Type to search

কুড়ি ‘জিনের’ নিয়ন্ত্রণে যশোর পাসপোর্ট অফিস

যশোর

কুড়ি ‘জিনের’ নিয়ন্ত্রণে যশোর পাসপোর্ট অফিস

 

অপরাজেয় বাংলা ডেক্স : কুড়ি ‘জিন’ চালায় যশোর আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসটি। সেবা নিতে আসা মানুষের কাছ থেকে এই অফিসকে বেড়াজালে ঘিরে রেখেছে ওই চক্রটি। এরমধ্যে রয়েছে তিনজন অফিসের কর্মী আর বাদবাকিরা ‘দালাল’ হিসেবে পরিচিত। এরাই মূলত নিয়ন্ত্রণ করে অফিসটি। আর এই চক্রটি দপ্তরের প্রধান কর্তা মোবারক হোসেনের আশীর্বাদপুষ্ট বলে অভিযোগ। ওই কর্মকর্তা চক্রের সদস্যদের আদর করে ‘কুড়ি জিন’ বলে ডাকেন। যাদের মাধ্যমে তিনি আর্থিকভাবে লাভবান হন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
পাসপোর্ট অফিস এলাকায় প্রচার রয়েছে, টাকা দিলে এই জিনেরা দ্রুতগতিতে কাজ করে দিতে পারেন। নতুন পাসপোর্ট তৈরিসহ যেকোনো অফিসিয়াল কাজ করতে হলে তাই নির্ধারিত দালালের শরণাপন্ন হতেই হবে। সরাসরি গেলে সুষ্ঠুভাবে কোনো কাজ হবে না। অভিযোগ, সেবাগ্রহীতারা সরাসরি গেলে তাকে মাসের পর মাস নানা অজুহাতে ঘোরানো হয়।
যশোরের মণিরামপুর উপজেলার কাশিপুর ঘুঘুরইল গ্রামের আলী দফাদারের ছেলে মফিজুর রহামান অভিযোগ করেন, গত বছরের ১২ অক্টোবর তিনি পাসপোর্ট করতে কাগজপত্র নিজ হাতে জমা দেন। এ পর্যন্ত ছয়বার আসার পরেও তিনি পাসপোর্ট হাতে পাননি। অথচ, তার বন্ধু আজম দালালের মাধ্যমে বাড়তি টাকা দিয়ে এক সপ্তাহের মধ্যে পাসপোর্ট নিয়ে গেছে।
সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার খোরদো গ্রামের মনিরউদ্দিনের ছেলে আব্দুল আলী বলেন, ‘কাগজপত্র জমা দেওয়ার পর চারবার অফিসে গেছি। গত বছরের ২৯ নভেম্বর পাসপোর্ট ডেলিভারির দিন ছিল। ডিসেম্বর-জানুয়ারি ঘুরেও পাসপোর্ট হাতে পাইনি। অথচ, আমার পরে বহু লোক দালালের মাধ্যমে পাসপোর্ট করে তারা বিদেশও চলে গেছে।’
যশোর জেনারেল হাসপাতালের প্রধান গেটের সামনে ওষুধ দোকানের মালিক বাচ্চু বলেন, ‘আমি পাসপোর্ট করতে দালালের মাধ্যমে না যাওয়ায় ছয় মাসেরও অধিক সময় ঘুরেছি। পরে পাসপোর্ট হাতে পেয়েছি।’
শার্শা উপজেলার কালিয়ানি গ্রামের আবুল হোসের স্ত্রী সালমা বেগম, যশোর শহরের সিটি কলেজপাড়ার তহিদুল ইসলামের ছেলে হাবিবুর রহমান ও মণিরাপুরের তুশখালি দুর্বাডাঙ্গা গ্রামের সঞ্জয় মল্লিকদেরও একই রকম অভিযোগ।
অভিযোগ রয়েছে, আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের সহকারী পরিচালক মোবারক হোসেনের নির্দেশনামতেই এসব অবৈধ কারবার চলছে। সেলক্ষ্যে ‘কাজে’ নিয়োজিত আছেন অফিসের উপ-সহকারী পরিচালক মো. কবির হোসেন এবং অফিস সহকারী মোস্তফা জামান, আকমাম ও আজহারুল। আর এরাই চালান দালালচক্রটি। দালালদের মাধ্যমে আসা টাকা-পয়সা লেনদেন ও অফিসিয়াল কাজ করে দেন তারা। তাদের নিয়ন্ত্রিত দালালরা হচ্ছেন শহরের বেজপাড়া রানার অফিস এলাকার ভজন, এমএসটিপি স্কুলগেট এলাকার স্বপন ও বিশ্বজিৎ, ছাদেক দারোগার মোড় এলাকার তাজউদ্দিন, সোনালী ব্যাংক এলাকার সোহেল ও বাবু ওরফে ঘুড়িবাবু, আদালত চত্বর এলাকার ভেন্ডার বাবু, সাইফুল ও মিজান, পাসপোর্ট অফিস এলাকার মিজান, জিরো পয়েন্ট মোড় এলাকার আনসার ও আতিয়ার, নাজিরশংকরপুর এলাকার শামিম ওরফে বেড়ে শামিম, চার খাম্বার মোড় এলাকার নিপু, রুহুল, টিটো খাঁ ও রহিম।
ভুক্তভোগীরা জানান, দূরদূরান্ত থেকে আসা সাধারণ মানুষ ঘণ্টার পর ঘণ্টা লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকার পরে অফিসে ঢুকতে পারেন। কিন্তু কাগজপত্র জমা দিলেই শুরু হয় অফিস সহকারীদের ভুলত্রুটি ধরার মচ্ছব। তারা কাগজপত্র হাতে নিয়েই বলেন, ‘এখানে নানা সমস্যা রয়েছে, ঠিক করে আনেন।’ কোথায় সমস্যা সেটিও তারা নির্দিষ্ট করে বলেন না। এভাবেই সুযোগ করে দেওয়া হয় দালালদের। দরদাম করে তারা পৌঁছে যান অফিস সহায়কদের কাছে।
এতোসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে ২৭ জানুয়ারি পাসপোর্ট অফিসের সহকারী পরিচালক মোবারক হোসেনের দপ্তরে গেলে তিনি এই প্রতিবেদককে তিন ঘণ্টা পরে যেতে বলেন। কিন্তু যথাসময়ে গেলে তাকে অফিসে পাওয়া যায়নি। পরদিন সকাল দশটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত এই প্রতিবেদক তার মোবাইল ফোনে অন্তত সাতবার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি। পরে প্রতিবেদকের পরিচয় দিয়ে টেক্সট করা হয়। ফিরতি টেক্সটে তিনি জানান, পারিবারিক কারণে অফিসের বাইরে রয়েছেন।সূত্র, সুবর্ণভূমি

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *