Type to search

অভয়নগরে বাস্ত থেকে উচ্ছেদ হওয়া সেই বিধবা তীব্রশীতের মধ্যে অমানবিক জীবনযাপন করছেন

অভয়নগর

অভয়নগরে বাস্ত থেকে উচ্ছেদ হওয়া সেই বিধবা তীব্রশীতের মধ্যে অমানবিক জীবনযাপন করছেন

 

বিশেষ প্রতিনিধি: যশোরের অভয়নগরে প্রভাবশালীর দ্বারা বাস্ত ভিটা থেকে উচ্ছেদ হয়ে তীব্রশীতের মধ্যে চার দিন যাবৎ পরিবার পরিজন নিয়ে অমানবিক জীবনযাপন করছেন সেই বিধবা নাছিমা বেগম। কেউ এগিয়ে আসেনি তাকে সাহায্য করতে।
গত শুক্রবার প্রভাব খাটিয়ে শ্রমিক নেতা উপজেলার একতারপুর গ্রামের নজরুল ইসলাম ফারাজীর ছেলে সালাউদ্দিন হোসেন বুলবুল বসতবাড়ি ভেঙ্গে দিয়েছেন ওই বিধবার । তিনি নিজের দখলে নেওয়ার জন্য উপজেলার রাজঘাট এলাকায় সড়ক ও জনপথের জায়গা অবস্থিত বসতবাড়ি ভেঙ্গে উচ্ছেদ করেন বিধাব নাছিমা বেগমের(৫৫) পরিবারকে । নাছিমা বেগম ২৬ বছর যাবৎ বসবাস করছেন ওই জমিতে।
নাছিমা বেগম জানান, তারা স্বামী ইউনুছ আলী একজন ফেরিওয়ালা ছিলেন। তিনি গ্রামে গ্রামে চুড়ি, ফিতা ফেরি করে বিক্রি করতেন।তাদের গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জ জেলার মকছেদপুর উপজেলার বালিয়াকান্দি গ্রামে। ইউনুছ আলী এখানে জুটমিলের বদলী শ্রমিকের কাজে যোগ দিয়েছিলেন। পরে শ্রমিকের কাজ ছেড়ে ফেরিওয়ার হয়ে ছিলেন। ২১ বছর আগে নাছিমা বেগমের স্বামী ৫৭ হাজার টাকা দিয়ে স্থানীয় আদম আলী, শহর আলী ও রাজু আহমেদের কাছ থেকে দখল সূত্রে প্রায় ১০ শতক জমি ক্রয় করেছিলেন।জমি ক্রয় করে তিনি টিন শেটের বাড়ি ঘর নির্মাণ করে ছিলেন। ২১ বছর আগে ইউনুছ আলী ব্যবসা করতে যেয়ে বেনাপোল এলাকায় দুর্র্বৃত্তের হাতে নিহত হয়। স্বামীর অকাল মৃত্যুতে দিশা হরা হয়ে পড়েন স্ত্রী নাছিমা বেগম। তখন তার ঘরে দুইটি মেয়ে ও তিনটি নাবালক ছেলে। পেটের দায়ে পাথর ঘাটায় পাথর ভেঙ্গে জীবিকা নির্বাহ করে সন্তানদের বড় করেছেন ওই বিধবা। এ বছর তার একটি ছেলে এইচ এস সি পরীক্ষায় জিপিএ ৪ পেয়েছে। তাছাড়া একটি মেয়ে দৌলতপুর বিএল কলেজে ¯œাতোকত্তর শ্রেণিতে লেখাপড়া করে।
এই অবস্থা চলাকালিন সালাউদ্দিন হোসেন বুলবুল ব্যবসায়িক প্রয়োজনে ওই বিধবার বাড়ির পেছনে স্থানীয় একজন মালিকের কাছ থেকে তিন শতক জমি ক্রয় করেন। কিন্তু বাঁধ সাধে ওই বিধবার বসতবাড়ি। বসতবাড়ি উচ্ছেদ হলে তার জমিটিতে যানবাহন আনা নেওয়া সুবিধা হয়। যে করনে বুলবুল অনেক দিন থেকে চাপ প্রয়োগ করে আসছে ওই বিধবাকে বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র চলে যাওয়ার জন্য। তিনি বাড়ির ক্ষতিপূরণ বাবদ ৮০ হাজার টাকা দেওয়ার প্রস্তাব করেছিলেন।
নাছিমা বেগম কান্না জড়িত কন্ঠে জানান, গত শুক্রবার পরিবার নিয়ে দুপুরে খাবার খাচ্ছিলেন। এমন সময় অভয়নগর রাজঘাট শিল্পাঞ্চলের প্রভাবশালী শ্রমিকলীগ নেতা নজরুল ইসলাম ফারাজীর ছেলে সালাউদ্দিন হোসেন বুলবুল ফারাজী(৪৫) দেশীয় অস্ত্রসহ ২০ /২৫জন লোক নিয়ে তার বসত বাড়ি ভাংচুর শুরু করে। এ সময়ে বাঁধা দিতে গেলে তারা খুন যখম করতে আসে। ভয়ে ছেলেরা পালিয়ে যায। পরে তারা নির্বিঘেœ টিনের বেড়া ও টিনের চালার বসত ঘর সহ অনান্য ঘর ভেঙ্গে চুরমার করে । এছাড়া খাবার সহ হাড়ি পাতিল গুড়িয়ে দেয়। বসতবাড়ি ফিরে পেতে দারে দারে ঘুরছে ওই মহিলা।
অভিযুক্ত সালাউদ্দিন হোসেন বুলবুল জানান, আমি ওই বিধবার বসতবাড়ির পেছনে জমি ক্রয় করেছি। ওরা সরকারি রাস্তার জায়গায় বসবাস করে। আমি অন্যত্র বাড়ি করার জন্য জন্য বিধবাকে ৮০ হাজার টাকা দিয়েছিলাম ওরা টাকা নিয়ে তা আবার ফেরত দিয়েছে। আমি কিছুদিন আগে ওই বিধার ছেলের নামে থানায় চাঁদাবাজি মামলা দিয়েছিলাম। এ ঘটনায় থানায় বসে একটি সালিশ হয়েছিলো। সালিশে তারা একলাখ টাকার বিনিময়ে জায়গা ছেড়ে দিতে রাজি হয়েছিলো। আমি ওদের ৮০ হাজার টাকা দিয়েছিলাম কিন্তু ওরা জায়গা ছাড়েনি। যে কারনে আমি ওদের ঘর ভেঙ্গে দিয়েছি। আর মালামাল রাখার জন্য ছোট্ট একটি ঘর রেখেছি।
নাছিমা বেগমের দাবি, তাকে অন্য কোথাও একটু স্থায়ী জায়গা দিলে তিনি সেখানে চলে যাবেন। তিনি এখন ভাঙ্গা ঘরের অবশিষ্ট স্থানে পরিবারের ৭জন নিয়ে গাঁদাগাদি করে শুধু রাত্রীযাপন করছেন। দুই দিন কোন রান্না হয়নি। অর্ধহারে অনাহারে কেটেছে। এখন পাশের একটি খোলা স্থানে রান্না করছেন। আর দিনের বেলায় এখানে সেখানে থাকেন। বিধবা আশংকা করছেন তাকে এলাকা ছাড়া করতে আবারো সন্ত্রাসী হামলা হবে পারে। এসব ঘটনায় তিনি থানায় অভিযোগ করেছেন। কিন্তু পুলিশি কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি।
থানার অফিসার ইনচার্য মো: তাজুল ইসলাম বলেন, বিধবা সড়ক ও জনপথের জায়গা দখল করে অবৈধ ভাবে বসবাস করছিলো। তাদের টাকা দেওয়ার পরে ও জায়গা ছড়েনি। অতিরিক্ত টাকার দাবিতে তারা ঘর থেকে নাম ছিলো না । এ ব্যপারে স্থানীয় ভাবে আপস করার চেষ্টা করা হচ্ছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: নাজমুল হুসেইন খাাঁন বলেন, সড়ক ও জনপথের অব্যাহৃত জায়গায় কোন বসতি থাকলে তা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ভাঙ্গার ্অধিকার রাখে। কোন ব্যক্তি মালিকের এ ধরনের বসতি উচ্ছেদের অধিকার নেই। এ ঘটনায় বসতি উচ্ছেদের অভিযোগে মামলা করতে হবে। থানায় মামলা না
নিলে তিনি ওই বিধবাকে সাহায্য করবেন বলে জানান।