Type to search

অন্যান্য

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন

মানহা-মুরসালিনের মা রায়হানা আফরিন প্রথম আলোকে বলেন, বাচ্চাদের স্মৃতিসৌধ দেখাতে নিয়ে এসেছি। আজ সকাল থেকেই বাচ্চারা বলছিল, লাল-সবুজ রঙের জামা পরবে। করোনার কারণে আগের দুই বছরে সেভাবে বের হতে পারিনি।’

স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান নানা শ্রেণি–পেশার মানুষ

স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান নানা শ্রেণি–পেশার মানুষ
ছবি: প্রথম আলো

করোনা মহামারির কারণে গত দুই বছর সীমিত পরিসরে এবং কঠোর স্বাস্থ্যবিধি মেনে স্বাধীনতা দিবস উদ্‌যাপন করতে হয়েছে। এ বছর করোনা পরিস্থিতি অনেকটা নিয়ন্ত্রণে। আজ সকাল থেকে জাতীয় স্মৃতিসৌধে স্বাধীনতা দিবস উদ্‌যাপনে আসা জনসাধারণের মধ্যে স্বতঃস্ফূর্ততা বেশি।

সকালে স্বাধীনতা দিবস উদ্‌যাপন উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। এরপর সাধারণ মানুষ শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান।

পরিবারকে সঙ্গে নিয়ে আসা অনেকেই শ্রদ্ধা জানানো শেষে স্মৃতিসৌধের চারপাশের লেকের পাশে, গাছের ছায়ায় বসে নিজেদের মতো করে সময় কাটাচ্ছেন। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আনিসুল ইসলাম স্ত্রী ও সাত বছর বয়সী সন্তানকে নিয়ে এসেছেন সাভারের থানা স্ট্যান্ড এলাকা থেকে৷ তিনি বলেন, ‘বাচ্চাকে স্বাধীনতা দিবসের কার্যক্রম দেখাতে নিয়ে এসেছি। আগের দুই বছর তো আসা হয়নি৷’

সেলফি তুলছে একটি পরিবার

সেলফি তুলছে একটি পরিবার
ছবি: প্রথম আলো

সকাল সাড়ে সাতটার দিকে ফুল দিতে আসে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ১৩ সদস্যের একটি দল। হুইলচেয়ারে বসে তারা শ্রদ্ধা জানায় বাঙালি জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের। দিনটি তাদের কাছে আনন্দের, গর্বের। প্রতিবছর পক্ষাঘাতগ্রস্তদের পুনর্বাসন কেন্দ্রের (সিআরপি) উদ্যোগে এ প্রতিষ্ঠানে থাকা বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ব্যক্তিরা জাতীয় স্মৃতিসৌধে আসেন।

শারীরিক প্রতিবন্ধী রুবেল তালুকদার বলেন, ‘জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে প্রতিবছর আমাদের কেউ না কেউ এই স্মৃতিসৌধে আসেন। আমরাও এসেছি। দেশের বীরদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে পেরে প্রশান্তি অনুভব করছি।’

সকাল ১০টার দিকে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে শরীরচর্চার মাধ্যমে সুস্থ থেকে দেশের জন্য নিজেদের গড়ে তোলার শপথ নেয় ‘পাপ্পুরাজ কারাতে একাডেমির’ শিশু-কিশোরেরা। স্মৃতিসৌধ এলাকায় প্রতিষ্ঠানটির প্রায় অর্ধশত শিক্ষার্থী নানা শারীরিক কসরত প্রদর্শন করে। একপর্যায়ে তারা একজনের কাঁধের ওপর আরেকজন উঠে গিয়ে তৈরি করে মানবসৌধ। সৌধের সবার ওপরে একজনের হাতে পতপত করে উড়তে থাকে স্বাধীন বাংলার পতাকা।

সকাল সাড়ে আটটার দিকে স্মৃতিসৌধের বেদিতে ৬০ ফুট দৈর্ঘ্যের জাতীয় পতাকা নিয়ে শ্রদ্ধা জানান গাজীপুরের ইকবাল সিদ্দিকী কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা

সকাল সাড়ে আটটার দিকে স্মৃতিসৌধের বেদিতে ৬০ ফুট দৈর্ঘ্যের জাতীয় পতাকা নিয়ে শ্রদ্ধা জানান গাজীপুরের ইকবাল সিদ্দিকী কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা
ছবি: প্রথম আলো

মানবসৌধের উদ্যোক্তা সোলায়মান পাপ্পুরাজ বলেন, ‘প্রতিবছর এই দিনে আমরা জাতীয় স্মৃতিসৌধে শহীদদের স্মরণ করি। একজন সুস্থ মানুষ জাতির যেকোনো ক্রান্তিলগ্নে মানুষের সেবায় কাজে আসতে পারে। আমরা সুস্থ থেকে দেশের জন্য কাজ করতে নিয়মিত শরীরচর্চা করে নিজেদের সুস্থ রাখি। স্মৃতিসৌধের ইতিহাস জানাতে এবং শহীদদের প্রতি শিক্ষার্থীদের শ্রদ্ধা বাড়াতে আমরা এই মানবসৌধ তৈরি করেছি।’

সকাল সাড়ে আটটার দিকে স্মৃতিসৌধের বেদিতে ৬০ ফুট দৈর্ঘ্যের জাতীয় পতাকা নিয়ে শ্রদ্ধা জানান গাজীপুরের ইকবাল সিদ্দিকী কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

শিক্ষার্থী সায়েমা ইসলাম বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস এবং বীর শহীদদের সম্পর্কে আমরা আরও ভালোভাবে জানতে চাই। প্রথমবারের মতো জাতীয় স্মৃতিসৌধে এসে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করতে পেরে ভালো লাগছে।’

মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ করে স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণে আর্ট ক্যাম্পের আয়োজন করেছে শিল্পকলা একাডেমি। সকাল নয়টা থেকে স্মৃতিসৌধ এলাকায় উন্মুক্ত স্থানে এ কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের চিত্রশিল্পীরা।

সরকারি সংস্থা, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানানো হয়। সকাল থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), গণফোরাম, জাকের পার্টি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি, বাংলা একাডেমি, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান, ছাত্রলীগ, ছাত্রদল। এর বাইরে শ্রমিকদের একাধিক সংগঠন শ্রদ্ধা নিবেদন করে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *