অভয়নগরে খাদ্যবান্ধব তালিকা থেকে এবার চলিশিয়া ইউনিয়নে থেকে ৬২ জন হতদরিদ্রের নাম বাদ দেওয়ার অভিযোগ

অভয়নগর প্রতিনিধি:
যশোরের অভয়নগর উপজেলায় চলিশিয়া ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ডে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির তালিকা থেকে ৬২ জন হতদরিদ্রের নাম বাদ দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। ওই ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য শাহিনুজ্জামান শাহিন আক্রোশমুলক ভাবে তাদের তালিকা থেকে বাদ দিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
ভুক্তভোগীরা পুণরায় তালিকাভুিক্তর দাবিতে সোমবার সকালে উপজেলা খাদ্যবান্ধব কমিটির সদস্য সচিব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের নিকট আবেদন করেছেন। তারা ওই দিন সকাল ১০টা থেকে বিকেল তিনটা পর্যন্ত উপজেলার খাদ্য কর্মকর্তার কার্যালয়ের সামনে ধর্ণা দিতে দেখা যায়। এসময় উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক দাপ্তরিক কাজে কার্যালয়ের বাইরে ছিলেন। পরে বিকেল চারটার দিকে তাঁরা উপজেলা খাদ্যবান্ধব কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। এর আগে একই ভাবে বাঘুটিয়া ইউনিয়নের ৫ নং ওয়ার্ডে ৪৩ জনকে তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়।
উপজেলার চলিশিয়া ইউনিয়নের সাভারপাড়া গ্রামের বাসিন্দা আঞ্জুমনোয়ারা বেগম(৬০) জানান সে দিন মজুরের কাজ করে সংসার চালায়। ভোট না দেওয়ার কারনে ওয়ার্ডের মেম্বার শাহিন আমার কার্ডটি বাতিল করে দিয়েছে। ওই একই গ্রামের বাসিন্দা এস এম শরিফুল ইসলাম জানান, আমি একজন বর্গচাসী। নিজের কোন জমিজমা নেই। আগের মেম্বার আমাকে একটি কার্ড দিয়েছিলো শাহিন আমাকে স্বচ্ছল দেখিয়ে কার্ড বাতিল করেছে। ভুলোপতা গ্রামের হতদরিদ্র গৃহিনী বনানী মল্লিক জানান আমার স্বামী একজন দিনমজুর অনেক কষ্টে আমাদের সংসার চলে। নতুন মেম্বার এসে আমার কার্ডটি বাতিল করেছে। এখন আমি একে বারে অসহায় হয়ে পড়েছি। নরসুন্দর তারাপদ শীলের স্ত্রী বেবি রাণি শীল জানান আমরা দিন আনি দিন খাই অনেক কষ্টে আমাদের সংসার চলে। সরকারি সহায়তা বাবদ আমরা ওই একটি মাত্র কার্ড পেয়েছিলাম। মেম্বার আমাদের সে কার্ডটি ও বাতিল করে দিলো।
খাদ্য অধিদপ্তর সূত্র জানায়, পল্লী অঞ্চলের দরিদ্র জনসাধারণকে স্বল্পমূল্যে খাদ্য সহায়তা দিতে ২০১৬-১৭ অর্থবছর থেকে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের আওতায় খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির মাধ্যমে ১০টাকা কেজি দরে চাল বিতরণ (বিক্রি) কর্মসূচি শুরু হয়। কর্মসূচি বাস্তবায়নে ইউনিয়ন পর্যায়ে বসবাসরত বিধবা, বয়স্ক, পরিবারের প্রধান নারী, নিম্ন আয়ের দুস্থ পরিবার প্রধানদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ১০ টাকা কেজি দরে চাল দেওয়ার জন্য একটি তালিকা রয়েছে। খাদ্যবান্ধব কর্মসূচিতে উপকারভোগীর তালিকা হতে মৃত, স্বচ্ছল, ভুঁয়া এবং এলাকা ছেড়ে চলে যাওয়া ব্যক্তিদের পরিবর্তে প্রকৃত হতদরিদ্রদেরকে অন্তুর্ভুক্ত করার নিয়ম রয়েছে। সূত্র জানায়, প্রতিবছরের মার্চ, এপ্রিল, সেপ্টেম্বর, অক্টোবর ও নভেম্বর মোট পাঁচ মাস খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি চলে। ১০ টাকা দরে ৩০ কেজি করে চাল বিক্রি করা হতো। গত বাজেটে এর দাম বাড়িয়ে ১৫ টাকা কেজি করা হয়। সে অনুসারে ভোক্তারা মাসের হিসাবে ৩০ কেজি চাল পাবেন প্রতি কেজি ১৫ টাকা দরে। গত ১ সেপ্টেম্বর থেকে সারাদেশে ১৫ টাকা কেজি দরে চাল বিক্রি শুরু হয়েছে।
সূত্র জানায়, খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির অনিয়ম দূরীকরণ, তালিকা সঠিকভাবে তৈরি ও ডুপ্লিকেশন রোধ করতে ডিজিটাল ডেটাবেজের উদ্যোগ নেওয়া হয়। গত ৩১ আগস্টের মধ্যে উপকারভোগীর তথ্য ডিজিটাল ডেটাবেজ তৈরির জন্য যাচাই শেষ করার কথা। পরে তা বাড়িয়ে ৩০ সেপ্টেম্বর করা হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ইউনিয়ন পরিষদ উপকারভোগী ব্যক্তিদের তালিকা তৈরি করে উপজেলা কমিটিতে পাঠায় এবং উপজেলা কমিটি তা অনুমোদন করে। উপজেলা কমিটি অন্য খাদ্যনিরাপত্তা কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্ত নন, এমন হতদরিদ্র প্রতি পরিবারের একজনের নামে ছবিসহ কার্ড ইস্যু করে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) উপজেলা খাদ্যবান্ধব কমিটির সভাপতি ও উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক সদস্যসচিব।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যান সানা আব্দুল মান্নান বলেন, নতুন নীতিমালা অনুযায়ী যাচাই বাছাই হয়েছে। ওই ওয়ার্ডের মেম্বার শাহিন কি ভাবে যাচাই বাছাই করেছে তা আমার জানা নেই।
সংশ্লিষ্ট ইউপি সদস্য শাহিনুজ্জহান শাহিন বলেন, যাচাই বাছাই করে নতুন তালিকা করা হয়েছে। নীতিমালা অনুযায়ি ওদের বাদ দেওয়া হয়েছে।
উপজেলা খাদ্যবান্ধব কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মেজবাহ উদ্দীন বলেন,‘অভিযোগ পেয়েছি। এ ব্যাপারে তদন্ত করা হবে। তদন্তে উপযুক্ত প্রমাণিত হলে তাঁদের তালিকায় বহাল করা হবে।