Type to search

অন্যান্য

রুশ নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার, আলু রপ্তানিতে বাধা নেই
চীন, বসনিয়া, সার্বিয়া, আজারবাইজান থেকেও একই ধরনের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করেছে রাশিয়া।

ফখরুল ইসলামঢাকা
প্রকাশ: ২৯ মার্চ ২০২২, ১৩: ০৫
অ+
অ-
রুশ নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার, আলু রপ্তানিতে বাধা নেই
প্রায় সাত বছর ঝুলিয়ে রেখে ইউক্রেনে হামলার ১০ দিন পর ৫ মার্চ বাংলাদেশি আলু রপ্তানির ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছে রাশিয়া। এমন একসময় রাশিয়া নিষেধাজ্ঞাটি তুলে দিয়েছে, যখন শুধু বাংলাদেশ কেন রাশিয়ার সঙ্গে কোনো দেশই স্বাভাবিক লেনদেন করতে পারছে না। ফলে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার আপাতত কাগুজে সুবিধা হয়েই থাকছে।

বাংলাদেশের রপ্তানিকারকেরা এখন আশা করছেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর রুশ আমদানিকারকদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে ইতিবাচক ফল আসতে পারে।

‘ব্রাউন ড্রাউট’ নামক ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়ার অস্তিত্ব পাওয়ার কথা বলে ২০১৫ সালের ৬ মে বাংলাদেশি আলু আমদানির ওপর সাময়িক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে রাশিয়ার ফেডারেল সার্ভিস ফর ভেটেরিনারি অ্যান্ড ফাইটোস্যানিটারি সার্ভিল্যান্স। অ্যাগ্রি কনসার্ন নামের একটি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের আলুতে ওই ব্যাকটেরিয়া ধরা পড়ে। রপ্তানিকারকেরা জানান, রাশিয়া তখন যেসব শর্ত দেয়, সেগুলো বাংলাদেশ বহু আগেই পূরণ করলেও এত দিন নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়নি।

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

আলু রপ্তানির আগে পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং উৎপাদনপ্রক্রিয়া যাচাইয়ের তথ্যও তখন জানতে চায় রাশিয়া। কৃষি মন্ত্রণালয় ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বাংলাদেশের উদ্বৃত্ত আলু রপ্তানির জন্য যখন রাশিয়াকে সম্ভাবনাময় বাজার হিসেবে ভাবছিল, তখনই দেশটি নিষেধাজ্ঞা দেয়।

এ বিষয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি ২২ মার্চ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আলু রপ্তানির জন্য রাশিয়া একটি বড় বাজার। নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে আমরা খুশি। এখন রাশিয়ার আমদানিকারকেরা যে মানের আলু চান, সে মানের আলু উৎপাদনে আমাদের মনোযোগ বাড়ানো দরকার। তাহলেই রাশিয়ার বাজারটি আমাদের পক্ষে ভালোভাবে ধরা সম্ভব।’

সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ ২০১৫ সালে একবার সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, রাশিয়ার বাজারটি এত বড় যে শুধু সে দেশেই বছরে এক লাখ টন আলু রপ্তানি করা সম্ভব। তবে এখন রপ্তানিকারকেরা বলছেন, রাশিয়াতে আলু রপ্তানি হতে পারে অন্তত পাঁচ লাখ টন।

উল্লেখ্য, রাশিয়ার পাশাপাশি ইউক্রেন ও পোল্যান্ডের মানুষের অন্যতম প্রধান খাদ্যগুলোর একটি হচ্ছে আলু।

বিজ্ঞাপন

রাশিয়া নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার দুদিন পর ৭ মার্চ ঢাকায় রুশ দূতাবাস বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে প্রথম এ তথ্য জানায়। তার আগে থেকেই বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি ও কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক আলু রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে ঢাকায় নিযুক্ত রুশ রাষ্ট্রদূত আলেকসান্দার ভি মান্টিটস্কিকে অনুরোধ জানিয়ে আসছিলেন।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় রাশিয়ার নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের কথা জানিয়ে ১৩ মার্চ বাণিজ্যসচিব তপন কান্তি ঘোষকে চিঠি দেয়। আর বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত সপ্তাহে বাংলাদেশ আলু রপ্তানিকারক সমিতিসহ সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোকে এ তথ্য জানায়।

বাংলাদেশ আলু রপ্তানিকারক সমিতির সভাপতি ও ফেরদৌস বায়োটেক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ফেরদৌসী বেগম প্রথম আলোকে বলেন, ‘রাশিয়ার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাই। তবে অনেক দিন রপ্তানি বন্ধ থাকায় সেই দেশের আমদানিকারকদের নতুন করে খুঁজে বের করতে হবে। এখন ইপিবির আয়োজনে রাশিয়ায় একটা রোড শো হলে ভালো হবে।’

ইউক্রেনে হামলার পর শুধু যে বাংলাদেশের আলু রপ্তানির ওপরই নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছে রাশিয়া, তা কিন্তু নয়। চীনের বাদাম, বসনিয়ার নাশপাতি, সার্বিয়ার বোন অ্যান্ড সিড ফ্রুটস এবং আজারবাইজানের আপেল আমদানির ক্ষেত্রেও নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করেছে রাশিয়া।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন রপ্তানিকারক প্রথম আলোকে বলেন, ‘রাশিয়া তার কূটনৈতিক জায়গা থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করলেও বাংলাদেশের উচিত হবে সুযোগটি কাজে লাগানো।’

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ থেকে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ৭০ হাজার টন আলু রপ্তানি হয়। রাশিয়ায় রপ্তানি হয় ১৪ হাজার টন। এর আগের ২০১৩-১৪ অর্থবছরে রাশিয়ায় ২০ হাজার টন আলু রপ্তানি হয়, যা থেকে বাংলাদেশের আয় হয় ৩ কোটি ৩০ লাখ মার্কিন ডলার।

রাশিয়ায় রপ্তানি বন্ধ হলেও অন্যান্য দেশে ঠিকই রপ্তানি হয়েছে বাংলাদেশি আলু। ইপিবির তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ থেকে বেশি আলু রপ্তানি হয় মালয়েশিয়ায়। এ ছাড়া শ্রীলঙ্কা ও নেপালে রপ্তানি হয়। সিঙ্গাপুর, গ্রিস, হংকং, যুক্তরাজ্য, ব্রুনেই, মিয়ানমার, মালদ্বীপ, ওমান, বাহরাইন, ইতালি, কম্বোডিয়া, কুয়েত, ভিয়েতনাম—এসব দেশে আগে রপ্তানি হলেও এখন আর হয় না।

বিজ্ঞাপন

রপ্তানির জন্য মুন্সিগঞ্জের চেয়ে বগুড়া ও রংপুরের আলু ভালো বলে জানান রপ্তানিকারকেরা। তাঁদের মতে, ভালো আলুবীজের সংকট রয়েছে দেশে। আর রাশিয়ার আলুর বাজার ধরার বড় সম্ভাবনা সব সময়ই থাকে। কারণ, বছরের যে সময়ে রাশিয়ায় আলুর চাহিদা বাড়ে, তখনই হলো বাংলাদেশের আলু উৎপাদনের মূল মৌসুম।

আলু রপ্তানিতে সরকার বর্তমানে ২০ শতাংশ নগদ সহায়তা দেয়। প্রতিবেশী ভারতে অবশ্য পরিবহনে ১০ শতাংশসহ ৩০ শতাংশ নগদ সহায়তা প্রদান করে। এক দরজায় অনেক সেবা (ওএসএস) না থাকায় অনেক ঝক্কিও পোহাতে হয় বলে বাংলাদেশি রপ্তানিকারকদের অভিযোগ রয়েছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, সর্বশেষ ২০২০-২১ অর্থবছরে বাংলাদেশে ১ কোটি ১৩ লাখ টন আলু উৎপাদন হয়েছে। ওই বছরে দেশে আলুর চাহিদা ছিল ৮০ লাখ টনের মতো।

আলু রপ্তানিকারক সমিতির সভাপতি ও ফেরদৌস বায়োটেকের এমডি ফেরদৌসী বেগম বলেন, ‘দরকার হচ্ছে ভারতের মতো কৃষি ও প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্য রপ্তানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (এপিইডিএ) গঠন করা। তাহলে আলুসহ সব কৃষি ও প্রক্রিয়াজাত পণ্যেরই রপ্তানি বাড়বে।’

বিজ্ঞাপন

বিশ্ববাণিজ্য থেকে আরও পড়ুন