শৈশবে বঙ্গবন্ধুর সংস্পর্শে থাকা মুক্তিযোদ্ধা সুলতানের জীবন চলে ভিক্ষা করে

স্টাফ রিপোর্টার: দিনমজুর মো: সুলতান আহমেদ শেখ। বয়স ৭০ ছুঁই ছুঁই। বয়সের ভারে চোখের জ্যোতি হারিয়েছেন। ভাল করে হাটা চলাও করতে পারেন না। গায়ে শক্তি সামার্থ থাকা কালিন কখনো ভ্যান চালিয়ে, কখনোবা দিনমজুরের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেছেন।
তার পৈত্রিক নিবাস ছিলো খুলনার দৌলতপুরের পাবলা গ্রামে। বর্তমানে তিনি যশোরের অভয়নগর উপজেলার ধোপাদী গ্রামে বসবাস করেন। শৈশবে অনেক বার বঙ্গবন্ধুর সংস্পর্শে আসার সুযোগ হয়েছে তার। সুলতান আহমেদ জানান,বঙ্গবন্ধু ছাত্র সমাজকে সংগঠিত করতে দৌলতপুর বি এল কলেজে আসতেন। সে সময়ে রবিবার সাপ্তাহিক ছুটি ছিলো। বঙ্গবন্ধু প্রতি রোবিবার কলেজ ক্যাম্পাসে আসতেন। ছাত্রদের সাথে রাজনৈতিক আলোচনা হতো। এ সময়ে সুলতান আহমেদ পাশে বসে বসে তাঁর দীক্ষা নিতেন। ছাত্রদের সহযোগি হয়ে তিনি তখন ছাত্রলীগে যোগদেন। বঙ্গবন্ধু শিক্ষা দিতেন বিপদে পড়লে আ,লীগের লোকজন ডাকার সংকেত।সংকেত ছিলো মিটিং করার জন্য আ,লীগের লোক ডাকতে শেয়ালের মতো হুকা হুয়া ডাক দিতে হবে। খানসেনা দেখলে কুকুরের ডাক। আর বিপদ কেটে গেলে মোরগের ডাক দিতে হবে। মিটিং চলা কালিন বাদাম কেনা ও ভাগ করার দায়িত্ব পড়তো সুলতানের উপর।
এ ভাবে সংগঠিত হয়ে স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হওয়ার ছয় বছর আগে তিনি আনছার বাহিনীতে যোগ দেন। তিনি আনছার বাহিনতে অস্ত্র চালনার সফল ট্রেনিং নিয়ে ছয় মাস পরে ফিরে আসেন। এলাকায় আ,লীগের সভা সমাবেশ হলে সুলতান লোকজন নিয়ে সমাবেশে যোগ দিতেন। স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হলে তিনি যোগ দেন মুক্তিবাহিনীতে। তিনি ভারতের টালিখোলা ক্যাম্প ও বাংলাদেশে যুদ্ধের ট্রেনিং নিয়ে আট নং সেক্টরে মুক্তি বাহিনীতে যোগদান করেন। তার তিন জন সহ মুক্তিযোদ্ধা হলেন মো: ওলিয়ার রহমান(গেজেট নং২২৬২), রশিক লাল (২৩১৭) ও তপন কুমার রায়(২২০১)।
অভাবের তাড়নায় তিনি দেশের বিভিন্ন প্রান্তে দিন মজুরের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেছেন। তার ঔরাসে চারজন পুত্র সন্তান রয়েছে। তারা দিন মজুরের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। পিতার খোঁজ খবর রাখার সময় তাদের নেই। বয়স্ক ভাতার জন্য আবেদন করলে উপজেলার সমাজ সেবা দপ্তর থেকে বলা হয়. আপনি আগামীতে মুক্তিযোদ্ধার ভাতা পাবেন। তাই আপনাকে বয়স্ক ভাতা দেওয়া হবে না। তিনি এলাকায় বীর মুক্তি যোদ্ধা নামে পরিচিত। যে যা দয়া করে দান করেন, তিনি তা হাত পেতে নেন। এভাবে চলছে তার বৃদ্ধকাল। এখন রাষ্ট্রের কাছে তার একটাই আকুতি মুক্তিযোদ্ধার সম্মান পেয়ে যেন তার মৃত্যু হয়।