উপবৃত্তির টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে প্রতারক চক্র

শেখ নাজমুল হাসান মিঠু : উপবৃত্তির টাকা দিয়ে খাতা, কলম কিনতো শিশু শিক্ষার্থী সাব্বির হোসেন। টিউশনের টাকাও শোধ করতো উপবৃত্তি থেকেই। তবে এবার আর সেই টাকা তার ভাগ্যে জোটেনি, চলে গেছে প্রতারকদের পকেটে। শিক্ষক, শিক্ষা কর্মকর্তা ও ‘নগদ’-এর লোক সেজে ফোন দিয়ে সাব্বিরের বোনের কাছ থেকে ওটিপি (ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড) নিয়ে সেই টাকা তুলে নিয়েছে এক প্রতারক চক্র।
সাব্বির হোসেন সাতক্ষীরা সদরের শাল্যে গ্রামের আব্দুল হাকিমের ছেলে। সাব্বির ছাড়াও শাল্যে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৪০ জনেরও বেশি শিক্ষার্থীসহ সাতক্ষীরার শত শত প্রাইমারি ও হাইস্কুলের শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির টাকা হাতিয়ে নিয়েছে ওই প্রতারক চক্র।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে শিক্ষার্থী সাব্বির জানায়, ‘উপবৃত্তির টাকা নিয়ে আমরা খাতা কিনি, কলম কিনি, প্রাইভেটের টাকা দেই। প্রতারকরা আমাদের সেই টাকা নিয়ে নেছে। এতে আমরা খুব কষ্ট পেয়েছি।’
শাল্যে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী সিয়াম হোসেনের মা মনোয়ারা খাতুন, সাব্বির হোসেনের বোন সানজিলা খাতুন বলেন, কয়েকদিন আগে সকালে মোবাইলে কল দিয়ে আমাদের কাছে পিন নম্বর চায় প্রতারক চক্র। প্রথমে আমরা পিন নম্বর দিতে রাজি না হলে তারা বলে পিন নম্বর না দিলে মোবাইলে টাকা আসবে না। এখন যদি আপনার মোবাইলের মেসেজে দেয়া পিনটি আমাদের বলেন তবে দুপুরের ভেতর উপবৃত্তির টাকা মোবাইলে চলে যাবে। তখন আমরা সরল বিশ্বাসে পিন নম্বরটা দিয়ে দেই। এরপর আমরা এলাকাবাসীর কাছে ও স্কুলের স্যারের কাছে গেলে তারা মোবাইল চেক করে বলে উপবৃত্তির টাকা মোবাইলে এসেছিল। তবে এখন নেই। আপনাদের টাকা ওঠানো হয়ে গেছে।
কলেজ ছাত্রী ফারহানা আক্তার জ্যোতি বলেন, ‘আগে মোবাইলে টাকা দিলে এমন ঘটনা ঘটেনি। তবে নগদ অ্যাকাউন্ট খোলার পর এবার প্রতারক চক্র আমার এলাকার অনেক অভিভাবকদের কাছ থেকে ওটিপি নিয়ে নিজেদের মতো পিন সেট করে শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘অভিভাবকদের ওই মোবাইল নম্বরে উপবৃত্তির টাকা দিয়েছে এটা স্কুল কর্তৃপক্ষ, সিম কোম্পানি ও নগদ (মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস) কোম্পানির লোকজন ছাড়া অন্য কারো জানার কথা না। প্রতারক চক্র ওই নম্বর পেল কীভাবে?’
শাল্যে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা আমেনা খাতুন বলেন, আমাদের স্কুলের ১৫২ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ১৩৫ জনই উপবৃত্তির আওতায়। তাদের মধ্যে ৪০ জনেরও বেশি শিক্ষার্থী প্রতারকদের প্রতারণার শিকার হয়েছে।
‘অনেক শিক্ষার্থীর অভিভাবক আমাদের বিষয়টি জানিয়েছেন। আমরা তাদেরকে ডেকেছিলাম এবং তাদের ফোন চেক করেছিলাম। কিন্তু দুঃখের বিষয় তাদের ফোন থেকে আগেই টাকা তুলে নিয়েছে প্রতারক চক্র। এ ছাড়া যেসব অভিভাবকের কাছে এখনও কল দেয়নি তাদেরকে পিন না দিতে অনুরোধ করেছি’, বলেন আমেনা খাতুন।
সাতক্ষীরা সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুল গনি বলেন, সাতক্ষীরা সদরের ২১৩টি বিদ্যালয়ের ৩৩ হাজার ৭৮৪ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। তার মধ্যে ৩২ হাজার ৫৩ জন শিক্ষার্থী উপবৃত্তির আওতায় আছে।
তিনি বলেন, প্রতি তিন মাস পরপর মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে প্রাক-প্রাথমিকের প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে ২২৫ টাকা ও প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণির প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে ৪৫০ টাকা করে দেয়া হয়।
প্রতারণার ব্যাপারে তিনি বলেন, একটি চক্র পিন নম্বর নিয়ে টাকাটা তুলে নিচ্ছে- এমন অভিযোগ খুব অল্প সংখ্যক স্কুল থেকে এসেছে। এ ব্যাপারে অধিদফতর থেকে চিঠি এসেছে। আমরা এরই মধ্যে বিষয়টি প্রত্যেক স্কুলের প্রধান শিক্ষককে জানিয়েছি। তারা অভিভাবক সমাবেশ করে মা ও অভিভাবকদের সচেতন করেছেন। কোনোভাবেই যাতে কাউকে পিন নম্বর দেয়া না হয় সে ব্যাপারে অভিভাবকদের পরামর্শ দেয়া হয়েছে।