Type to search

সংবাদ প্রকাশের জের— বিলীনের পথে রাজগঞ্জ পাবলিক লাইব্রেরীর জৌলুস

মনিরামপুর

সংবাদ প্রকাশের জের— বিলীনের পথে রাজগঞ্জ পাবলিক লাইব্রেরীর জৌলুস

 

জি. এম ফারুক আলম, মণিরামপুর (যশোর) প্রতিনিধি : পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশের পর মণিরামপুর উপজেলার রাজগঞ্চ পাবলিক লাইব্রেরীর দেয়ালে লেখা নাম, মনোগ্রাম এবং স্থাপিত সনের সাইনবোর্ডটি মুছে ফেলা হয়েছে। পড়ে থাকা পরিত্যাক্ত ভবনটিই এখন সাহিত্য চর্চার শুধুমাত্র স্মৃতি হয়ে দাড়িয়েছে। এলাকাবাসী এ পাবলিক লাইব্রেরীটি পুনরুজ্জীবিত করে তার জৌলুস ফিরে পেতে চাই ?
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, ঝাঁপা ইউনিয়ন পরিষদের তহশিল অফিসের পাশেই ভাঙ্গা দরজায় তালাবদ্ধ এ লাইব্রেরী অযত্নে অবহেলায় পড়ে আছে। পলেস্তার খসে পড়া ভবনের টিনের চাল থাকলেও তাতে টিন নেই। জানালাগুলি উইপোকায় খেয়ে ফেলেছে প্রায়। লাইব্রেরীর এক পাশে পরিবার নিয়ে বসবাস করেন তহশিল অফিসের ঝাড়–দার বয়োবৃদ্ধ ইমরান হোসেন।
এক সময় বিকেল হলেই সাহিত্য প্রেমিদের পদচারনায় মুখরিত হয়ে উঠতো লাইব্রেরীর এই আঙ্গীনাটি। যে লাইব্রেরীতে সাহিত্য-সংস্কৃতি চর্চা হতো। বই পড়ে সাহিত্য প্রেমিদের অনুভূতির ভুবন জেগে উঠতো। অথচ সময়ের ব্যবধানে হারিয়ে গেছে যশোরের মণিরামপুর উপজেলার রাজগঞ্জ পাবলিক লাইব্রেরীর সেই জৌলুস। দেশ-বিদেশের বিখ্যাত লেখকের লেখা ইতিহাস-ঐতিহ্য, উপন্যাস, কাব্যগ্রন্থ, গবেষণাধর্মী প্রায় দু’হাজার বইয়ের সমৃদ্ধ ছিলো এ লাইব্রেরী। চরম অযতেœ-অবহেলায় এক সময়ের সমৃদ্ধশালী এ লাইব্রেরী আজ পরিত্যক্ত হয়ে ভাগাড়ে পরিনত হয়েছে।
রাজগঞ্জ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) মাসুদ কামাল তুষার জানান, এলাকার গুণীজনদের নিয়ে ডিসি অফিসের রাজস্ব বিভাগ থেকে অনুমতি নিয়ে কেভিডি (খুলনা উন্নয়ন বোর্ড)-এর দুইটি কক্ষে ১৯৮৯ সালে (বাংলা ১৩৯৬ সাল) এ লাইব্রেরী প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠাকালকীন সভাপতি ছিলেন চন্ডীপুর গ্রামের ড. আব্দুস সাত্তার (সাবেক ভিসি, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়), সাধারন সম্পাদক হানুয়ার গ্রামের আতিয়ার রহমান (সাবেক নাজির, যশোর ডিসি অফিস) ও দপ্তর সম্পাদক ছিলেন ইকবাল কবীর।
এছাড়া মোবারকপুর গ্রামের ডাঃ মৃণাল কান্তি দাস (বর্তমানে ঢাকা মেডিকেল কলেজের কসমেটিক সার্জারি), সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মৃত. নওশের আলী, রাজগঞ্জ কলেজের অধ্যক্ষ আব্দুল লতিফ, প্রয়াত হাফিজুর রহমান দুলু, ব্যাংকার মোস্তাফিজুর রহমান কাবুল, আসাদুজ্জামান রয়েল, পরিমল সাধু, নির্মল সাধুসহ ২১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠিত হয়। এর অনেকেই আজ বেঁচে নেই। যার উপদেষ্টা ছিলেন প্রয়াত এমপি অ্যাডভোকেট খান টিপু সুলতান, অমাল কুমারসহ কয়েকজন।
লাইব্রেরীটি নিয়ে গত বছরের ২৪ ডিসেম্বর কয়েকটি প্রিন্টমিডিয়া ও ওয়ানলাইনে সংবাদ প্রকাশ হলে ভবনটির সাইনবোর্ড (লেখা) সাদা চুন টেনে মুছে দেয়া হয়েছে। রাজগঞ্চ আঞ্চলিক প্রেসক্লাবের দপ্তর সম্পাদক হেলাল উদ্দীন জানায়, দীর্ঘদিন পরিত্যক্ত ভবনটির সাইনবোর্ড থাকলেও গত তিন মাস পূর্বে রাতের আঁধারে কে-বা-কারা চুন লেপ্টিয়ে মুছে দিয়েছে। বিষয়টি নিয়ে এলাকায় ব্যাপক সমালোচনার ঝড় উঠলেও প্রকৃত অপরাধকারী সন্ধান পাওয়া যায়নি।
মণিরামপুর প্রেসক্লাবের সম্পাদক ও পাবলিক লাইব্রেরীর প্রভাবশালী সদস্য মোতাহার হোসেন বলেন, ঝাঁপা বাওড়ের তীরে এবং ড্রাম দিয়ে তৈরি বঙ্গবন্ধু ঝুলন্ত সেতু এলাকায় অবস্থিত পাবলিক লাইব্রেরীটিকে পুনরুজ্জীবিত করতে বিভিন্ন মহলে আলোচনা-সমালোচনা হলেও ভবনটির সংস্কার এবং দেখভালের বড়ই অভাব রয়েছে। তবে, সরকারি-বেসরকারি সহযোগিতা পেলে নতুন করে লাইব্রেরীটির প্রাণ ফিরে পেতো বলে তিনি মনে করেন।
মণিরামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ জাকির হাসান বলেন, রাজগঞ্চে আধুনিক মানের একটি পাবলিক লাইব্রেরী স্থাপনের জন্য বিগত কমিটির সাথে আলোচনা মোতাবেক প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।