Type to search

দুই বছরেও আম্পানের ক্ষত কাটিয়ে উঠতে পারেনি উপকূলবাসী: বেড়িবাঁধের দাবিতে মানববন্ধন

সাতক্ষীরা

দুই বছরেও আম্পানের ক্ষত কাটিয়ে উঠতে পারেনি উপকূলবাসী: বেড়িবাঁধের দাবিতে মানববন্ধন

ঘুর্ণিঝড় আম্পানের দুই বছরেও ক্ষত কাটিয়ে উঠতে পারেনি সাতক্ষীরা বাসী। বৃহস্পতিবার ঘূর্ণিঝড় আম্পানের তান্ডবের দুই বছর পূর্তি। ২০২০ সালের ২০ মে সাতক্ষীরা উপকূলে আঘাত হানে ঘুণিঝড় আম্পান। ঝড়ের তান্ডবে লন্ডভন্ড হয় গোটা সাতক্ষীরাসহ উপকূলীয় এলাকা। পানিবন্দি হয়ে পড়ে উপকূলীয় এলাকার কয়েক লাখ মানুষ। প্রলয়ঙ্করি এ ঝড়ের শিকার অনেক এলাকার মানুষ আজো সেই স্মৃতি বয়ে বেড়াচ্ছে। কাটিয়ে উঠতে পারেনি সেই ক্ষতি। জনপদে চলছে অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান ও সুপেয় পানির তীব্র হাহাকার। নিজের কিংবা সব হারিয়ে অন্যের জমিতে কোন রকমে মাথা গোঁজার মত ঘর বেধে বাস করছে অনেকেই। নদী ভাঙ্গন সংস্কার করা হলেও কয়েকটি স্থানের বেঁড়িবাধ এখনও রয়েছে জরাজীর্ণ অবস্থায়।

স্থায়ী টেকসই বেড়িবাঁধের দাবি এলাকাবাসীর। বুধবার সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সামনে স্থায়ী টেকসই বেড়িবাঁধের দাবিতে মানব বন্ধ করেছে স্থানীয়রা। আম্পানের দুই বছর পরে এখন উপকূলবাসীর রাত কাটে বেড়িবাঁধ ভাঙনের আতঙ্কে। যোগাযোগব্যবস্থা এখনও বলা চলে বিচ্ছিন্ন। চিকিৎসা, সুপেয় পানি, স্যানিটেশনসহ বিভিন্ন সংকটে বিপর্যস্থ উপকূলের মানুষ। কাজ না থাকায় সেখানকার লোকজন বর্তমানে বেকার হয়ে পড়েছেন। সাতক্ষীরার শ্যামনগর ও আশাশুনির ক্ষতিগ্রস্থরা জানান, গৃহহীনের সংখ্যা এখনও শতাধিক। বেড়িবাঁধের রাস্তার ওপর খুপড়ি ঘরে বসবাস করেন অনেকে। একের পর এক প্রাকৃতিক দুর্যোগে সর্বস্বান্ত হয়েছে উপকূলবাসী। একটি আঘাতের রেশ কাটতে না কাটতেই প্রকৃতির আরেকটি আঘাত। এভাবেই সবকিছু হারিয়ে এখন নিঃস্ব সাতক্ষীরার উপকূলীয় এলাকার লাখ লাখ মানুষ।

প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে পড়ে দুর্ভোগের যেন শেষ নেই এসব মানুষের। আইলা থেকে আম্ফান সব দুর্যোগেই ভেঙেছে উপকূল রক্ষার বেড়িবাঁধ। ভেসে গেছে মাছের ঘের, ফসলি জমি, ঘরবাড়ি ও রাস্তাঘাট। নিরুপায় হয়ে বসতভিটা ছাড়ছেন অনেক উপকূলের বাসিন্দা।জোড়া তালির বেড়িবাঁধ হয়ে গেলেও স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারেনি জেলার কয়েক হাজার মানুষ। যাদের মাথা গোজার মত ঠাঁই রয়েছে তারা নতুন করে ঘর বেধে স্বপ্ন দেখছেন বসবাস করার। এসব ইউনিয়নের সাথে উপজেলার যোগাযোগ ব্যবস্থাও নাজুক। আম্পানের দুই বছরে আজও মেরামত করা হয়নি অধিকাংশ রাস্তা, জরাজীর্ণ রাস্তা দিয়ে গাড়ি চলতে না পারায় হাটতে হয় মানুষকে। কয়েকটি স্থানের বেঁড়িবাধও রয়েছে জরাজীর্ণ অবস্থায়।

নদীতে জোয়ার দেখলেই বুক কাঁপে উপকূলীয় বাসিন্দাদের। কারণ, ঘূর্ণিঝড় আর জলোচ্ছ্বাসে বাঁধ ভাঙে, কপাল ভাঙে সাগরপারের মানুষের। তারই মাঝে ২০২০ সালের ২০ মে সাতক্ষীরা উপকূলে ১৫১ কিলোমিটার বেগে আঘাত হেনেছিল আম্পান। টানা ১৫ ঘণ্টা চলে ঝড়, সৃষ্ট হয় ১২ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস। প্রাথমিক হিসাবে ক্ষতি হয়েছিল প্রায় ১১০০ কোটি টাকার। এর মধ্যে সাতক্ষীরা জেলায় ৩১৪ কোটি ৮৯ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছিল।

২০০৯ সালের ২৫ মে ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ আইলায় লন্ডভন্ড হয়ে যায় সাতক্ষীরার উপকূলীয় জনপদ। ২৮ কিলোমিটার উপকূল রক্ষা বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয় বিস্তীর্ণ এলাকা। নিহত হয় শিশুসহ ৭৩ জন নারী-পুরুষ। এর মধ্যে ৫৩ জন মারা যায় শ্যামনগর উপজেলার গাবুরা ইউনিয়নে। বাকি ২০ জন পার্শ্ববর্তী পদ্মপুকুর ইউনিয়নের বাসিন্দা। আইলার সেই ক্ষত আজও কাটিয়ে উঠতে পারেনি উপকূলবাসী। আজও শ্যামনগর উপজেলার উপকূলীয় এসব জনপদে আইলার ক্ষত স্পষ্ট। এরপর ২০১৯ সালের ৪ মে ফনি, ওই বছরের ১০ নভেম্বর বুলবুল ও ২০২০ সালের ২০ মে আম্ফান আঘাত হানে। ফনি ও বুলবুলের প্রভাবে খুব বেশি ক্ষয়ক্ষতি না হলেও আম্ফানে আবারও তছনছ হয়ে যায় উপকূল।

এদিকে সাতক্ষীরায় টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ ও আসন্ন বর্ষা মৌসুমে সম্ভাব্য জলাবদ্ধতা নিরসনের পূর্ব প্রস্তুতি গ্রহণের দাবিতে মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়েছে। বুধবার (১৮ মে) সকাল ১০টায় সাতক্ষীরা জেলা নাগরিক কমিটি ও বেসরকারি উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান বারসিক যৌথভাবে এই মানববন্ধনের আয়োজন করে। সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সামনে ঘণ্টাব্যাপী অনুষ্ঠিত মানববন্ধন চলাকালে সাতক্ষীরা জেলা নাগরিক কমিটির আহবায়ক আনিসুর রহিমের সভাপতিত্বে ও যুগ্ম সদস্য সচিব আলী নুর খান বাবুলের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব ও সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি আবুল কালাম আজাদ, শিক্ষাবিদ প্রফেসর আব্দুল হামিদ, দৈনিক দক্ষিণের মশাল সম্পাদক অধ্যক্ষ আশেক-ই-এলাহী, জেলা জাসদের সভাপতি ওবায়দুস সুলতান বাবলু, জেলা সিপিবির সভাপতি আবুল হোসেন, বাংলাদেশ জাসদের সাধারণ সম্পাদক প্রভাষক ইদ্রিস আলী, মানবাধিকার কর্মী মাধব চন্দ্র দত্ত, বারসিকের গাজী মাহিদা মিজান, শিক্ষা সংস্কৃতি ও বৈচিত্র্য রক্ষা টিমের সংগঠক হাবিবুল হাসান, আমরা সাতাশের আমিনুর রহমান কাজল, ভিডিবির তরিকুল ইসলাম, মানবাধিকার সংস্থার সদস্য তামান্না খাতুন প্রমুখ।

বক্তারা বলেন, প্রতিবছরই বর্ষা মৌসুমে সাতক্ষীরা জেলার নি¤œ অঞ্চলে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এতে ফসলের ক্ষেত ডুবে যায়। বহু বাড়ি-ঘর জলমগ্ন হয়ে পড়ে। এমনকি সাতক্ষীরা পৌরসভার বিভিন্ন পাড়া মহল্লায়ও জলাবদ্ধতা ও জলমগ্ন অবস্থা বিরাজ করে। অনেকের ঘরের মধ্যে পানি ওঠে। জলাবদ্ধতায় মানুষের জীবন দুর্বিসহ হয়ে ওঠে। একইভাবে ষাটের দশকে নির্মিত সাতক্ষীরা উপকূল রক্ষা বাঁধের অধিকাংশ জরাজীর্ণ হয়ে পড়ায় উপকূলের মানুষও সবসময় অনিরাপদ জীবনযাপন করে। স্বাভাবিক সময়ে বেড়িবাঁধ নিয়ে কর্তৃপক্ষের কোন মাথা ব্যথা থাকে না। প্রাকৃতিক দুর্যোগ আসলেই শুরু হয় তোড়জোড়। যা এবার ঘূর্ণিঝড় অশনির সময়ও দেখা গেছে। কিন্তু এখন আর সেই তোড়জোড় নেই।।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *