নড়াইলে স্বামীকে খুন করে চৌকির নিচে মাটিচাপা
স্টাফ রিপোর্টার পারিরারিক কলহের জেরে স্বামী শিমুল হোসেন গাজীকে (৩৪) খুন করে মাটিচাপা দেন স্ত্রী পলি। তার আগে খাবারের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে অচেতন করে হত্যা করেন তিনি। ঘটনার এক সপ্তাহ পর পুলিশ অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করে। পলি স্বামী হত্যায় আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছেন। ঘটনাটি নড়াইল সদর উপজেলার শেখহাটি ইউপির কাইজদাহ গ্রামের।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, যশোরের অভয়নগর থানার শ্রীধরপুর গ্রামের আব্দুল্লাহ গাজীর ছেলে শিমুল হোসেন গাজী ৫ বছর আগে বিধবা পলি খাতুনকে বিয়ে করেন। বিয়ের পর পলি খাতুন ২ বছর আগে নড়াইল সদরের শেখহাটি ইউনিয়নের কাইচদাহ গ্রামে জমি কিনে বাড়িঘর তৈরি করেন এবং তার ১ম স্বামীর দুই ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে বসবাস করতেন। দ্বিতীয় স্বামী শিমুল হোসেন বেশিভাগ সময় ২য় স্ত্রী পলি খাতুনের বাড়িতে থাকতেন। মাঝেমধ্যে শিমুলের নিজবাড়ি পার্শ্ববর্তী অভয়ননগর থানার শ্রীধরপুর গ্রামে গিয়ে ২-১ থাকার পর পুনরায় ২য় স্ত্রী পলি খাতুনের কাছে চলে আসতেন।
গত ৩১ আগস্ট বিকেল ৪টার দিকে শিমুল শ্রীধরপুরে তাদের বাড়িতে যান এবং সংসারের বাজারের জন্য ৫০০ টাকা দিয়ে পুনরায় চলে যান ২য় স্ত্রীর কাছে। গত ৬ সেপ্টেম্বর রাত পৌনে ৮টার দিকে শিমুলের মোবাইল থেকে তার ছেলে রায়হানের (১৪) মোবাইলে একটি মেসেজ আসে যে, তাকে (শিমুল) কে বা কারা ধরে নিয়ে গেছে। কোথাও আটকে রেখেছে, তার ফোন ও টাকা কেড়ে নিয়েছে। ওই মেসেজ পাওয়ার পরে শিমুলের ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
ম্যাসেজ পাওয়ার পর শিমুলের বড় ভাই ইমরুল ইসলাম পলি খাতুনের কাছে ফোন করে তার ভাই শিমুলের বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে তিনি জানান, গত ২ সেপ্টেম্বর রাত ১০টার দিকে শিমুল তাকে (পলি) মারধর করে বাড়ি থেকে চলে গেছে। এরপর থেকে তিনি আর কিছুই জানেন না।
এদিকে, বড় ভাই ইমরুল ইসলাম তার ভাই শিমুলকে খুঁজে না পেয়ে গত ৯ সেপ্টেম্বর পলি খাতুনের বাড়িতে এসে তার ভাই কোথায় আছে জানতে চাইলে পলি খাতুন উত্তেজিত হয়ে পড়েন।
বিষয়টি শিমুলের ভাই ইমরুল নড়াইল সদরের শেখহাটি পুলিশ ক্যাম্পে জানান। পুলিশ পলি খাতুনকে ক্যাম্পে ডেকে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে ভয়ে এলোমেলো কথাবার্তা বলেন। এতে পুলিশের সন্দেহ হলে পলি খাতুনের বাড়িতে গিয়ে বাড়িঘরসহ আশপাশে খোঁজাখুঁজি করে। এক পর্যায়ে বাড়ির পশ্চিম দিকের একটি ঘরের মধ্যে কাঠের চৌকির নিচে মাটি খোড়ার চিহ্ন ও মাটি একটু উঁচু দেখতে পায় পুলিশ। এছাড়া সেখানে বালুভর্তি সিমেন্টের বস্তা দেখা যায়। বিষয়টি তাদের কাছে সন্দেহের সৃষ্টি হলে পুলিশ ও স্বজনদের উপস্থিতিতে মাটি খোড়া হয়। পরে সেখান থেকে শিমুলের অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করা হয়।
নড়াইল সদর থানার ওসি মো. সাইফুল ইসলাম জানান, লাশ উদ্ধারের পর নড়াইল সদর হাসপাতালে ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়। এ ঘটনায় সন্দেহমূলক পলি খাতুনকে আটকের পর জিজ্ঞাসাবাদে স্বামীকে হত্যার কথা স্বীকার করেন। এ বিষয়ে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছেন।
জবানবন্দীতে পলি খাতুন জানান, পারিবারিক বিরোধের জের ধরে তার স্বামীকে ভাতের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ খাওয়ান। পরে অচেতন অবস্থায় ৩ সেপ্টেম্বর রাত ২টার দিকে পলি খাতুন তার স্বামীর গলায় রশি পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন এবং মাটিচাপা দেন।