Type to search

নারী জমিদার বিশ্বেশ্বরী দেবীর আমলে ঈশ্বরগঞ্জের উন্নয়ন

ময়মনসিংহ

নারী জমিদার বিশ্বেশ্বরী দেবীর আমলে ঈশ্বরগঞ্জের উন্নয়ন

 

নারী জমিদার বিশ্বেশ্বরী দেবীর আমলে ঈশ্বরগঞ্জের উন্নয়নঃ


মোমেনসিং ও জাফরশাহী পরগানার জায়গীরদার, গৌরীপুরের বারেন্দ্র ব্রাহ্মণ জমিদারদের প্রতিষ্ঠাতা শ্রীকৃষ্ণ চৌধুরী বংশের ষষ্ঠ পুরুষ ও গৌরীপুর রাজবাড়ির চতুর্থ জমিদার রাজেন্দ্র কিশোর রায় চৌধুরী ১৮৭৩ খ্রিঃ (বাংলা ১২৮০ সালে) ২৪ বছর বয়সে নিঃসন্তান অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। রাজেন্দ্র কিশোরের মৃত্যুর পর তার স্ত্রী বিশ্বেশ্বরী দেবী সমস্ত সম্পত্তির অধিকারী হলেন। পরবর্তীতে বিশ্বেশ্বরী দেবীর পতির জলপিন্ড সংস্থানের জন্য অর্থাৎ উত্তরাধিকার হিসেবে পুরুষ দ্ধারা জমিদারী পরিচালনার জন্য ১৮৭৭ খ্রিস্টাব্দে (বাংলা ১২৮৪ সালে) রাজশাহীর বালিহার গ্রাম নিবাসী হরিপ্রসাদ ভট্টাচার্যের পুত্র ব্রজেন্দ্র কিশোরকে দত্তক পুত্র হিসেবে গ্রহণ করেন। ব্রজেন্দ্র কিশোরের পূর্ব নাম ছিল রজনী প্রাসাদ ভট্টাচার্য। তিনি অতি অল্প বয়সে দত্তক গৃহীত হয়েছিল। ১২৮১ বঙ্গাব্দের ২৯ বৈশাখে (ইংরেজি ১২ মে, ১৮৭৪ সালে) রাজশাহী বিভাগের নওগাঁ জেলার  বালিহার গ্রামে ব্রজেন্দ্র কিশোর রায় চৌধুরীর জন্ম। বিশ্বেশ্বরী দেবী দত্তক পুত্র নেওয়ার জন্য অনেক জমিদার বাড়িতে খোঁজাখুঁজি করেন। তার স্বামী রাজেন্দ্র কিশোরের মৃত্যুর এক বছরের মধ্যে রজনী প্রাসাদ ভট্টাচার্যের নামে দত্তক পুত্রের জন্ম হয়। উল্লেখ যে, বিশ্বেশ্বরী দেবীর শশুর আনন্দ কিশোরের আগের নামেই ঈশ্বরগঞ্জ নামক বাজারটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। গৌরীপুরের নারী জমিদার বিশ্বেশ্বরী দেবীর সহযোগিতায় তৎকালীন ব্রিটিশ সরকার ঈশ্বরগঞ্জ থানার কাছে একটি চৌকি (মুনসেফী) আদালত স্থাপন করে। তখন ব্রজেন্দ্র কিশোরের বয়স ছিল মাত্র ছয় বছর। সাব-রেজেষ্টরী কার্যালয় স্থাপিত হয় তার আমলে। বিশ্বেশ্বরী দেবী এমন একজন ত্যাগী ও ধৈর্যশীল নারী ছিলেন তার নাম কালীপুরের ছোটতরফের জমিদার ধরনীকান্ত লাহিড়ীর ‘ভারত ভ্রমণ’ বইয়ের ভূমিকার পাতার উল্লেখ রয়েছে।প্রাচীন মানচিত্রে ঈশ্বরগঞ্জের তথ্য:


  অষ্টাদশ ও উনবিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগ পর্যন্ত ঈশ্বরগঞ্জ নামের কোনো বাণিজ্যিক শহর বা বন্দরের অস্তিত্ব প্রাচীন বাংলার মানচিত্রে পাওয়া যায় না। রেনেলের অংকিত মানচিত্রে ঈশ্বরগঞ্জ নামকরণের পূর্বে বোকাইনগর ছিল মোমেনসিং পরগণার রাজধানী ও প্রশাসনিক কেন্দ্র। তাছাড়া বর্তমান ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার অন্তর্ভুক্ত প্রাচীন ব্রহ্মপুত্র নদের পাড়ে মধুপুর ও মাদারগঞ্জ ছিল নদীবন্দর ও গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসা-বাণিজ্য কেন্দ্র। এই মাদারগঞ্জে সদর জেলার একটি থানা গোড়াপত্তন হয়। পরবর্তী সময়ে মাদারগঞ্জের থানাটি বিলুপ্ত হয়ে যায়। রেনেলের অংকিত মানচিত্রের সূত্রে ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলায় ২টি পরগনার নাম পাওয়া যায়- মোমেনসিং পরগণা ও হোসেনশাহী পরগণা।  প্রাচীনকালে বহু নদ-নদী দ্বারা পরগণাগুলো বিভক্ত ছিল। ২৮৬ বর্গ কিলোমিটার এলাকা নিয়ে ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা গঠিত। ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার অধিকাংশ স্থান অর্থাৎ ঈশ্বরগঞ্জের মধ্যে অবস্থিত মোমেনসিং পরগণার সমস্ত ভূমির মালিক গৌরীপুর উপজেলার জমিদারদের মধ্যে ছিল এবং হোসেনশাহী পরগণার ভূমি আঠরবাড়ি ও রাজীবপুরের জমিদারদের অধীনে ছিল। উনবিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে অর্থাৎ ১৮৮৩ সালের প্রকাশিত লেট এন্ড সন মানচিত্রে দেখা যায় ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা সদরদপ্তরের এক কিলো পূর্বে অবস্থিত মাইজহাটি গ্রামটির নাম উল্লেখ রয়েছে। ধারণা করা হয় যে, মাইজহাটি ছিল একসময়ে নদীবন্দর। তাছাড়া ১৮৯৪ সালের প্রকাশিত জনস্টন মানচিত্রে দেখা যায় থানা হিসাবে ঈশ্বরগঞ্জের উচাখিলার কাছে মাদারগঞ্জ, গফরগাঁও, নাসিরাবাদ, ফুলপুর ইত্যাদি স্থানের নাম পাওয়া যায়।