Type to search

পানিবন্দি সাতক্ষীরার অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান

খুলনা

পানিবন্দি সাতক্ষীরার অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান

গত তিনদিনের বৃষ্টিতে সাতক্ষীরার অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এতে স্কুল-কলেজগুলোতে পাঠদান কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। বিভিন্ন স্কুল ভবনের দ্বিতীয় তলায়, ছাদে চলছে পাঠদান। শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা পানি মাড়িয়ে ঝুঁকি নিয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আসছেন। এ অবস্থায় প্রতিষ্ঠানের পাশে অন্য কোনও ভবনে পাঠদানের ব্যবস্থা করা যায় কিনা ভাবছে শিক্ষা অফিস।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে সাতক্ষীরা সদরের ভোমরা রাশেদা বেগম মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মাঠ ছাপিয়ে পানি উঠেছে শ্রেণিকক্ষে। বিদ্যালয়টির নিচতলা সম্পূর্ণ পানিতে নিমজ্জিত। এ অবস্থায় মাঠের কোমরপানি পার হয়ে শ্রেণিকক্ষে যাওয়া কষ্টকর হয়ে পড়েছে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের। সিঁড়ির গোড়া পর্যন্ত পানি ওঠে যাওয়ায় শিক্ষার্থীদের ভবনের দ্বিতীয় তলায় পাঠদান চলছে। এ অবস্থায় অন্যত্র ক্লাস করানোর কথা ভাবছে শিক্ষা অফিস। কিন্তু নিকটস্থ কোনও ভবন না থাকায় সেটিও আপাতত সম্ভব হচ্ছে না।

এদিকে, সাতক্ষীরা শহরে নারীদের উচ্চ শিক্ষার একমাত্র বেসরকারি কলেজ ছফুরননেছা মহিলা কলেজটিও পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। সামান্য একটু বৃষ্টি হলেই কলেজের শ্রেণিকক্ষে জমছে হাঁটু পানি। এই কলেজের সামনে (সাতক্ষীরা-কালিগঞ্জ সড়ক) সড়ক বিভাগের জায়গা অবৈধভাবে দখল করে কিছু ভূমিহীন নামধারী মানুষ পানি নিষ্কাশনের পথ বন্ধ করে বসত বাড়ি তোলায় এ অবস্থার সৃষ্টি বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

জেলা শহরের একমাত্র বেসরকারি মহিলা কলেজের এই বেহালদশা যেন দেখবার কেউ নেই। প্রতিষ্ঠানটিতে এইচএসসি থেকে শুরু করে স্নাতক শ্রেণিতে ছাত্রীরা লেখাপড়া করছেন। বৃষ্টির কারণে কলেজ চত্বরে শুধু নয়, শ্রেণিকক্ষের ভেতরেও হাঁটু পানি জমে যায়। এ কারণে বিষাক্ত পোকা-মাকড় ও সাপের উপদ্রব বেড়েছে।

ছফুরননেছা মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ আশরাফুন নাহার জানান, সামান্য বৃষ্টি হলেই কলেজের ভেতরে হাঁটু পানি জমছে। পানি নিষ্কাশনের সব পথ বন্ধ। শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অন্যদের সাংঘাতিক ভোগান্তি হচ্ছে। অফিসের যাবতীয় কাগজপত্রও নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। জরুরিভাবে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করার দাবি জানান তিনি।

বহুতল ভবন নির্মাণের জন্য সাতক্ষীরা সদর আসনের সংসদ সদস্য, জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্ট  মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি আরও বলেন, জেলা শহরে নারীদের উচ্চ শিক্ষার জন্য একমাত্র বেসরকারি কলেজ এটি। প্রত্যাশা করছি এই প্রতিষ্ঠানের দিকে সবাই নজর দেবেন।

হাবিবা খাতুন নামে এক শিক্ষার্থী কলেজের এসব দুর্ভোগ লাঘবে জেলা প্রশাসককে জরুরি পদক্ষেপ নিতে আহ্বান জানান।


এদিকে সাতক্ষীরা সদরের মাছখোলা হাইস্কুল, মাছখোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পানিতে ডুবে আছে কয়েক মাস। সম্প্রতি স্কুল খুলে দেওয়ার পর পাঠদানে সমস্যা হচ্ছে। স্কুল ভবনের নিচতলায় ক্লাস নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না, দ্বিতীয়তলায় পাঠদান চলছে বলে জানান জেলা শিক্ষা অফিসার এসএম আব্দুল্লাহ আল মামুন।

জেলা সদরের বড়দল প্রাইমারি স্কুলেরও একই অবস্থা। পানিবন্দি স্কুলটিতে পাঠদান কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। পানি নিষ্কাশন না হওয়ায় শিক্ষার্থীরা রয়েছে ঝুঁকিতে।

সাতক্ষীরা জেলার কালিগঞ্জ উপজেলার নলতা মাধ্যমিক বিদ্যালয়, নলতা মোবারকনগর বাজার ও তৎসংলগ্ন এলাকা পানিতে ডুবে গেছে।

নলতা হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক মো. আব্দুল মোনায়েম বলেন, এক রাতের বৃষ্টিতে আমাদের বিদ্যালয় পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এছাড়া কেবি আহসানিয়া জুনিয়র স্কুল, নলতা শরীফের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও হাট-বাজার ও রাস্তাঘাটও পানিতে তলিয়েছে বলে জানান তিনি।

তিনি আরও বলেন, পানি নিষ্কাশনের পথ দখল করে মাছের ঘের করার কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এতে করে পানিতে নিমজ্জিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে শ্রেণি কার্যক্রম পরিচালনা দুরূহ হয়ে পড়েছে।

শিক্ষক হাবিবুর রহমান বলেন, মঙ্গলবার ভ্যানে চড়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা পানি পার হয়ে স্কুলের বারান্দায় পৌঁছায়। পানি পার হতে না পেরে অনেকে বাড়ি ফিরে যায়।

কালিগঞ্জ উপজেলার ভদ্রখালি প্রাইমারি স্কুলের মাঠে হাঁটু পানি। পানি ঢুকেছে শ্রেণিকক্ষেও। ফলে সেখানেও ক্লাস করা অসম্ভব বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।


আশাশুনির প্রতাপনগর ফাজিল মাদ্রাসা, প্রতাপনগর ইউনাইটেড একাডেমি ও কল্যাণপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কুড়িকাহুনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কুড়িকাহুনিয়া মহিলা মাদ্রাসা, প্রতাপনগর মহিলা মাদ্রাসা, কল্যাণপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, প্রতাপনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান পানিতে ডুবে গেছে বলে জানান সাইদুল ইসলাম, মিলন বিশ্বাস, রুহুল আমিনসহ অনেকেই। তারা আরও জানান, স্থানীয় প্রতাপনগর তালতলা জামে মসজিদ, কুড়িকাহুনিয়া পাঞ্জেগানা মসজিদ ও উপজেলাগামী প্রধান সড়ক এবং গড়ইমহল খালের কাঠালতলা রাস্তাটি পানিতে নিমজ্জিত।

সাতক্ষীরা জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার এসএম আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, রবিবার রাতের ভারী বৃষ্টি ও গত দুইদিনের বৃষ্টিতে জেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পানিতে তলিয়ে গেছে। জলাবদ্ধতার কারণে কোনও কোনও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ক্লাস করানো সম্ভব হচ্ছে না। বিকল্প ব্যবস্থায় ক্লাস করা যায় কিনা সে চিন্তাভাবনা চলছে।তিনি আরও বলেন, জেলার শ্যামনগরের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে খোঁজ নেওয়া হয়েছে। এছাড়া কালিগঞ্জ, আশাশুনি, দেবহাটা, তালা ও কলারোয়ার নিম্নাঞ্চলের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের খোঁজ রাখা হচ্ছে। কালিগঞ্জের কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। পানি নিষ্কাশন না হলে এসব প্রতিষ্ঠানে ক্লাস করা কঠিন।

জেলা শিক্ষা অফিসার বলেন, সদরের নুনগোলা মাদ্রাসা, মাছখোলা হাইস্কুল, নেহালপুর হাইস্কুলসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের খোঁজ নেওয়া হয়েছে। শুধু হাইস্কুল নয় মাদ্রাসা ও প্রাইমারি স্কুলও জলাবদ্ধতার শিকার হয়েছে। সেখানেও পাঠদান চালু রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে বলে জানান তিনি।  সূত্র,বাংলা ট্রিবিউন

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *