‘আগে সারের জন্য কৃষক মরত, এখন পানির দামে সার পায়’- কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক

চৌগাছা (যশোর) প্রতিনিধি : কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহা পরিচালক মহাপরিচালক মোঃ আসাদুল্লাহ বলেন, ‘আগে সারের জন্য কৃষক মারা গেছে, আর আজকে পানির দামে কৃষক সার পাচ্ছে। ’ তিনি বলেন এই সময়ে কৃষির যে উন্নতি তা পরিকল্পনা মাফিক হয়েছে। এমনি এমনি এই উন্নতি আসেনি। আজকে কৃষির এই অবস্থানে আসার জন্য স্মরণ করছি আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। আমরা তার জন্মশতবার্ষিকী, দেশের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী পালন করছি। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বঙ্গবন্ধু প্রথমেই চিন্তা করেন ‘কৃষির উন্নতি না হলে দেশের উন্নতি সম্ভব নয়।’ সেই নিরিখে মেধাবী ছাত্ররা যেন কৃষি শিক্ষায় আসে সে জন্য কৃষিবিদদের তিনি প্রথম শ্রেণির মর্যাদা দেন। তার প্রেক্ষিতে দেশে মেধাবী ছাত্ররা কৃষিতে লেখাপড়া করতে আসে।
তিনি শনিবার বেলা ১১টায় যশোরের চৌগাছা উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের আয়োজনে উপজেলার ১নং ফুলসারা ইউনিয়নের নিমতলা মাঠে এই কৃষক মাঠ স্কুল পরিদর্শন ও মতবিনিময় সভায় এ কথা বলেন।
কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের মহাপরিচালক বলেন, এই বাংলাদেশে প্রতি বছর ২০ লক্ষ মানুষ বাড়ছে আবার জমি কমছে ১ শতাংশ। এজন্য আমাদের ফলন বৃদ্ধি করতে হলে ভাল বীজ তৈরি করতে হবে। আজকে যে প্রদর্শনী করা হচ্ছে তা হচ্ছে বীজ প্রদর্শনী। তাহলে আমাদের ফলন বাড়বে ৫ থেকে ১০ শতাংশ। তিনি আরো বলেন এখন প্রতি বিঘায় বোরো উৎপাদন হচ্ছে ২৫ মন করে। আগামী ২০ বছর পর বিঘাপ্রতি ৫০ মন ধান উৎপাদন হবে। তিনি বলেন এই এলাকার কৃষি বাংলাদেশের অন্যান্য এলাকার থেকে এগিয়ে রয়েছে। এ কারনে এই এলাকার জন্য সরকার বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ করেছে।
চৌগাছা উপজেলা নির্বাহী অফিসার প্রকৌশলী এনামুল হকের সভাপতিত্বে ও উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রইচ উদ্দিনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন চৌগাছার সাবেক কৃষি কর্মকর্তা ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরিচালক (অর্থ ও প্রশাসন) কৃষিবিদ কাজী আব্দুল মান্নান, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক (খুলনা অঞ্চল) কৃষিবিদ জিএম আব্দুল গফুর, জাতীয় কৃষি প্রশিক্ষণ একাডেমির সাবেক মহাপরিচালক কৃষিবিদ আব্দুল আজিজ, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর যশোরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ বাদল চন্দ্র বিশ^াস, চৌগাছা থানার ওসি সাইফুল ইসলাম সবুজ, চৌগাছা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ফুলসারা ইউপি চেয়ারম্যান মেহেদী মাসুদ চৌধুরী। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তৃতা করেন চৌগাছা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ ড. মোস্তানিছুর রহমান।
অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার আব্দুল্লাহ আল মামুন, অতিরিক্ত কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার মিজানুর রহমান, উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম, তাপস কুমার পাল প্রমুখ।
অনুষ্ঠানের শেষ দিকে কৃষকদের পক্ষ থেকে বক্তৃতা দেয়ার সময় উপজেলা যুবলীগের আহবায়ক কমিটির সদস্য ও ইউনিয়নের সলুয়া গ্রামের কৃষক হাশেম আলী বলেন চৌগাছার সার ডিলাররা সিন্ডিকেট করে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে বেশি দামে সার কিনতে কৃষকদের বাধ্য করছে। ২২ টাকার টিএসপি সার ৩২ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে বলেও তিনি অভিযোগ করেন। বক্তব্যের পর অনুষ্ঠানের অতিথি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ফুলসারা ইউপি চেয়ারম্যান এবং উপজেলা ফার্টিলাইজারি এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মেহেদী মাসুদ চৌধুরী তার বক্তব্যের প্রতিবাদ করে বলেন বর্তমানে সরকারিভাবে কোন টিএসপি সারের বরাদ্দ নেই। কাজেই টিএসপি সারের দাম বেশি নেয়ার প্রশ্নই ওঠে না। কোন ডিলার বা দোকানী বেশি দামে সার বিক্রি করছে এমন ভাউচার দেখাতে পারলে তার দায়িত্ব আমি নেব। রাজনৈতিক গ্রুপিংয়ের কারনে এভাবে হেয় করে প্রতিহিংসামূলক বক্তব্য রাখার তিনি তীব্র প্রতিবাদ জানান। এ নিয়ে উপস্থিত কৃষকদের মাঝে মৃদু উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। একজন কৃষক বলেন কৃষকরা দোকান থেকে বাকিতে সার নেয়ায় দোকানীরা অনেক সময় বেশি দাম নেন। যেটা সারের দাম, বেশি নয় ঋণ হিসেবে। পরে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এমন কিছু হলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার আশ^াস দিলে পরিস্থিতি শান্ত হয়।