Type to search

মুক্তিযোদ্ধার ভাতা আত্মসাৎকারী ঝিকরগাছার বিল্লালের পদ স্থগিত : ২৫০জনের টিউবওয়েলের অর্থ আত্মসাৎ

চৌগাছা

মুক্তিযোদ্ধার ভাতা আত্মসাৎকারী ঝিকরগাছার বিল্লালের পদ স্থগিত : ২৫০জনের টিউবওয়েলের অর্থ আত্মসাৎ

আফজাল হোসেন চাঁদ, ঝিকরগাছা :

শোরের ঝিকরগাছা উপজেলার পানিসারা ইউনিয়নের কুলিয়া গ্রামের মৃত মোরশেদ আলীর স্ত্রী আমেনা বেগম ও তার ছেলে বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সন্তান সংসদের ঝিকরগাছা উপজেলা কমিটির সভাপতি কথিত ডাঃ বিল্লাল হোসেনকে নিয়ে বিভিন্ন অনলাইন ও প্রিন্ট মিডিয়াতে সংবাদ প্রকাশ হয়। যার জের ধরে গত রবিবার (০৪ ডিসেম্বর) রাতে বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সন্তান সংসদের কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিল’র চেয়ারম্যান মোঃ সোলাইমান মিয়া ও মহাসচিব শফিকুল ইসলাম বাবুুর অনুমতিক্রমে যশোর জেলার আহবায়ক কমিটির আহবায়ক কাজী টিটো ও সদস্য সচিব শাফি সমুদ্র এর স্বাক্ষরিত একটি সাংগঠনিক আদেশে ঝিকরগাছা উপজেলা কমান্ড কাউন্সিলের সভাপতি ডাঃ বিল্লাল হোসেনের পদ সাময়িক স্থগিত করেছেন। এছাড়াও আগামী ৩০দিনের মধ্যে ডাঃ বিল্লাল হোসেন কে তার স্বপক্ষে প্রমানাদি সংগ্রহ করে জেলা কমান্ড কাউন্সিলকে অবহতি করার নির্দেশ দেন। মুক্তিযোদ্ধার ভাতা আত্মসাৎকারী ও পদ সাময়িক স্থগিত হওয়া সভাপতি কথিত ডাঃ বিল্লাল হোসেনের বিরুদ্ধে এবার টিউবওয়েল দেওয়ার নামে প্রায় ২৫০জনের নিকট থেকে অর্থ আত্মসাৎ এর অভিযোগ উঠেছে।
তথ্য অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০২১ সালের শেষের দিকে অভিযুক্ত বিল্লাল হোসেন এলাকাবাসীদেরকে বলে, সরকার মুক্তিযোদ্ধা সন্তান সংসদের মাধ্যমে গ্রামে গ্রামে আর্সেনিক মুক্ত গভীর নলকুপ স্হাপন করবে। সে ঝিকরগাছা উপজেলার সভাপতি হিসাবে একশত টিউবওয়েল বরাদ্দ পেয়েছে। প্রতিটি টিউবওয়েল এর জন্য ২হাজার ৫শত টাকা হারে জমা দিতে হবে। আর নামমাত্র টাকায় আর্সেনিক মুক্ত টিউবওয়েল পাওয়ার আশায় আশেপাশের বিভিন্ন এলাকার মানুষ আগ্রহ প্রকাশ করে। আর এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে সুচতুর সভাপতি নামধারী বিল্লাল হোসেন প্রায় ২৫০জন লোকের নিকট থেকে প্রায় ৬ লক্ষ ২৫ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। টিউবওয়েল গুলো ৩মাসের মধ্যে স্থাপনের কথা থাকলেও বছর পার হয়ে গেলেও আজ অবধি কেউ একটিও টিউবওয়েলও পায়নি। কেউ সেই টিউবওয়েলের কথা বলতে গেলে তিনি বলেন, টিউবওয়েল হবে না আর টাকাও দিতে পারবো না।
কুলিয়া গ্রামের সোহেল রানা বলেন, টিউবওয়েলের জন্য আমি আড়াই হাজার টাকা দিয়েছি এক বছর আগে। এখনো টিউবওয়েল পায়নি। এবিষয়ে কিছু বললে বিল্লাল ডাক্তার ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। একই গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য আনারুল ইসলাম বলেন, আমি বিল্লালের কাছে ৫টি টিউবওয়েলের জন্য টাকা দিয়েছি। আজ দিব, কাল দিব বলে সে আমাকে ঘোরাচ্ছে। পানিসারা গ্রামের ইউপি সদস্য আব্দুল আলিম বলেন, মুক্তিযোদ্ধা সন্তান সংসদের নাম ভাঙ্গিয়ে ডাঃ বিল্লাল হোসেন বহু মানুষের কাছ থেকে আড়াই হাজার করে টাকা নিয়েছে টিউবওয়েল দেবে বলে। আমিও গ্রামের মসজিদ, মাদ্রাসা এবং মন্দিরের জন্য ৪টি কলের টাকা দিয়েছি। এখন টিউবওয়েলও পাচ্ছি না, টাকাও পাচ্ছি না। পানিসারা ইউনিয়নের সংরক্ষিত আসনের মহিলা ইউপি সদস্য হাসনা হেনা বলেন, সস্তায় টিউবওয়েল পাওয়ার জন্য গ্রামের ১০জন মানুষের কাছ থেকে টাকা নিয়ে বিল্লালকে দিয়েছিলাম। এখন লজ্জায় তাদের সামনে যেতে পারিনা। একই ইউনিয়নের আরেক সংরক্ষিত মহিলা ইউপি সদস্য তরুনা বেগম বলেন, আমি ৫ জনের নিকট থেকে টাকা নিয়ে বিল্লালকে দিয়েছি। সে আজ এক বছর ধরে ঘোরাচ্ছে। একটি টিউবওয়েলও কাউকে দেয়নি। এছাড়াও কুলিয়া গ্রামের নুরুল ইসলাম, বাবলু, কৃষ্ণচন্দ্রপুর গ্রামের আতিয়ার রহমান, আলমগীর, লাল্টু সহ পার্শ্ববর্তী হাজিরবাগ, নির্বাসখোলা এবং বাঁকড়া ইউনিয়নের বহু মানুষের কাছ থেকে এভাবে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
কথিত ডাঃ বিল্লাল হোসেনের মামা ও সাদা মনের মানুষ খ্যাত সায়েদ আলী বলেন, গ্রামের অনেক মানুষ অভিযোগ করছে যে তাদের কাছ থেকে বিল্লাল টাকা নিয়েছে। আমিও আমার বোন জামাই আতিয়ারের জন্য একটি টিউবওয়েল নিয়ে দেওয়ার জন্য টাকা দিয়ে ছিলাম। এখন সবার মত আমিও কোনো টিউবওয়েল পাইনি, পাবো কিনা জানিনা।
পানিসারা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাকির হোসেন পিপুল বলেন, বিল্লাল আমার কাছ থেকে একটি টিউবওয়েল এর জন্য ২৫০০ টাকা নিয়েছে। এখন শুনছি এরকম ২০০/২৫০ লোকের কাছ থেকে টাকা নিয়েছে। গত মাসের আইনশৃঙ্খলা বিষয়ক সভায় এই বিষয়টি নিয়ে ইউএনও সাহেবকে বলেছি। তিনি নামের তালিকা করে জমা দিতে বলেছেন। খুব শীঘ্রই তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কথিত ডাঃ বিল্লাল হোসেনের সাথে যোগাযোগের জন্য তার ব্যক্তিগত মোবাইল নাম্বারে ফোন দিলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
মুক্তিযোদ্ধা সন্তান সংসদের যশোর জেলার কমান্ড কাউন্সিলের সদস্য সচিব শাফি সমুদ্র বলেন, আমাদের সংগঠন থেকে এভাবে টিউবওয়েল দেওয়ার কোনো প্রকল্প নেই। সংগঠনের নাম ভাঙ্গিয়ে তিনি যদি টাকা আত্মসাত করেন তাহলে তার দায় দায়িত্ব তার। ইতিমধ্যে আমাদের সংগঠন থেকে তার পদ সাময়িক ভাবে স্থগিত করা হয়েছে।
ঝিকরগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ মাহবুবুল হক বলেন, এলাকাভিত্তিক এধরণের প্রতারণার করলে ভুক্তভোগীগন যদি তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করে তাহলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *