চৌগাছায় ওএমএসের ২৫০ কেজি চাল জব্দ, ডিলারের বিক্রি কার্যক্রম বন্ধ

চৌগাছা (যশোর) প্রতিনিধিঃ
যশোরের চৌগাছায় খোলাবাজারের (ওএমএস) ২৫০ কেজি চাল কালোবাজারে বিক্রির জন্য পাচারের সময় জব্দ করা হয়েছে। বুধবার সন্ধ্যায় চালসহ এক ভ্যান চালককে শহরের কুঠিপাড়া মোড় থেকে আটক করে স্থানীয়রা। পরে খবর পেয়ে পুলিশ চালসহ তাকে হেফাজতে নেন।
এ ঘটনায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রকৌশলী এনামুল হক পৌরসভার ৯নং ওয়ার্ডের ওএমএস ডিলার এস এম তবিবুর রহমানের চাল বিক্রি কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছেন । তিনি জানান, ঘটনা তদন্ত চলছে। এ ঘটনায় ডিলারের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধেনিয়মিত মামলাসহ আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
চৌগাছা পৌরসভার ৮নং ওয়ার্ডের কুঠিপাড়া গ্রামের বাসিন্দা আমিনুর রহমান আমিন জানান, চৌগাছা হাজী সর্দার মর্তুজ আলী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সামনে ওএমএস ডিলার এস এম তবিবুর রহমান চাল বিক্রি করেন। সেখান থেকে ৮নং ও ৯নং ওয়ার্ডের জনসাধারণ খোলাবাজারে চাল ক্রয় করেন। রবিবার থেকে চাল বিক্রি শুরুর পর থেকেই আমরা দেখি প্রতিদিন তারা সুযোগ বুঝে ঐ চাল চৌগাছা বাজারে নিয়ে বিক্রি করে দেন। অথচ গরীব মানুষকে সারাদিন দাড় করিয়ে রেখে বিকালে বলা হয় আজকে আর চাল নেই। বুধবার সকালেও একটি ভ্যানে করে তারা পাঁচ বস্তা চাল বাজারে পাঠায়। আবারো পাঠাতে পারে সন্দেহে আমরা কিছু গ্রামবাসী কুঠিপাড়া মোড়ে অবস্থান নিই। বিকেল পাঁচটার দিকে দেখি একটা ভ্যানে করে পাঁচ বস্তা চাল ( প্রতি বস্তায় ৫০ কেজি করে ২৫০ কেজি) নিয়ে যাচ্ছে। অথচ একটু আগেই আমার এক বৃদ্ধ চাচাকে সারাদিন দাড় করিয়ে রেখে চাল নেই বলে ফেরত দিয়েছেন। তখন আমরা ভ্যানওয়ালা ছেলেটিকে দাড় করায়। এরপর তাকে জিজ্ঞেস করলে সে ঠিকঠাক জবাব দিতে পারছিলো না। তখন পুলিশে সংবাদ দিলে পুলিশ এসে চালগুলি ও তাকে হেফাজতে নেন।
চৌগাছা থানার এসআই এনামুল হক বলেন, স্থানীয়দের মাধ্যমে সংবাদ পেয়ে কুঠিপাড়া মোড়ে এসে দেখি চাল নিয়ে স্থানীয় জনতার ভিড়। পরে আমরা চাল ও ভ্যান চালক ছেলেটিকে হেফাজতে নিই। তিনি জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ছেলেটি জানায় চালগুলি ওএমএস ডিলার এস এম তবিবুর রহমানের। তার ছোট ছেলে এসএম জিম আমাকে ভ্যানে তুলে দিয়ে বলেছে শহরের লতিফের চালের দোকানে পৌছে দিতে। আমি সেখানে নিয়ে যাচ্ছিলাম। পথিমধ্যে এরা আমাকে আটকে রেখেছে।
পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রকৌশলী এনামুল হক এবং সহকারী কমিশনার (ভূমি) কাফী বিন কবির এবং অতিরিক্ত পুলিশ ঘটনাস্থলে আসেন। পরে তারা ডিলারের অস্থায়ী গুদামে যান। এ সময় তাদের সাথে ছিলেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।
ডিলারের প্রতিনিধি ও তার ছেলে এসএম জিম বলেন, আমাদের স্টক, মাস্টার রোল সব ঠিক আছে। আমরা কোনো চাল অবৈধভাবে বিক্রি করিনি। এই চাল আমার নয়। চার দিন ধরে চাল বিক্রি করলেও দায়িত্বপ্রাপ্ত ট্যাগ অফিসার একদিনও আসেননি। আমরা তাকে ফোন দিলেও তিনি আসেননি।
তবে ঘটনাস্থলে উপস্থিত উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের প্রতিনিধি সহকারী খাদ্য উপ-পরিদর্শক শাহিনুর রহমান চাল যাচাই করে বলেন, এগুলো ওএমএসএর চাল। তবে বস্তা পরিবর্তন করা হয়েছে। পরে গুদাম থেকে ডিলারের মাস্টাররোল, পাঁচ বস্তা চাল বাজারে নিয়ে যাওয়া পশুখাদ্যের বস্তার অনুরূপ দুটি বস্তা ও উদ্ধার পাঁচ বস্তা চাল জব্দ এবং ডিলার, ভ্যান চালক হুসাইন আহমেদ, তার পিতা ও শ্রমিক বায়েজ আহমেদের লিখিত জবানবন্দি নেয়ার নির্দেশ দেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রকৌশলী এনামুল হক।
বৃহ¯পতিবার এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রকৌশলী এনামুল হক বলেন, এ ঘটনায় উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক আশরাফুজ্জামান লিটনকে তদন্ত পূর্বক প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তদন্তে ডিলারের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়াহবে। এছাড়া উদ্ধার চাল জব্দের পাশাপাশি ওই ডিলারের বিক্রয় কার্যক্রম বন্ধ করা হয়েছে।
০১৭৭০৬৫৪৫৪৬