Type to search

মণিরামপুরে দুই স্কুল শিক্ষক করোনায় আক্রান্ত \ করোনা উপসর্গ নিয়ে নির্মাণ শ্রমিকের মৃত্যু

মনিরামপুর

মণিরামপুরে দুই স্কুল শিক্ষক করোনায় আক্রান্ত \ করোনা উপসর্গ নিয়ে নির্মাণ শ্রমিকের মৃত্যু

জি এম ফারুক আলম, মণিরামপুর : যশোরের মণিরামপুরে দু’জন স্কুল শিক্ষক ছাড়াও আরও ৮ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এছাড়ও করোনা উপসর্গ নিয়ে একজন নির্মাণ শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। করোনার এ উর্ধ্বমুখী নাকাল থাবার কারনে আতংকিত হচ্ছেন মণিরামপুরের সর্বত্র জনগণ। তবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ক্ষেত্রে সরকারি সকল নির্দেশনা উপেক্ষিত করা হচ্ছে। এছাড়া অভিযোগ উঠেছে সরকারি নির্দেশনা ও স্বাস্থ্যবিধির তোয়াক্কা না করেই কোমলমতি শিক্ষার্থীদের অ্যাসাইনমেন্টের নামে হরহামেশা স্কুলমুখী করা হচ্ছে। অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক/কর্মচারীদের রুটিন অনুযায়ী স্কুলে আগমন-প্রস্থান এবং হাজিরা খাতায় স্বাক্ষরও বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
মণিরামপুর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার অনুপ কুমার বসু বলেন, সোমবার ১২ জনের করোনার নমুনা সংগ্রহ করা হয়। এদের মধ্যে ৮ জনের শরীরে করোনা পজেটিভ মিলেছে। রোববার আক্রান্তের সংখ্যা ছিলো ২২ জন। সব মিলে মঙ্গলবার পর্যন্ত মণিরামপুরে করোনা উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালসহ বাড়িতে ৭৬ জন রোগী চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এর মধ্যে সোমবার রাতে পৌরসভাধীন কামালপুর গ্রামের রবিউল ইসলাম (৪৫) নামে এক নির্মাণ শ্রমিকের করোনা উপসর্গ নিয়ে মৃত্যু হয়েছে।
এদিকে উপজেলার খাটুয়াডাংগা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক (কম্পিউটার) লক্ষী রানী এবং সুবলকাটি মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক (ইসলাম ধর্ম) মাওঃ আসাদুজ্জামান আসাদ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এ দু’জন শিক্ষক করোনায় আক্রান্তের খবরে মণিরামপুর শিক্ষক মহলে চরম আতংক বিরাজ করছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন শিক্ষক বলেন, সরকারি নির্দেশনা উপেক্ষা করে মণিরামপুরের বহু সংখ্যক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নিয়মিত চালানো হচ্ছে। প্রধান শিক্ষকগণ তাদের নিজস্ব আদেশ ও নির্দেশে প্রতিদিন বিদ্যালয়ে শিক্ষক ও কর্মচারীদের উপস্থিতি বাধ্যতামূলক করছেন। এমনকি নিয়মিত বিদ্যালয়ে উপস্থিত হয়ে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে।
মণিরামপুর পৌরসভাধীন একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের এক প্রধান শিক্ষক সম্প্রতি শিক্ষকদের প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত করতে নোটিশ জারি করেছেন। ওই বিদ্যালয়ে একজন শিক্ষক জানিয়েছেন বিদ্যালয় খোলা থাকার কারনেই অ্যাসাইনমেন্ট নেওয়া-দেওয়া করতে স্বাস্থ্যবিধির তোয়াক্কা না করেই রীতিমতো শিক্ষার্থীরাও বিদ্যালয়ে উপস্থিত হচ্ছেন।
খোঁজ-খবর নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার অধিকাংশ বিদ্যালয়ে নিজস্ব আইনে প্রধানগণ এভাবেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চালানো হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। নামপ্রকাশ না করার শর্তে একজন প্রধান শিক্ষক বলেন, স্থানীয় প্রশাসনের আদেশে বিদ্যালয়ের অফিসিয়াল কার্যক্রম চালানো হচ্ছে।
রাজগঞ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মাসুদ কামাল তুষার বলেন, মণিরামপুরে দুইজন শিক্ষক করোনায় আক্রান্ত হওয়ার খবরে শিক্ষক সমাজেই আতংক দেখা দিয়েছে। এহেন পরিস্থিতির মধ্যে তারা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দাপ্তরিক কাজকর্ম নতুনভাবে করা চিন্তা করছেন।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার বিকাশ চন্দ্র সরকার বলেন, আমার নাম ব্যবহার করে অনেক প্রতিষ্ঠান প্রধানগণ খামখেয়ালীপনা করছেন বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে। বর্তমান করোনা পরিস্থিতির মধ্যে যদি কোন প্রতিষ্ঠান প্রধান কোমলমতি শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকদের বিড়ম্বনায় ফেলানোর চেষ্টা করে, তাহলে সকল দায়দায়িত্ব তাকেই বহন করতে হবে।
মণিরামপুরে সার্বিক করোনা ভাইরাস অবস্থার প্রেক্ষিতে উপজেলা নির্বাহী অফিসার সৈয়দ জাকির হাসান বলেন, বুধবার থেকে মণিরামপুর উপজেলাসহ গোটা যশোর জেলা লকডাউনের আওতায় আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন জেলা প্রশাসক। এ বিষয়ে মঙ্গলবার যশোর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে থেকে এ সিদ্ধান্ত জানানো হয়েছে। সেক্ষেত্রে কেবলমাত্র কাঁচামাল, মুদি দোকান এবং ঔষধ-এর দোকানপাট ছাড়া সবকিছু বন্ধ থাকবে। এমনকি সকল প্রকার যানবাহন চলাচলেও বিধি নিষেধ থাকবে।