বিধবা আম্বিয়ার ছিল সোনার সংসার। সেই সংসারে ছিলো সুবিশাল বাড়ী ও নগদ অর্থকড়ি। স্বামী মারা যাওয়ার পর একমাত্র ছেলে লিমনকে আঁকড়ে ধরে বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখেন আম্বিয়া। কিন্তু তার সেই স্বপ্ন আজ মরিচিকা। একমাত্র ছেলে লিমন ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে (আইপিএল) বাজির নেশায় সব হারিয়ে এখন প্রায় নিঃস্ব। যাকে ঘিরে বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখছিলেন সেই ছেলের জুয়া খেলার কারণেই এখন তিনি পাগল প্রায়।
সারা দেশের মত কেরাণীগঞ্জের প্রায় প্রতিটি পাড়া মহল্লায় এমন চিত্র হরহামেশাই চোখে পড়ছে এখন। তবে এসব বিষয়ে প্রশাসনের পক্ষ থেকে কার্যকর পদক্ষেপ বা উদ্যোগ নেই বললেই চলে।
রাজধানীর ইসলামপুরে ব্যবসা করতেন রহিম নামে আরেক যুবক। স্বপরিবারে থাকতেন কেরানীগঞ্জের চড়াইল রোডের চেয়ারম্যান বাড়ির প্লটের একটি ভাড়া বড়িতে। আইপিএল জুয়া খেলে সব হারিয়ে এখন দেনার দায়ে এলাকা ছাড়া রহিম।
ক্রিকেট দুনিয়ায় সবচেয়ে জনপ্রিয় টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট লিগের একটি ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ বা আইপিএল। এবারের আসরে কোনও বাংলাদেশি খেলোয়াড় মাঠে না থাকলেও পর্দার সামনে লাখো খেলোয়াড়! তবে, তারা ক্রিকেট খেলোয়ার নন জুয়ার খেলোয়াড়। রাস্তার মোড়ের চায়ের দোকান থেকে শুরু করে নামীদামি বিপনীবিতান গুলোতেও চলেছে এই জুয়াখেলা। এসব দোকানে ভালোভাবে চোখ রাখলেই দেখা যায় চলছে বাজির দর কষাকষি। ম্যাচের ফলাফল নিয়ে সবচেয়ে বেশি পরিমাণ জুয়া খেলা হয়। এছাড়াও কোন ওভারে কত রান হবে? কোন বোলার কত উইকেট পাবে? কোন ব্যাটসম্যান কত রান করবে? শেষ ওভারে কত রান হবে? এমনকি কোন বলে কত রান হবে—এসব নিয়ে বাজি ধরা হয়। যারা এসব বাজি ধরেন তাদের বেশির ভাগই বয়সে তরুণ। তবে, তরুণদের সঙ্গে অনেক বয়স্ক ব্যক্তিও বাজির নেশায় মেতে উঠেছেন।
কেরাণীগঞ্জ উপজেলার হযরতপুর, কলাতিয়া, রুহিতপুর, বাস্তা, শাক্তা, কালিন্দী, আগানগর ও জিনজিরা থেকে শুরু করে শুভাঢ্যা,তেঘরিয়া, কোন্ডা ইউনিয়ন পর্যন্ত একই চিত্র। দিন দিন আইপিএল জুয়ার নেশা যেন মহামারি আকার ধারণ করেছে।
সরেজমিন দেখা গেছে, খেলা চলাকালে পাড়া-মহল্লার প্রায় প্রতিটি চায়ের দোকানে জুয়ারিদের উপচেপড়া ভিড়। একটু লক্ষ্য করতেই বোঝা যায় বাজির দর কষাকষি, চোখে পড়ে টাকা হাতবদলের দৃশ্য। স্বল্প আয়ের রিকশা চালক থেকে ছোট মাঝারি ব্যবসায়ীরা এখানে একে অপরের বন্ধুবর। অন্যদিকে, বড় বড় ডিলারদের মাধ্যমে মূলত বড় অংকের বাজি চলে। যে যত বেশি ম্যাচের ডিল করে দিতে পারবেন তার লাভের অঙ্কটা তত বেশি। যে সব ডিলার লাখ লাখ টাকা ডিল করেন তাদের আবার থাকে কয়েকজন সাব-ডিলার। এরা মূলত খেলাটা মাঠ পর্যায়ে নিয়ে যায়। তাদের কোন লস নেই।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক জুয়াড়ি জানান, বাজির ধরণটা হচ্ছে যদি কেউ শক্তিশালী দলের পক্ষে বাজি ধরেন তবে তাকে ১ হাজার টাকা জিততে হলে ২ হাজার টাকা খাটাতে হবে। অন্যদিকে, কেউ অপেক্ষাকৃত দুর্বল দলের পক্ষে বাজি ধরলে ১ হাজার টাকা খাটিয়ে ১ হাজার ৫০০ টাকা জিততে পারবেন। মাঝের ৫০০ টাকার ডিলারের লাভ। তিনি শুধু বাজি ধরিয়ে দিয়েই ৫০০ টাকা লাভ। ডিলারদের লাভ সবচেয়ে বেশি হয় ছোট দল জিতলে। আর বড় দল জিতলেও কোনো লোকসান নেই, কেননা বাজির নিয়ম অনুযায়ী, জয়ী বাজিকরের কাছ থেকে প্রতি হাজারে পঁচিশ থেকে পঞ্চাশ টাকা কেটে নেয় ডিলার।
এ বিষয়ে কেরানীগঞ্জ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কাজী মইনুল ইসলাম বলেন, এ বিষয়ে আমরা একাধিক অভিযান চালিয়েছি। অনেক জুয়ারিকেও আমরা আটক করে জেলে পাঠিয়েছি।
কেরানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অমিত দেবনাথ বলেন, ‘আইপিএল নিয়ে জুয়া খেলার বিষয়টি সম্পর্কে জানা ছিলনা।’ এ ব্যাপারে শিগগিরই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘জনসাধারণের পাশাপাশি সংবাদমাধ্যমগুলো আমাদের তথ্য দিয়ে সহায়তা করলে এই সর্বনাশা জুয়া থেকে যুব সমাজকে রক্ষা করা সম্ভব।’
সূত্র, DBC বাংলা