কৃষক ও ক্ষেতমজুর সংগ্রাম পরিষদ
কেন্দ্রীয় পরিচালনা পরিষদ
[বাংলাদেশ কৃষক সমিতি; বাংলাদেশ ক্ষেতমজুর সমিতি; সমাজতান্ত্রিক ক্ষেতমজুর ও কৃষক ফ্রন্ট; বাংলাদেশ খেতমজুর ইউনিয়ন; বিপ্লবী কৃষক সংহতি; জাতীয় কৃষক-ক্ষেতমজুর সমিতি; বাংলাদেশ ক্ষেতমজুর ও কৃষক সংগঠন;
সমাজতান্ত্রিক ক্ষেতমজুর ও কৃষক ফ্রন্ট; বাংলাদেশ কৃষক ফোরাম]
অস্থায়ী কার্যালয় : মুক্তিভবন, ২ কমরেড মণি সিংহ সড়ক, পুরানা পল্টন ঢাকা-১০০০।
মোবাইল : ০১৭২০১৫৩৬৫০, ০১৭১২৪০৪৩৩৮, ০১৭১১৫৩৭৩৯৯
সূত্র : তাং- ২৯/০১/২০২৫
স্মারকলিপি
বরাবর
উপদেষ্টা
কৃষি মন্ত্রণালয়
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
বাংলাদেশ সচিবালয়, ঢাকা।
মাধ্যম : জেলা প্রশাসক, যশোর।
বিষয় : ন্যায্যমূল্যে সময়মতো ভেজালমুক্ত সার বীজ কীটনাশকসহ কৃষি উপকরণ সরবরাহ, ফসলের লাভজনক দাম, স্বল্পমূল্যে রেশন ও কাজের নিশ্চয়তাসহ কৃষক-ক্ষেতমজুরদের দাবি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে স্মারকলিপি প্রদান।
জনাব,
শুভেচ্ছা নিবেন।
দেশের জনসংখ্যার সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ কৃষক ও ক্ষেতমজুরসহ গ্রামীণ শ্রমজীবী মানুষ। স্বাধীনতাকামী সকল মানুষের সাথে কৃষক ও গ্রামীণ মজুররা মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়ে রক্তের বিনিময়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা এনেছে। স্বাধীনতার ৫৩ বছরেও কৃষক তার ফসলের লাভজনক মূল্য পাচ্ছে না। ক্ষেতমজুরদের সারা বছর কাজ, জীবন ধারণের মতো মজুরি ও খাদ্যের নিশ্চয়তা নেই। শোষণের যাঁতাকলে পিষ্ট হয়ে কৃষক-ক্ষেতমজুর এখন নিঃস্ব। কৃষি ঋণ, সার্টিফিকেট মামলা, এনজিও ঋণের কিস্তি, মহাজনী ঋণের সুদের কারবার কৃষক-ক্ষেতমজুরদের জীবনকে আরও দুর্বিষহ করে তুলেছে। সব মিলিয়ে শোষণ, জুলুম, অত্যাচারের শৃঙ্খলে বাঁধা পড়ে আছে কৃষক ও ক্ষেতমজুরসহ গ্রামীণ শ্রমজীবী মানুষের জীবন। কৃষকের ফসল সংরক্ষণের জন্য নেই পর্যাপ্ত শস্য গুদাম ও হিমাগার। ইউনিয়ন পর্যায়ে সরকারি ক্রয় কেন্দ্র না থাকায় কৃষক লাভজনক দাম না পেয়ে সর্বস্বান্ত হচ্ছে। লাভবান হচ্ছে চাতাল মালিক, মধ্যস্বত্বভোগী ও সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীরা। ভ‚মি অফিস, তহসিল অফিস, সেটেলমেন্ট, পল্লী বিদ্যুৎ, সাব রেজিষ্ট্রি অফিস, কৃষি ব্যাংক এবং ভিজিএফ, ভিজিডিসহ গ্রামীণ প্রকল্পসমূহে দুর্নীতি, দলীয়করণ, অনিয়ম, লুটপাট, হয়রানি গ্রামীণ মানুষের জীবনকে করে তুলেছে অসহনীয়। সার, বীজ, কীটনাশক, ডিজেল-বিদ্যুৎ, সেচসহ কৃষি উপকরণের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে নির্ধারিত দামের চেয়ে কৃষকদের কাছ থেকে অনেক বেশি দামে বিক্রি করছে ডিলার ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট। ভেজাল বীজ, সার, কীটনাশকেও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কৃষক।
কৃষকের জন্য পর্যাপ্ত ভর্তুকি নেই। নেই ক্ষেতজুরসহ গ্রামীণ শ্রমজীবীদের জন্য পর্যাপ্ত বরাদ্দ। অপ্রতুল কৃষি ভর্তুকি, গ্রামীণ বরাদ্দ লুট করে নিয়ে যায় টাউট চেয়ারম্যান-মেম্বার, সরকারি দলের মাস্তান এবং সংশ্লিষ্ট সরকারি অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। একদিকে গরিব মানুষের বরাদ্দ লুট হয়ে যায়, অন্যদিকে দেশের কোটি কোটি টাকা বিদেশে পাচার করে লুটপাটকারীরা।
জুলাই-আগস্ট ২০২৪-এ গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে গণবিরোধী ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন হয়। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন হওয়ার পর এদেশের কৃষক-ক্ষেতমজুর-গ্রামীণ শ্রমজীবী জনগোষ্ঠী তাদের অবস্থার কিছুটা হলেও উন্নতি হবে বলে আশা করেছিল। কিন্তু গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর অবস্থার কোনো ইতিবাচক পরিবর্তন হয় নাই। এই অনিশ্চিত জীবন থেকে কৃষক-ক্ষেতমজুরসহ গ্রামীণ জনগণ মুক্তি চায়।
দেশের মোট শ্রমশক্তির মধ্যে ৪৫.৪% কৃষিতে নিয়োজিত থেকে এদেশের অর্থনীতিকে টিকিয়ে রাখছে কৃষক-ক্ষেতমজুর শ্রমজীবী জনগোষ্ঠী। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দেশের বিভিন্ন খাতে সংস্কারের লক্ষ্যে ১১টি ‘সংস্কার কমিশন’ গঠন করলেও একক খাত হিসেবে জাতীয় অর্থনীতিতে বেশি ভ‚মিকা রাখা এই বিশাল জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে ‘কৃষি সংস্কার কমিশন’ গঠন করেনি। ফলে কৃষক-ক্ষেতমজুরসহ গ্রামীণ শ্রমজীবী জনগোষ্ঠী চরম হতাশ। এ বিশাল জনগোষ্ঠীকে উপেক্ষা করে কোনো সংস্কারই বাস্তবে সফল হবে না।
দেশের অর্থনীতির মূল চালিকা শক্তি এদেশের কৃষক-ক্ষেতমজুর গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর জীবন-জীবিকা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে আপনার মাধ্যমে নি¤েœাক্ত আশু দাবিসমূহ বাস্তবায়ন করার জন্য সরকারের প্রতি দাবি জানাচ্ছি।
বিএডিসিকে পুর্ণাঙ্গ রূপে সচল করে ন্যায্যমূল্যে চাহিদা অনুযায়ী সময়মতো নির্ভেজাল সার, বীজ, কীটনাশক ও সেচের পানি দিতে হবে। সার, বীজ, কীটনাশক, সেচের পানির অতিরিক্ত দাম নেয়া বন্ধ কর ;
ধান, আলু, সব্জিসহ ফসলের লাভজনক দাম নিশ্চিত কর। বাজার সিন্ডিকেট ভেঙে উৎপাদক ও ভোক্তা সমবায় বাজার চালু কর। সরকারি উদ্যোগে আলুসহ সব্জি সংরক্ষণের জন্য পর্যাপ্ত কোল্ড স্টোরেজ নির্মাণ কর। কোল্ড স্টোরেজের ভাড়া কমাও ;
ক্ষেতমজুরদের জন্য বছরে ন্যূনতম ১২০ দিনের কর্মসৃজন প্রকল্পসহ পর্যাপ্ত টিআর-কাবিখা চালু কর। নিজ এলাকা থেকে অন্য এলাকায় কাজ করতে যাওয়া (পরিযায়ী) ক্ষেতমজুরসহ সকল শ্রমজীবীর নিরাপদ ও স্বাস্থ্যসম্মত থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে ;
কৃষক, ক্ষেতমজুরসহ গ্রাম-শহরের শ্রমজীবী মানুষের জন্য স্বল্পমূল্যে রেশন ও নায্যমূল্যের দোকান চালু কর। সকল বয়স্ক-বিধবা-প্রতিবন্ধীদের মাসিক ন্যূনতম ১০ হাজার টাকা ভাতা দিতে হবে ;
ভ‚মিহীন ও বর্গা কৃষকসহ প্রকৃত উৎপাদক কৃষকদের কৃষি কার্ড দাও ;
চালসহ নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের দাম কমাও, বর্ধিত ভ্যাট-ট্যাক্স প্রত্যাহার কর ;
এনজিও এবং মহাজনী সুদী কারবার আইন করে নিষিদ্ধ কর। স্বল্প সুদে সহজ শর্তে কৃষক-ক্ষেতমজুরদের জন্য ব্যাংক ঋণ চালু কর। কৃষকদের সার্টিফিকেট মামলা বাতিল কর ;
উপরোক্ত দাবিতে আজ ২৯ জানুয়ারি ২০২৫ ‘কৃষক-ক্ষেতমজুর সংগ্রাম পরিষদ’-এর উদ্যোগে সারাদেশে জেলায় জেলায় বিক্ষোভ কর্মসূচি পালিত হচ্ছে। অবিলম্বে কৃষক-ক্ষেতমজুর গ্রামীণ শ্রমজীবী জনগোষ্ঠীর আশু দাবিসমূহ বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করার জন্য আপনার কাছে স্মারকলিপি পেশ করছি।
ধন্যবাদসহ
‘কৃষক-ক্ষেতমজুর সংগ্রাম পরিষদ’-এর পক্ষে
বিশেষ দ্রঃ ১ টার সময় স্মারক্ষ লিপি গ্রহন করেন জেলা প্রশাসক জনাব আজাহারুল ইসলাম । স্মারক লিপি প্রদান কালে উপস্থিত ছিলেন মিজানুর রহমান ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জাতীয় কৃষক ক্ষেত মজুর সমিতি,যশোর,জিল্লুর রহমান ভিটু সাধারণ সম্পাদক জাতীয় কৃষক ক্ষেত মজুর সমিতি,যশোর,তসলিম উর রহমান সহ- সাধারণ সম্পাদক জাতীয় কৃষক ক্ষেত মজুর সমিতি,যশোর,এ্যাড. আমিনুর রহমান হিরু, সহ-সভাপতি বাংলাদেশ কৃষক সমিতি,গোলাম মোস্তফা মন্টু সহ-সভাপতি বাংলাদেশ কৃষক সমিতি,শাহাজান আলী আহŸায়ক সমাজতান্ত্রিক ক্ষেতমজুর ও কৃষক ফ্রন্ট যশোর ,দীলীপ ঘোষ, আক্কাস আলী ,সদস্য সমাজতান্ত্রিক ক্ষেতমজুর ও কৃষক ফ্রন্ট যশোর,।