Type to search

পাটকেলঘাটায় ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে কয়েক  কোটি  টাকার দূর্নীতির অভিযোগ

সাতক্ষীরা

পাটকেলঘাটায় ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে কয়েক  কোটি  টাকার দূর্নীতির অভিযোগ

পাটকেলঘাটা প্রতিনিধিঃ
সাতক্ষীরার তালা উপজেলার সরুলিয়া  ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল হাইয়ের বিরুদ্ধে কয়েক কোটি টাকার দূর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। এঘটনার প্রতিকার  চেয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছে ভুক্তভোগী সহ এলাকাবাসী । অভিযোগ সুত্রে জানা গেছে, তালা  উপজেলার সরুলিয়া ইউনিয়ের শাকদাহ মৌজার ১১১২, ১১২০, ২৫৫৭ খতিয়ানের ৬৮৭,  ৬৯৯ ৬৮৯, দাগের সম্পত্তির ৬।
 একর ১৬শতক জমি একসময় সাতক্ষীরা সড়ক জনপদ অধিকরন করে।পরবর্তীতে জমির মালিকরা  তাদের জমি ফেরত পেতে সাতক্ষীরা দেওয়ানী আদালতে একটি মামলা করেন। দেওয়ানী আদালতের মামলা নং -১১/২২।মামলাটি বর্তমানে বিচারাধীন রয়েছে বলে সুত্রে জানা গেছে। সুত্রে আরো জানা গেছে  কয়েক  মাস আগে ওই সম্পত্তির ওপর লেলুপ দৃষ্টি পড়ে দূর্নীতিবাজ ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল হাইয়ের। এরপর তার সহযোগী বাসুদেব বিশ্বাস ও গোটা কয়েক ইউপি সদস্যদের মাধ্যমে ভূয়া ভুমিহীন লোকজন সাজিয়ে প্রায় ৫০/৬০ জনের কাছ থেকে  জন প্রতি দুই থেকে তিন লক্ষটাকা হাতিয়ে নেয়।পরবর্তীতে তালা উপজেলার সাবেক ভূমি কমিশনার রুহুল কুদ্দুস ও তার দপ্তরের অসাধু কর্মকর্তা মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে ম্যানেজ করে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসকের কাছে জমি  বন্ধবোস্তের জন্য একটি প্রস্তাব পাঠানো হয় । প্রস্তাবটি দেখে  কিছুদিন আগে সাতক্ষীরার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সরোজমিনে আরিফুল হক  ঘটনাস্থল পরিদর্শনে এলে ওই সময় জমির দালাল বাসুদেবকে গন ধোলাই দেয় স্থানীয় জনতা। এই ঘটনার পরে চেয়ারম্যানের বিচার দাবীতে চলতি বছরের ৫মে শাকদাহ এলকার শত নারী পুরুষরা মহসড়কের পাশে  ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ঝাঁটা মিছিল করে। ঘটনাটি নিয়ে ওই সময় স্থানীয় পত্রপত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হলেও অদৃশ্য কারনে থেমে যায় সংক্লিষ্ট কৃর্তৃপক্ষের ব্যাবস্থা গ্রহন। এরপরে ঘটনার প্রতিকার না পেয়ে ওই পরিষদের ৫ ইউপি সদস্য শেখ আছির উদ্দীন নাসের সরদার, রোস্তম মোড়ল   মোহাম্মাদ আব্দুল হামিদ ও  নাজিম সানা বাদী হয়ে গত  ১১মে  সাতক্ষীরা  জেলা প্রশাসক, খুলনা বিভাগীয় কমিশনার,দূনীতি দমন কমিশন,স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয়সহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগে জানা গেছে,  সরুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ আব্দুল হাই ইউনিয়ন পরিষদের সকল কর্মকাণ্ড বিভিন্ন অনিয়ম,দূনীতির আখড়ার পরিনত করেছে। তিনি কোন রকম আইনের তোক্কা না করে জনগনের সেবার নামে নিজের পকেট ভর্তি  মেতে উঠেছে। যুগীপুকুরিয়া সোবহান হাজীর বাড়ীর সামনে রাস্তার মাটি দ্বারা সংস্কারের ৬০ হাজার টাকা কাজ না করে আত্নসাৎ।২০২২-২৩ অর্থ বছরে বড়বিলা শেখ পাড়া ঈদগাহ ময়দান গ্রামবাসী উদ্যোগে চাঁদা তুলে কাজ করেছে।কিন্তু একই জায়গায়২লক্ষ টাকা বরাদ্ধ দিয়ে আত্নসাৎ করেছেন তিনি। ওই এলাকার নুর গাজীর বাড়ীর হতে জাহাঙ্গীর মাষ্টারের বাড়ী পর্যন্ত মাটির ভরাট বাবদ ২ লক্ষ টাকায় ২৮ মাত্র হাজার টাকার কাজ করেছেন।পাটকেলঘাটা সিরাজ উদ্দীনের দোকানের মোড় হতে পাম্পের পাশ দিয়ে কলেজ মুখে ড্রেন খনন বাবদ ২ লক্ষ টাকা সর্বস্ব খুড়ে  আত্নসাৎ। রাজেন্দ্রপুর কার্তিক ঘোষের বাগী হতে নির্মল ঘোষের বাড়ী অভিমুখে ইদের সোলিং বাবদ ১ লক্ষ টাকা কাজ না করে সমুদয়  টাকা উত্তোলন।পাটকেলঘাটা থানার নীচু জায়গা মাটি দ্বারা ভরাটের ১ লক্ষ টাকা আত্নসাৎ। পাটকেলঘাটা নীলিমা ইকো পার্কের রক্ষনা বেক্ষন প্রকল্প বাবদ ১লক্ষ চল্লিশ হাজার টাকা আত্নসাৎ।২০২২-২৩ অর্থ বছরের এডিপির প্রকল্পের আওতায়  বড়বিলা রবি গাজীর বাড়ীর মোড় হইতে  চেয়ারম্যান শেখ আব্দুল হাই বাড়ীর অভিমুখে  ইদের সোলিং ২ লক্ষ টাকা  আত্মসাৎ। অভিযোগে আরো বলা হয়েছে প্রতিবছর  ট্রেড লাইসেন্স বিক্রয় বাবদ পনের লক্ষ টাকা আয়। কিন্তু সরকারী কোষাগার ও ব্যাংকে জমা না দিয়ে ভুয়া প্রকল্প দেখিয়ে সমুদয় টাকা আত্নসাৎ করেছেন ওই ইউপি চেয়ারম্যান।এছাড়া গত দুই বছর ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে বাড়ি বাড়ি যেয়ে  ট্যাক্সের আদায় করে কাজ না করে লক্ষ লক্ষ টাকা হজম করেছেন তিনি। ইউনিয়ন পরিষদের জন্মনিবন্ধন পরিষদের ভিতরে না করে বাইরে মাসুদ নামক কম্পিউটার স্থানে জন প্রতি ৩০০/৪০০ টাকা নিয়ে থাকে যাহা সরকারী নীতিমালার বহিভূত। বড়কাশিপুর পান্তাপাল খাল পূর্নখনন প্রকল্প বাবদ ৩ লক্ষ টাকা বরাদ্ধের ৭০ হাজার টাকা করে করে। একই জায়গায় পান্তাপাড় খালের উপর কালভার্ট নির্মান ১লক্ষ ৫৯ হাজার টাকা কাজ না করে পুরো টাকা হজম করেছেন তিনি ভিজিএফ চাল বিতরনে ইউপি সদস্যদের  স্বাক্ষর না নিয়ে গোটাকয়েক মানুষকে  কার্ডের চাল দিয়ে  বাকী চাল আত্নসাৎ করে আসছেন তিনি । ইউপি সদস্য রোস্তম আলী মোড়ল বলেন,চেয়ারম্যান শেখ আব্দুল হাই ভুয়া প্রকল্প দিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা আত্নসাৎ করেছে।জেসিএস মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ১লক্ষ ২৭ হাজার টাকা প্রকল্প দিয়ে মাত্র অল্প কিছু টাকা দিয়ে কোন রকম দায়সারা করেছেন। ইউপি সদস্য  নাসের সরদার বলেন চেয়ারম্যান শেখ আব্দুল হাই  আমার  একটি প্রকল্পের স্বাক্ষর জাল করে সমুদয় টাকা উত্তোলন করেছে।বড়বিলা শেখ পাড়া ঈদগাহ কমিটির সভাপতি আলী হোসেন বলেন, আমরা গ্রামবাসী উদ্যোগে চাদা তুলে ঈদগাহ কাজ করি। কিন্তু জানতে পারলাম ২ লক্ষ টাকা প্রকল্প দেওয়া হয়েছে।চেয়ারম্যান মাত্র ৭৯ হাজার টাকা দেয়।সরুলিয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম,  হাকিম,  সিরাজুল ইসলাম, শাকদাহ এলাকার কবির, মাহামুদুল হাসান, ব্যাবসায়ী কবির হোসেন  সহ অনকে জানান, আব্দুল হাই  জাল কম্পিউটারের সার্টিফিকেট তৈরি করে পাটকেলঘাটা আদর্শ বহুমূখী বিদ্যালয়ে চাকুরী করে আসছে দীর্ঘদিন। বর্তমানে সে ক্ষমতার দাপটে প্রধান শিক্ষক হিসাবে কর্মরত রয়েছে ওই প্রতিষ্ঠানে । এছাড়া সরকারী দুই প্রতিষ্টানের বেতন আত্মসাৎ করার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। কয়েক বছর আগে সে ২বিঘার জমির মালিক ছিল আজ সে চেয়ারম্যান হওয়ার পরে  কয়েক কোটি টাকা সম্পত্তির মালিক বনে গেছে। তারা আরো জানান, আব্দুল হাই
চেয়ারম্যান হওয়ার পরে কয়েক মাস পর  পাটকেলঘাটা বাজারের কালিবাড়ি এলাকায় ৩ তলা মার্কেট নির্মান করেছেন।এছাড়া পাটকেলঘাটা পল্লী বিদ্যুৎ সদর দপ্তরের পিছেন রাজেন্দ্রপুর মৌজায় প্রায় অর্ধকোটি টাকা দিয়ে একতলা বিলাস বহুল বাড়ি কিনেছেন। তার স্ত্রীর নামে সাতক্ষীরা শহর সহ পাটকেলঘাটা এলাকায় কয়েক শতক জমি রয়েছে।এছাড়া কিছুদিন আগে  পাটকেলঘাটা বাজারে ৪০লক্ষাধিক টাকা দিয়ে কালিবাড়ী রোডে দোকান ক্রয় করেছেন।
সবশেষে এই দূর্নীতিবাজ ইউপি চেয়ারম্যানকে আইনের আওয়তায় এনে দৃষ্টান্তমূলক মুলক শাস্তির জন্য সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক সহ দূর্নীতি দমন কমিশনের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন তারা।
অভিযোগ অস্বীকার করে ওই ইউপি চেয়ারম্যান শেখ  আব্দুল হাই জানান,শাকদাহ এলাকায় যারা   সরকারী জায়গায় অবৈধ জায়গায় দখল আমি তাদের  বিরুদ্ধে  ব্যাবস্তা নেওয়ার জন্য জেলা প্রশাসককে বলেছি। তাতে লোকজন ক্ষিপ্ত হয়ে আমার মিথ্যে  বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়েছে। আমি কিছু লোককে  ভূমিহীন সনদপত্র দিয়েছি মাত্র  তা ছাড়া কারোর কাছ থেকে একটি টাকা আমি ঘুষ গ্রহন করিনি বলে দাবী করেন তিনি। বাড়ি ও সম্পত্তির বিষয়ে প্রস্ন ছুড়ে দিলে তিনি জানান,আমি ২০০৮সালে কালি বাড়ি এলকায় বাড়ি নির্মান করেছি। কিছুদিন আগে  মেয়ের জামাইয়ের অর্থে বাড়ি সংষ্কার করেছি   এবং তিল তিল করা জমানো টাকা দিয়ে নতুন বাড়িটা কিনেছি। বর্তমানে  আমি এখন ৪০ লক্ষটাকা ব্যাংক  ঋন রয়েছি।
এবিষয়ে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হুমায়ন কবিরে সাথে কথা বলার জন্য বার বার চেষ্টা করলে তিনি মুঠো ফোনটি রিসিভ করেন নি।পরবর্তীতে তার মুঠো  ফোনে খুদে বার্তা পাঠিয়ে তার সাড়া মেলেনি।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *