ে গেছে বলে মুঠোফোনে জানিয়েছেন গ্রামের নবনির্বাচিত ইউপি সদস্য মনিরুল ইসলাম।
এর আগে বুধবার বেলা ১১টার দিকে রোস্তমপুর গ্রামের মাঠ থেকে মাটি কেটে নেয়ার সময় স্থানীয়দের অভিযোগের প্রেক্ষিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইরুফা সুলতানা মুঠোফোনে মাটিকাটা গ্রæপটির নেতা পাতিবিলা ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবকলীগের বহিস্কৃত সভাপতি সিদ্দিকুর রহমানকে নদের মাটি কাটা থেকে নিবৃত করেন। সেসময় তিনি ভবিষ্যতে যেন আর মাটি কেটে না নেয়া হয় সে বিষয়েও সতর্ক করেছিলেন। তবে সে আদেশের পর একদিন বন্ধ রেখে আবারও স্থান পরির্তন করে মাটি কাটা শুরু করে মাটিখেকো দূর্বৃত্তরা।
স্থানীয়রা জানান, প্রথমে পাতিবিলা ইউনিয়নের নিয়ামতপুর গ্রাম থেকে মাটি কেটে বিক্রি করে চক্রটি। সেখানে সহকারী কমিশনার (ভূমি) কাফী বিন কবিরের নেতৃত্বে কয়েকবার ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা হয়েছে। তবুও থামেনি তাদের এই অপকর্ম। নিয়ামতপুরের শহরের ইছাপুর মাঠের মুক্তদাহ মোড় থেকে মাটি কাটা শুরু করে। এরপর কাটে রোস্তমপুর গ্রাম থেকে। বৃহস্পতিবার কাটতে শুরু করে সাদিপুর গ্রাম থেকে। একই দিন গভীর রাতে আবারও কেটে নেয় নিয়ামতপুর গ্রাম থেকে।
চৌগাছা থানা সূত্রে জানা যায় গত ৪ ডিসেম্বর স্থানীয়দের অভিযোগের প্রেক্ষিতে চৌগাছা থানা পুলিশ মুক্তদহ মোড় থেকে কয়েকটি মাটি বোঝাই ড্রাম ট্রাক থানা হেফাজতে নেয়। থানায় তাঁরা মুচলেকা দেন আর মাটি কাটবেন না। স্থানীয়রা বলছেন, বারবার প্রশাসন বাঁধা দিেেচ্ছ আর তাঁরা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠছেন।
এ বিষয়ে নিয়ামতপুর গ্রামের নবনির্বাচিত ইউপি সদস্য মনিরুল ইসলাম বলেন, নদের পাড় থেকে রাতে মাটি নিয়ে যাচ্ছে। এতে একদিকে নদে জলাধার সৃষ্টি ব্যহত হচ্ছে। বর্ষায় নদের পানি উপচে কৃষকের ক্ষতি হ”ে। অন্যদিকে গভীর রাতে গ্রামের মাঝখান দিয়ে দ্রæতগতিতে এসব গাড়িগুলো যাওয়ায় গাড়ির শব্দে মানুষের নানা অসুবিধা হচ্ছে। তিনি বলেন এরআগে একবার ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করে এক চালকের তিনমাস জেল দেয়া হয়। তিনি আরও বলেন অভিযান চালালে দেখা যায় গরীব চালকরাই জেল-জরিমানার শিকার হয়। মূল হোতারা ধরা ছোয়ার বাইরেই থাকেন। একারনে এই অপকর্ম তাঁরা থামায় না।
চৌগাছা উপজেলা আওয়ামী লীগের নির্বাহী সদস্য ও চৌগাছা পৌরসভার চার নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সিদ্দিকুর রহমান বলেন, এই সিদ্দিকের লোকেরা বিভিন্ন জায়গায় আমার নাম-পরিচয় পর্যন্ত ব্যবহার করে। চক্রটির বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়ার জন্য প্রশাসনের কাছে আহবান জানিয়ে সিদ্দিকুর রহমান বলেন পাতিবিলা গ্রামের এই সিদ্দিক স্থানীয় কিছু লোককে সাথে করে এসব অপকর্ম করে বেড়াচ্ছেন। তিনি বলেন প্রশাসন বারবার বাঁধা দেয়ার পরও সে কিভাবে মাটি ছিনতাই করার সাহস দেখায়। তাঁর এত ক্ষমতার উৎস কোথায়?
উপজেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের আহবায়ক জিয়াউর রহমান রিন্টু বলেন, গত ১১ নভেম্বর অনুষ্ঠিত পাতিবিলা ইউপি নির্বাচনে নৌকার প্রার্থীর বিরুদ্ধে উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক আতাউর রহমান লালের পক্ষে নির্বাচন করায় সিদ্দিককে দলের সব পদ-পদবী থেকে বহিস্কার করা হয়। নির্বাচনে বিএনপি নেতা চেয়ারম্যান হওয়ার পর থেকে সিদ্দিক আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইরুফা সুলতানা বলেন, স্থানীয়দের মৌখিক অভিযোগের ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার রাতে পুলিশ পাঠানোর পর তাঁরা মাটি কাটা থেকে নিবৃত হয়। আগেও তাঁদের এভাবে মাটি নেয়া বন্ধের নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। তাঁরা আর এভাবে মাটি কাটবেন না বলে কথা দিয়েছিলেন। তবুও অভিযোগ আসছে। তাঁদের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করা হবে। প্রয়োজনে নিয়মিত মামলা করা হবে।