রংপুর উপনির্বাচনে বিএনপি’র প্রার্থী কে হচ্ছেন ??
অপরাজেয় বাংলা ডেক্স-জাতীয় পার্টির (জাপা) প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের মৃত্যুতে শূন্য হওয়া রংপুর-৩ আসনের অনুষ্ঠেয় উপনির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী কে হচ্ছেন- এ নিয়ে নানা আলোচনা হচ্ছে। কেন্দ্রীয় নাকি স্থানীয় পর্যায়ের নেতা প্রার্থী হলে দলের জন্য ভালো হবে, তা নিয়েও যুক্তিতর্ক চলছে।
এ অবস্থার মধ্যেই সম্প্রতি অনুষ্ঠিত স্থায়ী কমিটির বৈঠকে রংপুর-৩ উপনির্বাচনে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। পাশাপাশি প্রার্থী চূড়ান্ত করতে দায়িত্ব দেওয়া হয় দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে। তবে দলের একটি অংশ মনে করে, আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির প্রার্থী দেখেই বিএনপির প্রার্থী চূড়ান্ত করা উচিত হবে। যদি পরিবেশ-পরিস্থিতি দেখে মনে হয় নির্বাচন সুষ্ঠু হবে এবং আওয়ামী লীগ হেভিওয়েট প্রার্থী দিচ্ছে, বিএনপিকেও সে অনুযায়ী প্রার্থী চূড়ান্ত করতে হবে।
জাতীয় পার্টির ঘাঁটি বলে বিবেচিত হলেও বিএনপি নেতারা বলছেন, উত্তরাঞ্চলে নির্বাচনের মাঠে এরশাদ যেভাবে ফ্যাক্টর ছিলেন, তার মৃত্যুতে এখন আর সেই অবস্থা থাকবে না। এ হিসাবও রয়েছে বিএনপির। তাদের ধারণা এরশাদবিহীন জাতীয় পার্টিতে ভাঙাগড়া হতে পারে। এদিকেও তাদের নজর থাকবে। যদিও সম্প্রতি কুড়িগ্রামে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ (জিএম) কাদের বলেছেন, জাতীয় পার্টির মধ্যে প্রতিযোগিতা আছে, তবে কোনো দ্বন্দ্ব নেই। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বরচন্দ্র রায় এ বিষয়ে আমাদের সময়কে বলেন, সামনের সব নির্বাচনেই অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। এরশাদের আসনের উপনির্বাচনেও তারা অংশ নেবেন। এমন প্রার্থী দেওয়া হবে, যার দলীয় ও স্থানীয়ভাবে জনপ্রিয়তা আছে। কারণ, এখন দেশের বেশিরভাগ মানুষই বিএনপি ও ধানের শীষের পক্ষের লোক। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে রংপুরেও তা প্রমাণ পাওয়া যাবে।
গত ১৪ জুলাই এরশাদ মারা যাওয়ার পর তার আসন শূন্য হয়। এ আসনে নির্বাচন করার বিষয়ে বিএনপির মধ্যে আলোচনা শুরু হয়েছে। যদিও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর বিএনপি বলেছিল এই সরকারের অধীনে তারা কোনো নির্বাচনে অংশ নেবে না। এবারের উপজেলা নির্বাচনেও তারা দলীয়ভাবে কোনো প্রার্থী দেয়নি। তবে বগুড়া-৬ আসনে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের ছেড়ে দেওয়া আসনে বিএনপি অংশ নেয় এবং জিতে আসে।
রংপুরের এ আসনে ১৯৯১ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত জাতীয় পার্টিই জিতেছে। বিএনপি এটাও জানে এখানে জিততে হলে জাতীয় পার্টির সঙ্গে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। তবে এরশাদের শেষ সময় থেকে জাতীয় পার্টিতে অন্তর্দ্বন্দ্ব প্রকাশ পায়। দলে রওশনপন্থি ও জিএম কাদেরপন্থি হিসেবে দুটি ভাগ রয়েছে। গত ১৮ জুলাই কাদেরকে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হিসেবে ঘোষণা করা হয়। তখন বলা হয় রওশন এরশাদের আশীর্বাদ আছে। জিএম কাদেরের চেয়ারম্যান পদ নিয়ে আপত্তি জানিয়ে গত সপ্তাহে রওশন এরশাদ বিবৃতি দেন। রওশনের বিবৃতিকে বিশ্বাসযোগ্য ও গ্রহণযোগ্য নয় বলে জানান কাদের।
বিএনপির একটি সূত্র জানায়, জাতীয় পার্টির মধ্যে অন্তর্দ্বন্দ্ব চলছে সে সুযোগটা কাজে লাগাতে চায় তারা। রংপুরের উপনির্বাচনে জাতীয় পার্টি ঐক্যবদ্ধভাবে প্রার্থী নির্বাচন করতে পারে কিনা, সে বিষয়ে নজর রাখবে বিএনপি। অর্থাৎ জাতীয় পার্টির ভবিষ্যৎ রাজনীতি ও সরকারের মনোভাবের ওপর তাদের প্রার্থী নির্বাচন নির্ভর করবে।
এ অবস্থায় রংপুরের এ আসনে প্রার্থী হিসেবে স্থানীয় নেতাদের পাশাপাশি কেন্দ্রীয় নেতাদের কথাও ভাবছে বিএনপি। দলের দায়িত্বশীল এক নেতা জানান, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এ বিষয়ে খোঁজখবর নিচ্ছেন। স্থানীয় নেতাদের মধ্যে রংপুর মহানগর বিএনপির সভাপতি মোজাফফর হোসেন ও সহসভাপতি কাওছার জামান বাবলার মনোনয়ন নিয়ে ভাবনা রয়েছে দলে। এই আসনে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি জোটের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করেন রিটা রহমান। তারও আগ্রহ আছে। এসব নেতা কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে তাদের প্রার্থী হওয়ার আগ্রহ দেখিয়েছেন বলে একাধিক নেতা জানিয়েছেন। জানতে চাইলে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আমাদের সময়কে বলেন, এত বড় দলে যোগ্যপ্রার্থীদের তো কোনো কমতি নেই। ফলে তারা তো প্রার্থী হওয়ার আগ্রহ দেখাবেন এটাই স্বাভাবিক।
সিদ্ধান্ত যা-ই হোক, কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে অনেকের নামই আলোচনায় আছে। বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলের বাসিন্দা দলের রুহুল কবির রিজভী ও হাবিব-উন-নবী খান সোহেল আলোচনায় রয়েছেন। তবে তাদের রংপুর থেকে নির্বাচন করার আগ্রহ নেই বলে ঘনিষ্ঠজনরা জানিয়েছেন। সে ক্ষেত্রে আলোচনায় আছেন রংপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক লালমনিরহাটের আসাদুল হাবিব দুল্।ু জাতীয় পার্টির বিদ্রোহী প্রার্থীর দিকেও বিশেষ নজর রাখবে বিএনপি। জেতার মতো হলে জাপার বিদ্রোহীকেও শেষ পর্যন্ত বিএনপির প্রার্থী হিসেবে দেখা যেতে পারে।