Type to search

চৌগাছায় বাল্যবিয়ের হিড়িক

চৌগাছা

চৌগাছায় বাল্যবিয়ের হিড়িক

চৌগাছায় বাল্যবিয়ের হিড়িক
১৮ ঘন্টায় চার বাল্য বিয়ের ঘটনায় বরের মামা, কনের নানা, দাদা ও বাবার আড়াই বছরের কারাদন্ড

চৌগাছা (যশোর) প্রতিনিধি
যশোরের চৌগাছায় বৃহস্পতিবার (২৮জুলাই) রাত ১১টা থেকে শুক্রবার (২৯জুলাই) বিকাল চারটা পর্যন্ত ১৮ ঘন্টায় চারটি বাল্য বিয়ের ঘটনায় পৃথক চারজনের আড়াই বছরের কারাদন্ড দিয়েছেন ভ্রাম্যমান আদালত। ভ্রাম্যমান আদালতের বিচারক ও চৌগাছার সহকারী কমিশনার (ভূমি) গুঞ্জন বিশ^াস এই সাজা দেন। এসময় দুটি বাল্য বিয়ে বন্ধ করা গেলেও একটিতে বিয়ে সম্পন্ন হওয়ার পর বরপক্ষ কনেকে নিয়ে চয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটে। অন্য একটি বিয়ে সম্পন্ন হওয়ায় সেখানে বরের মামাকে ৯মাসের জেল দেয়া হয়। এবং কনে পক্ষের কাছ থেকে মুচলেকা নেয়া হয় মেয়ের বয়স ১৮ বছর পূর্ণ হওয়ার আগে তাকে শ^শুর বাড়ি পাঠানো হবে না বলে।
আদালত সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার (২৯জুলাই) দুপুর দুইটার দিকে উপজেলার ভারত সীমান্তবর্তী আন্দুলিয়া গ্রামে একটি বাল্য বিয়ের আয়োজন চলছে সংবাদ পেয়ে সহকারী কমিশনার গুঞ্জন বিশ^াস আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিয়ে সেখানে অভিযান চালান এবং বাল্য বিয়ে বন্ধ করেন। এসময় ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করে কনের নানা মোঃ লিয়াকত আলীকে (৫০) নয় মাসের কারাদন্ড দেয়া হয়। এরপর বিকেল সাড়ে চারটার দিকে উপজেলার হাকিমপুর ইউনিয়নের যাত্রাপুর গ্রামে আরেকটি বাল্যবিয়ে অনুষ্ঠানে হানা দেন করেন সহকারী কমিশনার (ভূমি) গুঞ্জন বিশ^াস। সেখানে গিয়ে দেখা যায় মেয়েটির বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে। এসময় বরের মামা মোঃ আজিজুল ইসলামকে (২৮) ৯মাসের কারাদন্ড দেয়া হয় এবং মেয়ে পক্ষের কাছ থেকে মেয়ের বয়স ১৮ বছর পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত শ^শুরবাড়ি পাঠানো হবেনা মর্মে মুচলেকা নেয়া হয়।
এরআগে বৃহস্পতিবার (২৮জুলাই) রাতে উপজেলার পাতিবিলা ইউনিয়নের পাতিবিলা উত্তর পাড়া গ্রামের ১০ম শ্রেণি পড়–য়া এক শিক্ষার্থীর বিয়ের অনুষ্ঠান ছিলো। মেয়েটি বিয়েতে রাজি না থাকলেও পরিবারের সদস্যরা একপ্রকার জোর করেই তাকে বিয়ে দিচ্ছিলো। বর পাশর্^বর্তী কালীগঞ্জ উপজেলার একটি গ্রামের বাসিন্দা। বিষয়টি একটি মাধ্যমে জানতে পারেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইরুফা সুলতানা। দ্রæত বিয়েটি বন্ধের নির্দেশ দেন সহকারী কমিশনারকে (ভূমি)। তিনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের নিয়ে রাত ১০টা ৫০মিনিটের দিকে ঘটনাস্থলে গিয়ে বিয়েটি বন্ধ করেন। এসময় ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করে কনের দাদা আব্দুস সালামকে (৬৫) ছয়মাসের বিনাশ্রম কারাদন্ড প্রদান করা হয়। একইসাথে তাঁকে ১০০টাকা জরিমানা করা হয় যা অনাদায়ে আরও ১৫ দিনের বিনাশ্রম কারদন্ড দেয়া হয়। এই বিয়ে বন্ধ করেই এসিল্যান্ড রওনা হন উপজেলার জগদীশপুর ইউনিয়নের মাড়–য়া গ্রামে। সেখানে রাত সাড়ে ১১টায় গিয়ে দেখা যায়, ১০ম শ্রেণির এক শিক্ষার্থীর বাল্য বিয়ের আয়োজন করেন অভিভাবকরা। তবে সেখানে এসিল্যান্ডসহ আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্যরা পৌঁছানোর আগেই কনেকে নিয়ে দ্রæত বিয়ে বাড়ি ত্যাগ করেন বর ও বরযাত্রীরা। পরে সেখানে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করে কনের বাবা মোঃ মহিউদ্দিনকে (৪৬) ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদন্ড দেয়া হয়। একইসাথে ১০০টাকা জরিমানা করা হয় যা অনাদায়ে আরও ১৫দিনের বিনাশ্রম কারাদন্ড দেয়া হয়।
বিষয়টি নিশ্চিত করে ভ্রাম্যমান আদালতের বিচারক চৌগাছার সহকারী কমিশনার (ভূমি) গুঞ্জন বিশ^াস বলেন, সংবাদ পেয়ে ইউএনও স্যারের নির্দেশে অভিযান পরিচালনা করা হয়। এতে দুটি বিয়ে বন্ধ করা গেলেও অন্য দুটির একটিতে কনেকে নিয়ে বর ও বরযাত্রীরা বিয়ে বাড়ি ত্যাগ করেন। সর্বশেষটিতে বিয়ে সম্পন্ন হওয়ার পর বরযাত্রীরা বিয়েবাড়িতে অবস্থানকালে বরের মামাকে কারাদন্ড দেয়া হয় এবং মেয়ে পক্ষের কাছ থেকে মুচলেকা নেয়া হয়। একটিতে মেয়ের নানাকে ৯ মাসের জেল দেয়া হয়। একটিতে কনের দাদা ও অপরটিতে কনের বাবাকে ছয়মাসের বিনাশ্রম কারাদন্ড এবং ১০০টাকা জরিমান অনাদায়ে আরও ১৫ দিনের বিনাশ্রম কারাদন্ড দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন বাল্য বিয়ে নিরোধ আইন-২০১৭ এর ৮ধারায় এই সাজা দেয়া হয়েছে।
চৌগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইরুফা সুলতানা বলেন, বাল্য বিয়ের বিষয়ে কঠোর অবস্থান নেয়া হবে। এ ধরনের অভিযান অব্যহত থাকবে।
প্রসঙ্গত কয়েকদিন আগেও উপজেলার বাদেখানপুর গ্রামে একটি বাল্য বিয়ে বুঝিয়ে বন্ধ করেন এসিল্যান্ড গুঞ্জন বিশ^াস। তবে এসিল্যান্ড ফিরে আসার একঘন্টার মধ্যেই সেই বিয়েটি সম্পন্ন করেন অভিভাবকরা। এছাড়াও উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে প্রতিদিনই চলছে বাল্য বিয়ের আয়োজন। যেখানে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি বা পুলিশ নিষেধ করেও কোন কাজ হচ্ছে না। প্রায়ই দেখা যাচ্ছে চতুর্থ-পঞ্চম শ্রেণি থেকে ৯ম-দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বাল্য বিয়ে দিচ্ছেন অভিভাবকরা। কিছুদিন পরেই এসব বিয়ের বেশিরভাগই আবার ভেঙে যাচ্ছে।