Type to search

ভবদহের জলাবদ্ধ মানুষের তীব্র দহন নিয়ে দ্বিতীয় দিনের মত অবস্থান

যশোর

ভবদহের জলাবদ্ধ মানুষের তীব্র দহন নিয়ে দ্বিতীয় দিনের মত অবস্থান

প্রিয়ব্রত ধর:
ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির আহ্বানে যশোর ডিসি অফিস চত্বরের অবস্থান কর্মসূচি সফল করার জন্য পুরুষের ন্যায় নারীরা ঘরবাড়ি ফেলে কোলের শিশু নিয়ে উপস্থিত হচ্ছেন। কারণ বাড়িঘরেরচারিপাশে কোথাও হাঁটু সমান কোথাও কোমর সমান পানি,রাস্তায় পানি,ফসলের মাঠ,স্কুল- কলেজ,মসজিদ মন্দির, গোরস্থান, শশ্মানসহ সর্বত্রই পানির সাথে মিশে একাকার।
পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির আহ্বানে
                                            ।
যশোর ডিসি অফিস থেকে ভবদহের জলাবদ্ধ এলাকার দূরত্ব গড়ে ৩০ কিলোমিটার।কিন্তু এই ৩০ কিলোমিটার রাস্তা পাড়ি দিয়ে যশোর পৌঁছাতে বাড়ির উঠান থেকে পানি পথের যুদ্ধ শুরু হয়।এরপর পাকা রাস্তার কোথাও আধাকিলোমিটার, কোথাও এক কিলোমিটার নৌকায় পার হতে হয়। তারপর বাসে, ট্রেনে বা বিকল্প পথ ধরে ডিসি অফিস চত্বর। যত সহজ করে বলা কিন্তু পৌঁছানোর পথটা সহজ নয়।
যশোর ডিসি অফিসের অবস্থান কর্মসূচিতে যোগাযোগ করছেন মনিরামপুর, অভয়নগর, কেশবপুরের প্রত্যন্ত গ্রামের নারী-পুরুষ, ছাত্র-ছাত্রীসহ সাধারণ জনগণ।
কর্মসূচিতে যোগদানের জন্য খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে খেয়ে না খেয়ে রওনা দিয়ে যশোর পৌঁছে দুপুর ১২ টা থেকে বিকাল ৪ টা পর্যন্ত কালেক্টর ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করা। গ্রামের অভুক্ত সহজ সরল মানুষের মুখের দিকে তাকানো সত্যি কষ্ট দায়ক।কিন্তু তারপরও দাবি আদায়ের লক্ষ্যে সকলেই এক প্রাণ। এযে জীবন মরনের লড়াই, বেঁচে থাকার লড়াই।
গতকাল ৯ জানুয়ারি (রবিবার) থেকে ডিসি অফিস চত্বরে অবস্থান কর্মসূচি শুরু হয়েছে এবং আজ ১০ জানুয়ারি ( সোমবার)ভবদহ সংলগ্ন বিলের জলাবদ্ধতা দূরকরণের লক্ষ্যে প্রহসন মূলক সেচ প্রকল্প বাতিল করে টিআরএম চালুসহ ৬ দফা দাবি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ভবদহ পাড়ের কয়েকশত নারীপুরুষ দুধের শিশু নিয়ে পৌষের শীতের ভিতর দ্বিতীয় দিনের মতো অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন।
                                                 
তাদের সকলের হাতে বিভিন্ন দাবি সম্বলিত ফেস্টুনসহ
লাঙ্গল কাচি, জোয়াল, মই, নিড়ানিসহ নানারকম কৃষি যন্ত্রপাতি যা দেখে বুঝাই যায় দীর্ঘদিন ঘরের মাচায় পড়ে থেকে মরিচা ধরেছে অথবা নষ্ট হওয়ার উপক্রম।
ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির আহ্বায়ক রণজিৎ বাওয়ালী বলেন, ‘আমরা মানুষকে বাঁচানোর দাবিতে আন্দোলন করছি। ভবদহ অঞ্চলে সাত বছর ধরে ফসল নেই। ৪০ বছর ধরে আমরা জলের ভেতরে বাস করছি। বাড়িঘরে জল, না খেয়ে মরছি! যে কারণে এই অঞ্চলের মানুষ ফুঁসে উঠেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী বলেছেন—নদী বাঁচলে দেশ বাঁচবে; আমরাও তো নদী বাঁচানোর আন্দোলন করছি। কিন্তু আমাদের কথা কেন বুঝতে চাইছেন না? কেন কর্ণপাত করছেন না?’
তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, ‘আমাদের আন্দোলন চলবে; আরও বেগবান হবে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত ফিরে যাবো না। হয় দাবি আদায় হবে, না হয় লাশ হয়ে ফিরবো। পরবর্তী সময়ে ডিসি অফিসের সামনে আত্মাহুতির কর্মসূচি দেবো।
অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার হুমকি দিয়ে আরও বক্তৃতা দেন- ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির উপদেষ্টা ইকবাল কবির জাহিদ, গাজী আব্দুল হামিদ, চৈতন্য কুমার পাল, শিবপদ বিশ্বাস ও অধ্যাপক অনিল বিশ্বাস প্রমুখ।
ভবদহ জলাবদ্ধ এলাকার জনগণের সাথে তাদের আন্দোলনে কপোতাক্ষ বাঁচাও আন্দোলনের আহ্বায়ক অনিল বিশ্বাস সংহতি জানিয়ে বলেন, ‘দিল্লিতে কৃষকেরা ৩৮০ দিন আন্দোলন করে বিজয় ছিনিয়ে এনেছেন। তাদের আন্দোলন পুরো উপমহাদেশে উদাহরণ সৃষ্টি করেছে। আপনারাও বিজয়ী হবেন।
অবস্থান কর্মসূচির প্রস্তাবিত ৬ দফা দাবি-প্রস্তাবিত প্রায় ৪৫ কোটি টাকার ‘ভবদহ ও তৎসংলগ্ন বিল এলাকার জলাবদ্ধতা দূরীকরণ’ জন্য নেওয়া অবিবেচনাপ্রসূত ও প্রহসনমূলক সেচ প্রকল্প বাতিল; ক্রাস প্রোগ্রামে মাঘী পূর্ণিমার আগেই বিল কপালিয়া টিআরএম চালু; ভবদহ স্লুইস গেটের ভাটিতে পাইলট চ্যানেল করার জন্য ৫-৬টি স্কেভেটর চালিয়ে ভবদহ মোহনার নদী মুক্তেশ্বরী,শ্রী টেকা,হরি নদীর বুকে সঞ্চিত পলি অপসরণ এবং ২১,৯ও৮ ভেন্টের গেটসমূহ উঠানামার ব্যবস্থা করা; ভবদহ জনপদের ফসল, বাড়িঘরসহ অন্যান্য ক্ষয়ক্ষতির ক্ষতিপূরণ , কৃষি ঋণ মওকুফ ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা; আমডাঙ্গা খাল সংস্কার কাজে প্রি-ওয়ার্ক ও পোস্ট ওয়ার্ক জনসমক্ষে টাঙিয়ে কাজের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা।
সংগ্রহ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *