টিভি প্রতিনিধি নিয়োগে ৫ লাখ পর্যন্ত নিতেন হেলেনা

অপরাজেয়বাংলা ডেক্স: ২০১৮ সালে হংকং থেকে ফ্রিকোয়েন্সি বরাদ্দ করে জয়যাত্রা টিভি প্রচারের কার্যক্রম শুরু করেন হেলেনা জাহাঙ্গীর। এজন্য প্রতি মাসে ৬ লাখ টাকা হংকং পাঠাতেন তিনি।
হেলেনা জাহাঙ্গীরকে গ্রেফতারের পর তার কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্য ও গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে তার অন্যতম দুই সহযোগী হাজেরা খাতুন (৪০) ও সানাউল্ল্যাহ নূরীকে (৪৭) আটক করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব-৪)।
মঙ্গলবার (৩ আগস্ট) ভোরে র্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র্যাব-৪ এর যৌথ অভিযানে রাজধানীর গাবতলী এলাকা থেকে তাদের আটক করা হয়।
হাজেরা খাতুন জয়যাত্রা ফাউন্ডেশনের ডিজিএম ও জয়যাত্রা টিভির জিএম (অ্যাডমিন) হিসেবে দায়িত্বরত ছিলেন। আর সানাউল্ল্যাহ নূরী জয়যাত্রা টিভির প্রতিনিধি সমন্বয়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করতেন।
মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
আটক হাজেরাকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে তিনি বলেন, ২০১৮ সাল থেকে হংকং থেকে ফ্রিকোয়েন্সি বরাদ্দ করে জয়যাত্রা টিভি চালু করেন। এজন্য হংকংকে প্রতি মাসে প্রায় ছয় লাখ টাকা পরিশোধ করতে হয়। অথচ হংকং থেকে বরাদ্দ ফ্রিকোয়েন্সির মাধ্যমে বাংলাদেশে চ্যানেল সম্প্রচারের কোনো বৈধ অনুমোদন নেই।
এরপর জয়যাত্রা টিভি সম্প্রচারে তার প্রতিনিধির মাধ্যমে দেশের ক্যাবল ব্যবসায়ীদের কাছে রিসিভার সরবরাহ করা হয়। প্রতিনিধিরা ক্যাবল ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে সম্প্রচার নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হলে চাকরিচ্যুতসহ অন্য প্রতিনিধি নিয়োগের মাধ্যমে তাদের হেনস্থা করা হতো।
দেশের প্রায় ৫০টি জেলায় জয়যাত্রা সম্প্রচারিত হতো উল্লেখ করে তিনি বলেন, জেলা প্রতিনিধি নিয়োগে ৩০ থেকে ৫০ হাজার টাকা, উপজেলা প্রতিনিধি নিয়োগে ১০ থেকে ২০ হাজার টাকা এককালীন দিতে হয়। এছাড়া প্রতিনিধিদের কাছ থেকে প্রতি মাসে ২ থেকে ৫ হাজার টাকা সংগ্রহ করা হয়।
জয়যাত্রা টিভি বিশ্বের প্রায় ৩৪টি দেশে সম্প্রচারিত হয়। যেখানে দেশের গুরুত্ব বিবেচনায় প্রতিনিধি নিয়োগে ১ থেকে ৫ লাখ টাকা নেওয়া হতো। এছাড়া, তাদের কাছ থেকে মাসিক ২০ থেকে ৫০ টাকা নেওয়া হতো।
জয়যাত্রা ফাউন্ডেশনের বিষয়ে তিনি জানান, ডোনার, জেনারেল মেম্বার, লাইফ টাইম মেম্বার ইত্যাদি ক্যাটাগরিতে অর্থ সংগ্রহ করা হয়। এ সংগঠনের প্রায় ২০০ জন সদস্য রয়েছে। যাদের কাছ থেকে সদস্য পদ বাবদ বিশ হাজার থেকে দুই লাখ টাকা সংগ্রহ করা হয়েছে। যার সামান্যই মানবিক কাজে ব্যবহার করে জয়যাত্রা টিভি ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক প্রচারণা চালানো হতো। অবশিষ্ট অর্থ সন্তানদের নামে সঞ্চয় করেন হেলেনা।
আটক সানাউল্ল্যা নূরী জয়যাত্রা টিভির প্রতিনিধি সমন্বয়ক ছিলেন। তিনি হেলেনা জাহাঙ্গীরের নির্দেশনায় প্রতিনিধিদের সমন্বয় করতেন। প্রতিনিধিদের কেউ মাসিক টাকা দিতে ব্যর্থ হলে বা গড়িমসি করলে তিনি ভয়ভীতি দেখাতেন।
গাজীপুর এলাকায় তার চাঁদাবাজি অভিযোগ রয়েছে। গাজীপুর গার্মেন্টস সেক্টরে ব্যাপক চাঁদাবাজি করে তার একটি অংশও জয়যাত্রা টিভিতে দিতেন। এছাড়া তিনি গাজীপুর ও বিভিন্ন এলাকার অনুমোদনহীন জয়যাত্রা টিভির সম্প্রচার নিশ্চিত করতেন।
এক প্রশ্নের জবাবে র্যাবের এ কর্মকর্তা বলেন, প্রতি মাসে চ্যানেল পরিচালনার টাকা হংকংয়ে পাঠানোর ভাউচার পেয়েছি। এছাড়া হেলেনার জমি-ফ্ল্যাট সংক্রান্ত তার তথ্য ও হাজেরার দেওয়া তথ্যে গরমিল পাওয়া গেছে। অর্থের বিষয়গুলো সিআইডি তদন্ত করবে এবং দুদককে অবহিত করা হবে।
অনুনোমদিত আইপির বিষয়ে তিনি বলেন, এগুলো টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন ও তথ্য মন্ত্রণালয় দেখছে। তারা যদি মনে করে এসব বন্ধ করতে আমাদের সহায়তা নেবে, তাহলে আমরা ব্যবস্থা নেবো। এছাড়া যাচাই-বাছাই করে তথ্য আমরা বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনকে (বিটিআরসি) দিচ্ছি। যারা প্রতারণার মাধ্যমে মিথ্যাচার ও রাষ্ট্রবিরোধী বক্তব্য দিচ্ছে, র্যাব তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় অভিযান চালিয়েছে। র্যাবের এ অভিযান অব্যাহত থাকবে।সূত্র, বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম