সাতক্ষীরা-খুলনা সড়ক সংস্কারে দুর্নীতির অভিযোগ

সাতক্ষীরা-খুলনা মহাসড়কের পাটকেলঘাটা ওভারব্রিজ এলাকা থেকে শাকদাহ পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটার সড়কের নির্মাণ সংস্কার কাজ নিয়ে শুরু হয়েছে তুঘলকি কারবার। একবার সড়কে পিচ দেওয়া হয়, ১৫ দিন পর সেই পিচ তুলে আবার দেওয়া হয় নতুন পিচ। এভাবে চলছে দেড় বছর। এতে করে এই সড়কে প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা, বাড়ছে প্রাণহানির সংখ্যা। তবে সড়ক ও জনপদ বিভাগ এটিকে দুর্নীতি বলতে রাজি নন। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বিষয়টিকে বলছে ‘টেকনিক্যাল প্রবলেম’।
সরেজমিনে দেখা যায়, সাতক্ষীরার পাটকেলঘাটা থানার সামনে ওভারব্রিজ থেকে শাকদাহ পর্যন্ত বর্তমানে সড়কের বিভিন্ন স্থানের দেওয়া পিচ নতুন করে তুলে ফেলা হচ্ছে। সড়কের পিচ তুলে ফেলার ছবি ও ভিডিও ধারণ করতে গেলে বাঁধা দেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান খুলনার মোজাহার এন্টারপ্রাইজের কর্মীরা। এমনকি তাদের নাম পরিচয়ও গোপন করেন।
স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল মতিন জানান, সড়ক সংস্কারের সময় যেটুকু গর্ত করে বালি-খোয়া দিয়ে ম্যাকাডম করার কথা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সেটি দেয়নি। কোনো রকমে দিয়ে পিচ ঢেলে সংস্কার কাজ শেষ দেখিয়ে দেয়। কোটি কোটি টাকার দুর্নীতি করেছেন বলে অভিযোগ। সড়কে পিচ দেওয়ার কিছুদিন পরই দেখা যায় গর্ত হয়ে গেছে। তখন সেই পিচ তুলে আবার নতুন করে পিচ দেওয়া হচ্ছে। এভাবেই চলছে গত দেড় থেকে দুই বছর।
ওভারব্রিজের ওপর ভাড়াচালিত মোটরসাইকেল চালকদের স্ট্যান্ড। চালক সোহাগ হোসেন বলেন, ‘আমি এই পর্যন্ত চার বার দেখলাম। পিচ দেয় ১০-১৫ দিনের মধ্যে আবার সড়কে গর্ত হয়ে যায়। তখন কয়েক মাস পরে সেই পিচ তুলে আবার নতুন করে পিচ দেয়। এখন আবার সড়কে দেওয়া পিচ তুলে নতুনভাবে দিচ্ছে। গত দেড় বছরেও সড়কটির সংস্কার কাজ শেষ হয়নি।’
সাতক্ষীরা সড়ক ও জনপথ বিভাগ সাতক্ষীরা অফিস থেকে জানা যায়, সাতক্ষীরা-খুলনা মহাসড়কের ২০ দশমিক ৫ কিলোমিটার সড়কের সংস্কার কাজ চলমান রয়েছে। ৮৯ কোটি টাকার কাজটি করছে খুলনার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মোজহার এন্টারপ্রাইজ। ২০১৮ সালের ৩ মার্চ সংস্কার কাজ শুরু হয়েছে। প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হবে ২০২১ সালের ৩১ মার্চ।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মোজহার এন্টারপ্রাইজের এক্সিকিউটিভ ডাইরেক্টর মি. খোকন দাবি করেন, ‘সড়কে কোনো দুর্নীতি হয়নি। তবে শাকদাহ ও পাটকেলঘাটা এলাকায় একটু টেকনিক্যাল সমস্যা হয়েছে। তাই নতুন করে পিচ তুলে আবার দেওয়া হচ্ছে। গত তিন বছরে কয়েকবার দিয়েছি। অনেক সময় দেখা যায়, কিছু ত্রুটিপূর্ণ মাল চলে যায়। তখন এই সমস্যা দেখা দেয়। তবে সেগুলো আমরা পুনরায় মেরামত করছি।’
সড়কটির সংস্কারের কাজ তদারক করছেন সাতক্ষীরা সড়ক ও জনপদ বিভাগের (সেকশান-১) সাব অ্যাসিট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার মো. তরিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘পিচ দেওয়া হচ্ছে আবার তোলা হচ্ছে এ ব্যাপারে আমি আপনাকে কিছু বলতে পারবো না। এক জায়গায় বসে কথা বললে বোঝাতে পারতাম। আপনি নির্বাহী প্রকৌশলীর সঙ্গে কথা বলেন।’
সাতক্ষীরা সড়ক ও জনপদ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মীর নিজামউদ্দীন আহম্মেদ বলেন, ‘ঠিকাদার একবার ওই জায়গাটুকু মেরামত করেছে। সেটি আমাদের কাছে যথাযথ মনে হয়নি। বার বার দিচ্ছে আর তুলছে বিষয়টি তেমন না। আমাদের পছন্দ হয়নি তাই আবার ঠিকাদারকে দিয়ে তুলে নতুন করে আবার দিতে বলেছি।’ সূত্র, সুবর্ণভূমি