Type to search

সাংবাদিক রোজিনার বিরুদ্ধে যে আইনে মামলা ও অপরাধের শাস্তি

আইন ও আদালত

সাংবাদিক রোজিনার বিরুদ্ধে যে আইনে মামলা ও অপরাধের শাস্তি

অপরাজেয়বাংলা ডেক্স: হঠাৎ করেই একটি আইন আলোচনায়। ১৯২৩ সালে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনামলে সরকারি নথির গোপনীয়তা রক্ষায় হয় এই অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট।

লর্ড কার্জন ভাইসরয় থাকাকালে এই আইনটি প্রণয়ন করা হয়। মূলত: ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক সরকারের নথি স্থানীয় কর্মচারীরা যাতে ফাঁস না করতে পারে তাই এই আইনটি প্রণয়ন করা হয়। প্রায় শতবর্ষেও এই আইনটি রয়ে গেছে।

এই আইন বাতিল তো দূরে থাক ২০১৮ সালের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ৩২ ধারায় এটিকে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। ৩২ ধারায় বলা হয়েছে, এই আইনের তিন ধারার অপরাধ ডিজিটাল প্লাটফর্মে করলে একই ধরনের দণ্ডে দণ্ডিত হবে।

সরকারি গোপন আইন ১৯২৩ এর ৩ ধারায় গুপ্তচরবৃত্তির জন্য শাস্তির বিধানের বিষয়ে বলা হয়েছে যে, (১) যদি কোনো ব্যক্তি রাষ্ট্রের নিরাপত্তা অথবা স্বার্থের পরিপন্থী উদ্দেশ্যে (ক) কোনো নিষিদ্ধ এলাকায় গমন করে, পরিদর্শন করে, অতিক্রম করে সান্নিধ্যে আসে অথবা ভেতরে প্রবেশ করে, অথবা (খ) কোনো স্কেচ, প্ল্যান, মডেল অথবা নোট তৈরি করে, যা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে শত্রুপক্ষের উপকারে আসবে বলে মনে হয়, ধারণা করা যায় অথবা নিশ্চিত হওয়া যায়, অথবা (গ) যদি কোনো ব্যক্তি শত্রুপক্ষের ব্যবহারে আসতে পারে, আসবে বলে ধারণা করা যায় অথবা নিশ্চিত হওয়া যায়, এমন কোনো অফিসিয়াল গোপন কোড অথবা পাসওয়ার্ড অথবা নোট অথবা অন্য কোনো দলিলপত্রাদি অথবা তথ্য আহরণ করে সংগ্রহ করে, রেকর্ড করে, প্রকাশ করে অথবা অন্য কোনো ব্যক্তির কাছে পাচার করে, তাহলে সেই ধারার অপরাধে অপরাধী হবে।

(২) ১৪ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ডের বিধান সম্বলিত এই ধারায় অভিযোগ আনার জন্য অভিযুক্ত যে কোনো একটি বিশেষ কার্য রাষ্ট্রের নিরাপত্তা ও স্বার্থের পরিপন্থীমূলক উদ্দেশ্যে করেছে, তার প্রমাণ প্রয়োজন নেই এবং উক্ত বিশেষ কার্যটি তার বিরুদ্ধে প্রমাণিত না হওয়া সত্ত্বেও, এই ধারায় তাকে শাস্তি প্রদান করা যাবে। যদি মামলার অবস্থা অথবা তার আচরণ অথবা তার জ্ঞান কার্যাবলী প্রমাণ করে যে, তার উদ্দেশ্য ছিল রাষ্ট্রের নিরাপত্তা ব্যাহত অথবা নিষিদ্ধ এলাকা সম্পর্কিত কোনো বিষয়ের কোনো স্কেচ, মডেল, আর্টিকেল, নোট, দলিল বা তথ্য অথবা কোনো গোপনীয় কোড বা পাসওয়ার্ড তৈরি, আহরণ-সংগ্রহ, রেকর্ড ও প্রকাশ করে বা আইনগত অধিকার প্রাপ্ত না হয়ে পাচার করে।

যদি মামলার অবস্থা, তার উদ্দেশ্য ছিল রাষ্ট্রের নিরাপত্তা ও স্বার্থের পরিপন্থী তাহলে ধরে নিতে হবে যে, উক্ত স্কেচ, মডেল, আর্টিকেল, নোট, দলিলপত্র অথবা তথ্য তৈরি, আহরণ সংগ্রহ, রেকর্ড, প্রকাশ ও পাচার করা হয়েছে-রাষ্ট্রের নিরাপত্তা ও স্বার্থের পরিপন্থীমূলক উদ্দেশ্যে।

৩ (ক) এ ধারার অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তি, প্রত্যক্ষ অথবা পরোক্ষভাবে অপরাধটি বিদেশি শক্তির স্বার্থে বা প্রয়োজনে করেছে বলে ধারণা করা গেলে বা প্রমাণিত হলে অথবা অপরাধটি প্রতিরক্ষা সম্পর্কীয় বা গোপন অফিসিয়াল কোড সম্পর্কিত হলে, মৃত্যুদণ্ড বা ১৪ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবে, এবং (খ) অন্যান্য ক্ষেত্রে তিন বছর পর্যন্ত কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবে।

একই আইনের ৫ ধারায় তথ্যের বেআইনি হস্তান্তর সম্পর্কে বলা হয়েছে। বলা হয়েছে- (১) কোনো নিষিদ্ধ এলাকা ও সরকার ঘোষিত কোনো এলাকা সম্পর্কীয় কোনো গোপনীয় অফিসিয়াল কোড বা পাসওয়ার্ড বা স্কেচ, প্ল্যান, মডেল, আর্টিকেল, নোট, দলিলপত্রাদি অথবা তথ্যাদি কোনো ব্যক্তি আইনসঙ্গত দখলে বা নিয়ন্ত্রণে থাকলে। (ক) সে যদি তা ইচ্ছাকৃতভাবে, আইনগত অধিকার প্রাপ্ত ব্যক্তি বা আদালতের কাছে বা রাষ্ট্রের স্বার্থে অন্য কোনো ব্যক্তির নিকট ব্যতীত, অন্য কোনো ব্যক্তির কাছে হস্তান্তর করে, অথবা; (খ) তার নিয়ন্ত্রণাধীন তথ্যাদি অন্য কোনো বিদেশি রাষ্ট্রের শক্তির স্বার্থে বা দেশের নিরাপত্তার পরিপন্থীমূলকভাবে ব্যবহার করে, অথবা;  (গ) আইনগত অধিকারের মেয়াদ শেষেও যদি তা নিজের অধিকারে রাখে বা (ঘ) যথাযথ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক ফেরত প্রদানের বা হস্তান্তরের নির্দেশ পালন না করে অথবা তা সংরক্ষণে যথাযথ সতর্কতা অবলম্বন না করে বা নিজেই এর নিরাপত্তা পরিপন্থী কার্য করে, (ঙ) তাহলে সে এ ধারার অপরাধে অপরাধী হবে।

(২) যদি কোনো ব্যক্তি ক্ষমতাপ্রাপ্ত না হয়ে এ আইনের পরিপন্থী জেনেও ইচ্ছাকৃতভাবে ১ নম্বর অনুচ্ছেদে বর্ণিত তথ্যাদি গ্রহণ করে, সে এই ধারার অপরাধে অপরাধী হবে।

(৩) এই ধারার অধীনে অপরাধী ব্যক্তি নিম্নরূপভাবে দণ্ডনীয় হবে- (ক) উপধারা (১) (এ) এর অধীন পরিপন্থী কার্যাধির বা কোনো প্রতিরক্ষা নির্মাণকাজ, অস্ত্রাগার, নৌ, স্থল বা বিমান বাহিনীর স্থাপনা বা স্টেশন বা খনি, মাইনক্ষেত্র, কারখানা, ডকইয়ার্ড, ক্যাম্প বা বিমান বা গোপনীয় অফিসিয়াল কোড সংক্রান্ত অপরাধ সংঘটিত হলে তা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে বিদেশি শক্তির স্বার্থে বা সুবিধার্থে ব্যবহৃত হবে বলিয়া অনুমেয়। তা হলে বা ধারণ করা গেলে মৃত্যুদণ্ডে অথবা চৌদ্দ বৎসর পর্যন্ত কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবে।

(খ) অন্যান্য অপরাধের ক্ষেত্রে দুই বছর পর্যন্ত কারাদণ্ডে অথবা জরিমানা দণ্ডে অথবা উভয়দণ্ডে দণ্ডিত হবে।

এছাড়াও রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে ১৮৬০ সালের দণ্ডবিধির ৩৭৯ ও ৪১১ ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে। এর মধ্যে ৩৭৯ ধারায় বলা হয়েছে- কোনো ব্যক্তি যদি চুরি করে, তবে সে ব্যক্তি তিন বছর পর্যন্ত যেকোনো মেয়াদের সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদণ্ডে অথবা অর্থদণ্ডে অথবা উভয়বিধ দণ্ডেই দণ্ডিত হবে।

দণ্ডবিধির ৪১১ ধারায় অসাধুভাবে চোরাইমাল গ্রহণের শাস্তির বিষয়ে বলা হয়েছে। এখানে বলা হয়েছে- কোনো ব্যক্তি যদি কোনো সম্পত্তি চোরাই সম্পত্তি বলে জানা সত্ত্বেও বা তা চোরাই সম্পত্তি বলে তার বিশ্বাস করার কারণ থাকা সত্ত্বেও অসাধুভাবে অনুরূপ চোরাই সম্পত্তি গ্রহণ করে বা রেখে দেয়, তবে উক্ত ব্যক্তি তিন বছর পর্যন্ত সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদণ্ডে অথবা অর্থদণ্ডে অথবা উভয়বিধ দণ্ডেই দণ্ডিত হবে।সুত্র,বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম