বিলাল মাহিনী
দৈনিক সমকাল পত্রিকার ৮:২৪ ঘটিকার অনলাইনের শিরোনাম ‘৬ দশমিক ১ মাত্রার ভূমিকম্পে কাঁপল দেশ’। উক্ত নিউজে বলা হয়েছে, ‘শুক্রবার (২৬ নভেম্বর) ভোরে মাঝারি মাত্রার ভূমিকম্পে কেঁপে উঠেছে বাংলাদেশ। এদিকে মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থার ইউএসজিএস- এর তথ্যমতে, ভূমিকম্পটির উৎপত্তিস্থল মিয়ানমারের হাখা শহর থেকে ২০ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে। রিখটার স্কেলে যার মাত্রা ছিল ৬ দশমিক ১। ভূপৃষ্ঠ থেকে ৩২ দশমিক ৮ কিলোমিটার গভীরে ছিল এর অবস্থান।
বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, শুক্রবার ভোর ৫টা ৪৫ মিনিটের দিকে সারাদেশে এই ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। ঢাকা থেকে ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থলের দূরত্ব ৩৩৮ কিলোমিটার।’ পৃথিবীর উপরিভাগের ৭০-১০০ কিলোমিটার পুরুত্বের লিথোস্ফিয়ার ছোট-বড় ১৩টি খ-ে (প্লেটে) বিভক্ত। উত্তপ্ত ও নরম এস্থোনোস্ফিয়ারের উপর ভাসমান এ প্লেটগুলো গতিশীল। প্লেটগুলো গতিশীল থাকায় ভূখ- ধীরে ধীরে সরতে থাকে, যেটাকে ‘অ্যাকটিভ ফল্ট’ বা সক্রিয় চ্যুতি বলা হয়। প্লেটের স্থানচ্যুতির সময় জমে থাকা শক্তি বিপুল বেরিয়ে আসে, তখন সংযোগস্থলে ভূকম্পন হয়।
সমাজের মানুষ যখন পাপাচারের নিকৃষ্ট শিখরে আরোহণ করে তখন আল্লাহ তাআলা নানান দুর্যোগ প্রদর্শন করেন। এমনি এক প্রদর্শিত দুর্যোগের নাম ভূমিকম্প বা ভূকম্পন। নিম্নে ভুকম্পন তত্ত্ব, ইসলামের দৃষ্টিকোন তথা কুরআন হাদিসের নির্দেশনা ও বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোন এবং ভূমিকম্পের সময় করণীয় সম্পর্কে নিবন্ধটিতে আলোকপাত করা হচ্ছে।
ভূমিকম্প সম্পর্কে বিজ্ঞানের দৃষ্টিকোন: ভূতত্ত্ব বিজ্ঞানের আলোকে ভূপৃষ্ঠের নীচে একটি নির্দিষ্ট গভীরতায় রয়েছে কঠিন ভূত্বক। ভূত্বকের নীচে প্রায় ১০০ কি.মি. একটি শীতল কঠিন পদার্থের স্তর রয়েছে। একে লিথোস্ফেয়ার বা কঠিন শিলাত্বক নামে অভিহিত করা হয়। আমাদের পৃথিবী নামের এই গ্রহের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে যে, কঠিন শিলাত্বক (লিথোস্ফেয়ার)সহ এর ভূ-পৃষ্ঠ বেশ কিছু সংখ্যক শক্ত শিলাত্বকের প্লেট এর মধ্যে খন্ড খন্ড অবস্থায় অবস্থান করছে। ভূ-তত্ত্ব বিজ্ঞানের আলোকে এই প্লেটের চ্যুতি নড়াচড়ার দরুণ ভূমিকম্পের সৃষ্টি হয়। সাধারণত ভূপৃষ্ঠ থেকে ১৬ কিলোমিটারের মধ্যে ভূমিকম্পের কেন্দ্র অবস্থান করে। তবে ৭শত কিমি. গভীরে থেকেও ভূকম্পন উত্থিত হতে পারে। ভূমিকম্প সাধারণত কয়েক সেকেন্ড থেকে এক-দুই মিনিট স্থায়ী হয়। মাঝে মাঝে কম্পন এত দুর্বল হয়, যা অনুভব করা যায় না। কিন্তু শক্তিশালী ও বিধ্বংসী ভূমিকম্পে ব্যাপক প্রাণহানি এবং সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি হয়। বিশিষ্ট বিজ্ঞান, আবিষ্কার ও হাদিস গবেষক আল্লামা ইবনে আল-কাইয়ূম (রহ.) বলেন:- “মহান আল্লাহ মাঝে মাঝে পৃথিবীকে জীবন্ত হয়ে উঠার অনুমতি দেন, যার ফলে তখন বড় ধরনের ভূমিকম্প অনুষ্ঠিত হয়; এটা মানুষগুলোকে ভীত করে, তারা মহান আল্লাহর নিকট তাওবা করে, পাপ কর্ম ছেড়ে দেয়, আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে এবং তাদের কৃত পাপ কর্মের জন্য অনুতপ্ত হয়”।
ভূমিকম্প শব্দটা শুনলেই ভয়ে কেঁপে ওঠে বুক। দুনিয়ার সামান্য কয় সেকেন্ডের ভূমিকম্পে যদি এমনি ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা হয়, তবে কিয়ামাতের কঠিক ভয়াবহতায় কি অবস্থা হবে। আল্লাহ তাআলা সুরা যিলযালের মাধ্যমে আজ থেকে প্রায় দেড় হাজার বছর পূর্বে এ ভূমিকম্পের ধরণ তুলে ধরেছেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন- যখন পৃথিবী তার কম্পনে প্রকম্পিত হবে। যখন সে তার বোঝা বের করে দেবে। (সুরা যিলযাল : আয়াত ১-২) ভূমিকম্পের মাত্রা এমন ভয়াবহ হবে যে পৃথিবী ধ্বংসস্তুপে পরিণত হবে। যার ফলে পৃথিবীর গর্ভে সকল মৃত মানুষ এবং ধন-সম্পদসহ যাবতীয় জিনিস বেরিয়ে পড়বে। তাই মহান রাব্বুল আলামিন বান্দাকে সতর্ক করার জন্য কিয়ামাতের সামান্য আলামাত প্রকাশ করে পরকালের প্রস্তুতি প্রহণের সংকেত প্রদান করেন। রাসুল সা. বলেছেন, ‘যখন অবৈধ উপায়ে সম্পদ অর্জনে মানুষ প্রতিযোগিতা করবে, গচ্ছিত সম্পদের আমানতে খেয়ানত করবে, জাকাত দেয়াকে জরিমানা মনে করবে, ধর্মীয় শিক্ষা বাদ দিয়ে (সাধারণ) বিদ্যা অর্জন করবে, পুরুষ তার স্ত্রীর আনুগত্য করবে, মায়ের সঙ্গে খারাপ আচরণ করবে, পিতাকে বাদ দিয়ে বন্ধুকে আপন করে নিবে, মসজিদে শোরগোল করবে, জাতির দূর্বল ব্যক্তি সমাজের নেতৃত্ব দিবে। নিকৃষ্ট ব্যক্তি জননেতায় পরিণত হবে, খারাপ কাজে সুনাম অর্জন করবে এবং এ খারাপ কাজের ভয়ে ঐ ব্যক্তিকে সম্মান করা হবে, বাদ্যযন্ত্র ও নারী শিল্পীর অবাধ বিচরণ হবে, মদ পান করা হবে এবং বংশের শেষ প্রজন্মের লোকজন পূর্ববর্তীদেরকে অভিশাপ দিবে। সে সময়ে তীব্র বাতাস প্রবাহিত হবে, যার ফলশ্রুতিতে একটি ভূমিকম্প ভূমিকে তলিয়ে দিবে। (জামে আত-তিরমিজি)এ হাদিস ভূমিকম্পের কারণগুলো উঠে এসেছে, যা বর্তমান পৃথিবীতে অহরহ হচ্ছে। আর এ কার্যকারণগুলো কিয়ামাতের আলামতও বটে। যাতে মানুষ মহান আল্লাহর নিকট তাওবা করে পাপ কর্ম ছেড়ে দিয়ে খারাপ কৃতকর্মের জন্য অনুতপ্ত হয়ে আল্লাহর দিকে ধাবিত হয়।
ভূমিকম্প কিয়ামাতের সামান্য নির্দশন মাত্র। তাই কিয়ামাত সংঘটিত হওয়ার পূর্বে আল্লাহ তাআলা মানুষকে স্বীয় অপরাধ বুঝার তাওফিক দান করুন। তাওবা করে আল্লাহর পথে ফিরে আসার তাওফিক দান করুন। সুতরাং দুনিয়ার বর্তমান ভূমিকম্প নিয়ে বৈজ্ঞানিক বা অন্যান্য গবেষণায় বা তর্কে লিপ্ত না হয়ে কুরআনের বাণীর প্রতি লক্ষ্য করে প্রত্যেকে তাওবা করে তাঁর কাছে ক্ষমা চাওয়া দরকার। মহান আল্লাহর ঘোষণা হলো : ‘জনপদের অধিবাসীরা কি এতই নির্ভয় হয়ে গেছে যে আমার আজাব (নিঝুম) রাতে তাদের কাছে আসবে না, যখন তারা (গভীর) ঘুমে (বিভোর হয়ে) থাকবে!’ (সুরা : আরাফ, আয়াত : ৯৭)