Type to search

নারায়ণগঞ্জের সেই জঙ্গি আস্তানা থেকে শক্তিশালী তিনটি বোম উদ্ধার

জাতীয়

নারায়ণগঞ্জের সেই জঙ্গি আস্তানা থেকে শক্তিশালী তিনটি বোম উদ্ধার

অপরনাজেয় বাংলা ডেক্স: নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার থানাধীন নোয়াগাঁও এলাকার জঙ্গি আস্তানা থেকে তিনটি শক্তিশালী আইইডি (ইম্প্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস) বোমা উদ্ধারের পর নিস্ক্রিয় করেছে কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট। এছাড়া ওই আস্তানা থেকে বিপুল পরিমাণ বোমা তৈরির বিভিন্ন উপকরণ উদ্ধার করা হয়েছে। কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের কর্মকর্তারা বলছেন, পুলিশের চেকপোস্ট ও পুলিশ বক্সকে টার্গেট করে শক্তিশালী এসব বোমা তৈরি করেছিল নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন নব্য জেএমবির সদস্যরা।

কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (বোম্ব ডিসপোজাল) রহমত উল্লাহ চৌধুরী সুমন বলেন, ‘আস্তানা থেকে তিনটি শক্তিশালী বোমা উদ্ধারের পর তা নিস্ক্রিয় করা হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে  জঙ্গিদের ব্যবহার করা যে কোনও বোমা বা আইইডির তুলনায় এগুলো আরও বেশি শক্তিশালী ছিল। জঙ্গিরা এসব কোথাও বিস্ফোরণ ঘটাতে পারলে বহু হতাহতের ঘটনা ঘটতে পারতো।’

সিটিটিসির কর্মকর্তারা জানান, সাম্প্রতিক সময়ে নব্য জেএমবির বোমা বিশেষজ্ঞ ফোরকান ও সাব্বির অনলাইনের মাধ্যমে প্রত্যেক সদস্যদের বোমা বা আইইডি তৈরির প্রশিক্ষণ দিয়ে আসছিল। তারা পুলিশকে তাদের ভাষায় তাগুদ বাহিনী উল্লেখ করে চেকপোস্ট বা পুলিশ বক্সে হামলার পরিকল্পনা করেছিল। গত ১৯ মে তারা সিদ্ধিরগঞ্জের সাইনবোর্ড এলাকায় একটি পুলিশ বক্সের সামনে আইইডি রেখে আসে। কিন্তু সেটি বিস্ফোরিত না হওয়ায় কোনও হতাহত হয়নি। একারণে তারা এর মধ্যে আরো তিনটি শক্তিশালী বোমা বা আইইডি তৈরি করেছে। তাদের পরিকল্পনা ছিল এগুলো পুলিশ চেকপোস্ট বা পুলিশ বক্সে বিস্ফোরণ ঘটানো।

212594236_618559525788170_460719198973217220_nমামুনের আবাসস্থলসিটিটিসি সূত্র জানায়, সম্প্রতি গোয়েন্দা তথ্যের মাধ্যমে তারা নব্য জেএমবির নতুন করে সংগঠিত হয়ে হামলার পরিকল্পনার কথা জানতে পারেন। এরই ধারাবাহিকতায় রবিবার (১১ জুন) রাজধানী ঢাকা থেকে আব্দুল্লাহ আল মামুন নামে এক জঙ্গিকে গ্রেফতার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মামুন নারায়ণগঞ্জের নোয়াগাঁওয়ে তার বাসাটি বোমা তৈরির কারখানা হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে বলে স্বীকার করে। এই তথ্যের ভিত্তিতে সিটিটিসির অভিযানিক দল সেখানে গিয়ে প্রথমে আস্তানটি ঘেরাও করে। পরে বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিটের সদস্যরা মামুনের ঘরে ঢুকে তিনটি শক্তিশালী বোমা বা আইইডি উদ্ধারের পর নিস্ক্রিয় করে।

সিটিটিসির অতিরিক্ত উপ-কমিশনার আহমেদুল ইসলাম জানান, গ্রেফতারকৃত মামুন ২০১৮ সালে নব্য জেএমবিতে যোগ দেয়। তার বাসাটিতে সে একাই থাকতো। কেউ সন্দেহ করবে না এই চিন্তায় তার বাসাটি বোমা তৈরির কারখানা বানায়। ওই বাসা থেকে বোমা তৈরির বিভিন্ন উপকরণসহ দূর থেকে বোমা বিস্ফোরণের অনেকগুলো ডিভাইস উদ্ধার করা হয়েছে। অভিযানের বিষয়টি টের পেয়ে তার কয়েকজন সহযোগী পালিয়ে গেছে। তাদের শনাক্ত করে গ্রেফতারের অভিযানও চালানো হবে বলে জানান তিনি।

সিটিটিসির সূত্র জানায়, গ্রেফতার হওয়া আব্দুল্লাহ আল মামুনের গ্রামের বাড়ি লালমনিরহাটে। সে স্থানীয় একটি মাদ্রাসা ও পরে সিরাজগঞ্জের একটি মাদ্রাসায় পড়াশোনা করেছে। দেড় বছর আগে সে নোয়াগাঁও মসজিদে মুয়াজ্জিন ও ওয়াক্তের নামাজের ইমামতি করার চাকরি নেয়। মসজিদের পাশেই একটি কক্ষে সে একাই থাকতো।

সিটিটিসি সূত্র বলছে, সম্প্রতি মাহমুদ হাসান জন নামে এক তরুণ তুরস্কে বসে নব্য জেএমবির সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা করছে। তার সাংগঠনিক নাম আবুল আব্বাস আল বাঙ্গালি। সিটিটিসির কর্মকর্তারা নিষিদ্ধ এই সংগঠনের আরো কয়েকজনের সাংগঠনিক নাম পেয়েছে। তারা হলো আবু আমের আল বাঙালি, আবু রুহাম আল বাঙালি, আবু আদনান আল বাঙালি, আবু দুজানাহ আল বাঙালি, আবু উনায়েস (আব্দুল ওয়াহেদ) আল বাঙালি, আবু আহসান (লায়ন) আল বাঙালি অন্যতম। তাদেরকে শনাক্ত ও গ্রেফতারের চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা।

সিটিটিসির ওই কর্মকর্তা জানান, সংগঠনের শীর্ষ নেতারা সাংগঠনিকভাবে তারা সদস্যদের বোমা তৈরিতে দক্ষ করার চেষ্টা করছেন। এজন্য ফোরকান ও সাব্বির নামে দুজনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ফোরকান একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রসায়ন বিভাগে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করে নব্য জেএমবির বোমা বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজ করছে। আর সাব্বিরের বাসা ময়মনসিংহে। বৃহত্তর ময়মনসিংহ এলাকার সামারিক কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি সাব্বিরও বোমা তৈরিতে প্রশিক্ষণ দিচ্ছে।

এদিকে নারায়ণগঞ্জের আড়াই হাজার থানাধীন নোয়াগাঁও মিয়াবাড়ি এলাকায় অভিযান শেষে বন্দর এলাকার আরেকটি জঙ্গি আস্তানা ঘিরে রেখেছে কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসি)। ওই আস্তানাতেও বোমা ও বোমা তৈরির উপকরণ রয়েছে বলে ধারনা করছে সিটিটিসি। নোয়াগাঁও এ যার বাসায় অভিযান চালানো হয়েছিল সেই আব্দুল্লাহ আল মামুনের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ওই আস্তানাটি ঘিরে রাখা হয়। সিটিটিসির বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিটের সদস্যরা ওই আস্তানায় অভিযান চালাবে। বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিটের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার রহমত উল্লাহ চৌধুরী সুমন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন