Type to search

কুয়েট শিক্ষকের মৃত্যু : ৪৪ ছাত্রলীগ নেতাকর্মী অভিযুক্ত

খুলনা

কুয়েট শিক্ষকের মৃত্যু : ৪৪ ছাত্রলীগ নেতাকর্মী অভিযুক্ত

অনলাইন ডেক্স: খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. মো. সেলিম হোসেনের ‘অস্বাভাবিক’ মৃত্যুর ঘটনায় তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন ও ছাত্রদের শোকজের জবাব পর্যালোচনা করা হবে আগামী ৪ জানুয়ারি ছাত্র শৃঙ্খলা কমিটির সভায়। ওই কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী ৫ জানুয়ারি সিন্ডিকেট সভায় নির্ধারণ হবে শোকজ করা ৪৪ ছাত্রের ভাগ্য। এ ছাড়া ওই সভার সিদ্ধান্তের দিকে তাকিয়ে আছে শিক্ষক সমিতি এবং ওই শিক্ষকের পরিবার। কুয়েট কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তে সন্তুষ্ট হলে ক্লাসে ফিরবেন শিক্ষকরা। ৬ জানুয়ারি সভা করে সিদ্ধান্ত নেবে শিক্ষক সমিতি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কুয়েটের পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটির এক সদস্য জানান, গত ২৮ ডিসেম্বর তারা উপাচার্যের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। তদন্ত প্রতিবেদনে কুয়েটের লালন শাহ হলে নিজেদের পছন্দের ডাইনিং ম্যানেজার নিযুক্ত করতে ড. সেলিমের ওপর ছাত্রদের চাপ ছিল বলে উল্লেখ করা হয়। ড. সেলিমের মৃত্যুর ঘটনায় অভিযুক্ত ৪৪ শিক্ষার্থী যে শৃঙ্খলা ভঙ্গ করেছেন, তদন্তে তার প্রমাণ পাওয়া গেছে। প্রতিবেদনে ওই ঘটনায় পর্যবেক্ষণসহ ৯টি সুপারিশ করা হয়েছে। কমিটি যেসব সুপারিশ করেছে, সেখানে ছাত্র রাজনীতি একেবারে বন্ধ করার কথা বলা হয়নি। তবে কিছুদিনের জন্য ক্যাম্পাসে ছাত্রদের রাজনীতি স্থগিত এবং ৪৪ ছাত্রলীগ নেতাকর্মীকে বহিস্কারের সুপারিশ করা হয়েছে।

তদন্ত কমিটির প্রধান অধ্যাপক ড. মহিউদ্দিন আহমাদ তদন্ত প্রতিবেদনে কী কী আছে, তা জানাতে অপারগতা প্রকাশ করেন।

কুয়েটের ছাত্র শৃঙ্খলা কমিটির সদস্য সচিব ও ছাত্রকল্যাণ পরিচালক অধ্যাপক ইসমাঈল সাইফুল্লাহ জানান, তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন অনুযায়ী গত ২৯ ডিসেম্বর ৪৪ ছাত্রকে শোকজ করা হয়েছিল। তাদের ৩ ডিসেম্বর বিকেল ৫টার মধ্যে জবাব দিতে বলা হয়। রোববার বেশ কয়েকজন ছাত্র লিখিত জবাব দিয়েছে। তিনি জানান, আগামী ৪ জানুয়ারি সকালে ছাত্র শৃঙ্খলা কমিটির সভা আহ্বান করা হয়েছে। ওই সভায় অভিযুক্ত ৪৪ জনের শোকজের জবাব পর্যালোচনা করে পরবর্তী সুপারিশ করা হবে। এরপর ৫ জানুয়ারি সকাল ১১টায় কুয়েট সিন্ডিকেটের সভায় তা উত্থাপন করা হবে। ছাত্রদের বিষয়ে সিন্ডিকেটের সভায় চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

কুয়েট শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. প্রতীক চন্দ্র বিশ্বাস জানান, গতকাল তারা সমিতির কার্যনির্বাহী কমিটির সভা করেছেন। ওই সভায় আগামী ৬ ডিসেম্বর সকাল সাড়ে ১০টায় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সভা আহ্বান করা হয়েছে। তিনি জানান, কুয়েট কর্তৃপক্ষ তাদের জানিয়েছে, ৫ জানুয়ারি সিন্ডিকেট সভার পর কর্তৃপক্ষ তাদের গ্রহণ করা পদক্ষেপের কথা শিক্ষক সমিতিকে জানাবে। এ বিষয়ে তারা সাধারণ সভায় পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করবেন।

খুলনার খানজাহান আলী থানার ওসি প্রবীর কুমার বিশ্বাস জানান, ড. সেলিমের মরদেহের ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন এখনও তারা পাননি। এ ঘটনায় এখনও কেউ মামলা করতে আসেনি। তবে যে জিডিটি হয়েছিল, সেই জিডির তদন্ত তারা অব্যাহত রেখেছেন।

ড. সেলিমের মৃত্যুর ঘটনার পর থেকে কুয়েটের উপাচার্য অধ্যাপক ড. কাজী সাজ্জাদ হোসেন সাংবাদিকদের এড়িয়ে চলছেন। তাকে রোববার বেশ কয়েকবার মোবাইল করা হলেও তিনি তা রিসিভ করেননি।

কুয়েটের জনসংযোগ ও তথ্য শাখার মুখপাত্র রবিউল ইসলাম সোহাগ জানান, মামলা করার বিষয়ে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

কুয়েটের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার মো. আনিসুর রহমান ভূঁইয়া বলেন, ছাত্র শৃঙ্খলা কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী সিন্ডিকেট সভায় শোকজ করা ছাত্রদের বিষয়ে ছাত্র রাজনীতিসহ তদন্ত কমিটির সুপারিশ করা সার্বিক বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

কুয়েট ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদমান নাহিয়ান সেজান বলেন, তাকে শোকজ নোটিশে পাঁচটি বিষয়ে জবাব দিতে বলা হয়েছিল। তিনি রোববার লিখিতভাবে জবাব ও ব্যাখ্যা দিয়েছেন। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, পত্রিকা পড়ে তিনি জানতে পেরেছেন, তদন্ত কমিটি ছাত্র রাজনীতি সাময়িক স্থগিতের সুপারিশ করেছে। তিনি কুয়েটের ছাত্রকল্যাণ কমিটির নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক। ওইদিন তিনি শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলতে গিয়েছিলেন ছাত্রকল্যাণ কমিটির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে, ছাত্রলীগ নেতা হিসেবে নয়। এ কারণে ছাত্র রাজনীতি বন্ধ করার প্রসঙ্গ অযৌক্তিক।