Type to search

দারিদ্রকে হার মানাতে চায় হতদরিদ্র অনাথ তুহিন

অভয়নগর

দারিদ্রকে হার মানাতে চায় হতদরিদ্র অনাথ তুহিন

হতদরিদ্র মেধাবী এতিম শিক্ষার্থী তুহিনের আকুতি আমার ঘরটি মেরামোত করে দেন

 

কামরুল ইসলাম
যশোরের অভয়নগর উপজেলার ধোপাদী গ্রামে এক দিনমজুর কৃষি পরিপারে জন্ম নেয় তুহিন হোসেন(২২)। দেড় মাস বয়সে তার মা মারা যায়। ভূমিহীন দরিদ্র পিতা আবুল সরদার পরের খেতে দিনমজুরের কাজ করে। সংসারে তার দুইটি সন্তান। বড় সন্তান মেয়ে রুবাইয়া খাতুনের বয়স তখন ৪ বছর । সংসারের ঘানি টানতে আবুল হোসেন কাজের সন্ধানে সকালে বের হয় আর মলিকের কাজ শেষ করে সন্ধ্যায় তার ঘরে ফেরা। এদিকে নবজাতক তুহিনের লালন করবে কে ? আবুল হোসেনের এ দু:সময় এগিয়ে আসেন পাড়ার কয়েকজন মহিলা। ছয় মাস বয়স হলে শিশু তুহিনের হাল ধরে তার অবুজ বোন রুবাইয়া খাতুন। বাবা কাজে যায় আর দুধের শিশু তুহিন থাকে বোনের কাছে। সে তুহিনকে দুধ খাওয়ায়, ঘুম পাড়ায়, গোসল করা সহ তার সমস্থ পয়:পরিষ্কার করে। কর্মক্লান্ত দেহ নিয়ে বাবা ঘরে ফিরে রান্নার কাজ করে। এভাবে দিনে দিনে বেড়ে উঠা তুহিনের।
ছয় বছর বয়স হলে বাবা তুহিনকে ভর্তি করে স্থানীয় ধোপাদী দক্ষিণ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। তুহিন দরিদ্র অসহায় পরিবার থেকে আসলেও লেখা পড়ায় সে ভাল ফলাফল অর্জণ করতে থাকে। এক সাক্ষাতকারে তুহিন জানায়, প্রথম শ্রেণি থেকে ৬ শ্রেণি পর্যন্ত মেধা তালিকায় তার রোল নং এক ছিলো। সপ্তম শ্রেণিতে উত্তির্ণ হলে তার পিতা লেবার সিরোসিস রোগে আক্রান্ত হয়। এর মাঝে বোনের বিয়ে হয়। সে বাবা ভাইকে ছেড়ে চলে যায় পরের সংসারে। বাবা অসুস্থ্য হওয়ার কারনে নিয়মিত কাজ করতে পারে না। সংসার চলে খেয়ে না খেয়ে। এর মধ্য দিয়ে তুহিন হোসেনের লেখা পড়া শেখা। তুহিন এস এসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে ২০১৮ সালে। সে পরীক্ষায় জিপিএ ৪.৫৬ পেয়ে এ গ্রেডে উত্তীর্ণ হয়। ভর্তি হয় নওয়াপাড়া সরকারি মহাবিদ্যালয়ে। দরিদ্রের কারণে সে বিজ্ঞান শাখা ছেড়ে মানবিক শাখায় ভর্তি হয়। উচ্চ মাধ্যমিক পড়া কালিন পিতার অসুস্থ্যতার কারনে সংসারের হাল ধরতে হয় তার। সে পরের খেতে মজুর খাটতে শুরু করে। অসুস্থ্য পিতার চিকিৎসা খরচ, সংসারের খরচ ও তার লেখাপড়ার খরচ যোগাতে হিমশিম খায়। তুহিন ২০২০ সালের এইচ এসসি পরীক্ষার্থী ছিলো। কিন্তু পিতাকে নিয়ে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা করানোর কাজে থাকায় সে বছর তুহিন পরীক্ষার জন্য ফর্ম পূরণ করতে পারেনি। এর কয়েক মাস পর তার পিতার মৃত্যু হয়। সংসারে তার আর কেউ রইল না।
তুহিন মজুর খাটে, লেখাপড়া করে, নিজ হাতে রান্না করে। এভাবে চলে তার লেখা পড়া। ২০২১ সালে তুহিন জিপিএ ৪.৫৮ পেয়ে আবারো এ গ্রেডে উত্তীর্ণ হয়। বর্তমানে সে সমাজ বিজ্ঞান বিষয়ে জাতীয় বিশ^বিদ্যালয়ের অধীনে নওয়াপাড়া মহাবিদ্যালয়ে অধ্যায়ন করছে এবং পড়ালেখার ফাঁকে সে স্থানীয় একটি নূরানি মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করছে। সেখানে তাকে সামান্য বেতন দেওয়া হয়। এ ভাবে চলছে তার সংসার।
ওদিকে তুহিন হোসেনের বোন রুবাইয়া খাতুনের বিবাহ হয় নড়াইল সদরের মধুরগাতী গ্রামে ছাত্তার শেখের ছেলে জহিরুল ইসলামের সাথে। তারা গ্রামের এক দরিদ্র কৃষক । সেখানে খেয়ে পরে বোনের দিন ভালই কাটছিলো। কিন্তু সড়ক দুর্ঘটনায় স্বামী পঙ্গু হয়ে পড়েছে। সে এখন মৃত্যু শয্যায়। রুবাইয়ার দুই সন্তান বড় ছেলে আবির(৮) । ছোট মেয়ে আছিয়া (৫)। এদের মধ্যে ছেলে আবির হোসেন থ্যালাসিমিয়া রোগে আক্রান্ত। প্রতি মাসে তার এক ব্যাগ রক্ত পুশ করতে হয়। এতে তার প্রায় দুই হাজার টাকা ব্যয় হয়। ওই টাকা যোগাড় করতে ভাই তুহিনের সাহায্য নিতে হয়।
তুহিন হোসেন জানায় সে ¯œাতোকত্তর পর্যন্ত লেখা পড়া করতে চায়। বর্তমানে সে পৈত্রিক সাড়ে তিন শতক জমির মালিক। ওই জমির ওপর তার বসত বাড়ি । সরজমিনে তার বাড়ি যেয়ে দেখা মাটির দেওয়ালের উপর টিনের চালার একটি মাত্র ঘর। টিনের চালা ছিদ্র হয়ে বৃষ্টি হলে পানি পড়ে পড়ে মাটির দেওয়ালে ফাটল ধরেছে। যে কোন সময় ভেঙ্গে পড়ে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। তুহিন হোসেনের এখন সমাজের কাছে একটাই আকুতি আমি খেতে পরতে চাচ্ছি না দয়া করে আমার ঘরটি বসবাসের উপযোগি করে দেন।