Type to search

অভয়নগরে বাবার শ্রাদ্ধকর্মে মাথা ন্যাড়া না করায় সমাজচ্যুত হয়ে মানবেতর জীবনযাপন

অভয়নগর

অভয়নগরে বাবার শ্রাদ্ধকর্মে মাথা ন্যাড়া না করায় সমাজচ্যুত হয়ে মানবেতর জীবনযাপন

স্টাফ রিপোর্টার : পিতার শ্রাদ্ধকর্মে প্রচলিত প্রথা অনুযায়ী মাথামুন্ডন (ন্যাড়া মাথা) ও গলায় ধড়া না বাঁধায় গ্রামবাসী ক্ষিপ্ত হয়ে মাধ্যমিক স্তরের এক শিক্ষক পরিবারকে সমাজচ্যুত(এক ঘরে) করে রেখেছে। ওই পরিবারের সাথে যোগাযোগ রাখায় আরো চারটি পরিবারকে সমাজচ্যুত করা হয়েছে। যশোরের অভয়নগর উপজেলার ডুমুরতলা গ্রামে শিক্ষক প্রতাপ বৈরাগীর পিতা সুবোধ কুমার বৈরাগীর শ্রাদ্ধকর্মকে কেন্দ্র করে গত বুধবার থেকে (১৯ /৫/২১) ওই কয়েকটি পরিবার সমাজচ্যুত হয়ে অসহায় জীবনযাপন করছেন। সমাজপতিরা তাদের দোকান বন্ধ করে দিয়েছে, খেতে মজুর((কৃষাণ) নিচ্ছেনা কেউ, ডিপ টিউবয়েলে জল আনতে দেওয়া হচ্ছে না, বাচ্চাদের খেলতে আসতে বাঁধা দেওয়া হচ্ছে। ওই সব পরিবারকে এলাকা ছেড়ে অন্যত্র চলে যাওয়ার জন্যও চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতাপ বৈরাগী ওরফে কালিদাস বৈরাগীর পিতা সুবোধ কুমার বৈরাগী(৭৩) ছিলেন অবসর প্রাপ্ত প্রথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক। তিনি গত ৯ এপ্রিল রাতে বার্ধক্য জনিত কারনে মারা যান। পরের দিন ১০ এপ্রিল নওয়াপাড়া মহা শশ্মানে তার অন্ত্যেষ্টিক্রীয়া সম্পন্ন হয়। নম:শুদ্র সম্প্রদায়ের বিধান মতে অন্ত্যেষ্টিক্রীয়ার পর গত ১৯ এপ্রিল মৃতের বাড়িতে তার দুই ছেলে ও নিকটআত্মীয়রা মিলে শ্রাদ্ধকর্ম সম্পন্ন করেন।
গ্রামবাসীদের কয়েকজন অভিযোগ করে জানান, পিতার শ্রাদ্ধকর্ম সঠিক নিয়মে পালন করেনি ছেলেরা। শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠানে মাথা মুন্ডন করা (ন্যাড়া মাথা), পিতার মৃত্যুর পর দিন থেকে গলায় ধড়া বেঁধে রাখাসহ অনেক কর্ম তারা করেনি। তাদের অভিযোগ এলাকার একজন সমাজচ্যুত পৌরহিত ডেকে শ্রাদ্ধ পড়ানো হয়েছে। যা সনাতন ধর্ম বিরোধী কাজ। এ কারনে ওই পরিবারকে সমাজচ্যুত( এক ঘরে) করে রাখা হয়েছে। ওই পরিবারকে সমার্থন করার কারনে প্রতাপ বৈরাগীর কাকা প্রভাষক স্বপন বৈরাগী সহ আরো তিনটি পরিবারকে এক ঘরে করা হয়।
প্রতাপ বৈরাগী জানান, বাবার শ্রদ্ধকর্ম প্রচলিত নিয়মে না করায় আমার ঔষুধের দোকান বন্ধ করা হয়েছে, আমাদের সমার্থন করায় আমার কাকাতো ভাইদের কৃষাণ (মজুর) নিচ্ছেনা কেউ, আমাদেরকে ডিপ টিউবয়েলে জল আনতে দেওয়া হচ্ছে না, বাচ্চাদের খেলতে যেতে বাঁধা দেওয়া হচ্ছে। আমাদের এলাকা ছেড়ে অন্যত্র চলে যাওয়ার জন্যও চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে। তিনি আরো জানান,বাবার অন্ত্যেষ্টিক্রীয়ার দিন থেকে আমরা মতুয়াচার্য কর্ণধর রায়ের লেখা ‘মতুয়া দর্পণ’ শাস্ত্র অনুযায়ী হবিসান্ন গ্রহন,ক্ষীরজল প্রদান, প্রতিদিন সন্ধ্যা বেলায় বাবার উদ্দেশ্যে হরি সংগীত ও হরি নাম করা হতো। এগারোতম দিনে আমরা বাবার শ্রাদ্ধক্রীয়া সম্পন্ন করি। শ্রাদ্ধর দিন পরিবারের সকলে মিলে চোখের জলে বাবাকে স্মরণ করা হয়, বাবার ছবি নিয়ে পূজা ও অঞ্জলি প্রদান করি তার উদ্দেশ্যে নিবেদিত প্রসাদ বিতরন করি। আমার পরিবার ছাড়া অন্য যে সব পরিবারকে এক ঘরে করে রাখা হয়েছে তারা ওই দিন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
এ ব্যপারে জানতে চাইলে অভয়নগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: আমিনুর রহমান জানান, বিষয়টি আগে সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যানকে অবহিত করতে হবে। তিনি আরো জানান, এ ব্যাপারে আমি খোঁজ খবর নিয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করবো। অভয়নগর থানার অফিসার ইনচার্য মো: মনিরুজ্জামান বলেন, এ ব্যপারে আমাকে কেউ অভিযোগ করেনি। বিষয়টি আমি খোঁজ খবর নিয়ে আইনাগত ব্যবস্থা গ্রহন করবো।
প্রসঙ্গত, মতুয়াদর্শে বিশ^াসী ভোলা জেলার উত্তর চরফ্যাশান উপজেলার মতিলাল বাড়ৈ ২০০৫ সালে ১৫ অক্েক্টাবর মারা যাওয়ার পর তার পুত্ররা পিতার অছিয়ত অনুযায়ী মুখ অগ্নি না করে মৃত দেহ মতুয়াদর্শ মতে মাটিতে সমাহিত করে। পরে স্থানীয়রা জোর পূর্বক মৃত দেহ সেখান থেকে উঠিয়ে শশ্মানে দাহ কারাতে বাধ্য করেন। এ ঘটনায় মতুয়াদর্শীরা আদালতে মামলা করেন। মামলার শুনানি শেষে উচ্চ আদালত থেকে বাদির পক্ষে মতুয়া আদর্শের সমুদয় রীতি নীতি পালনের পক্ষে রায় প্রদান করে চিরস্থায়ী ডিগ্রি জারি করেন।

 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *