Type to search

শত বছর পর ভৈরব নদে শুরু হয়েছে জোয়ার-ভাটা

যশোর

শত বছর পর ভৈরব নদে শুরু হয়েছে জোয়ার-ভাটা

শত বছর পর ভৈরব নদে শুরু হয়েছে জোয়ার-ভাটা। যশোরবাসীর জন্য এটি একটি আনন্দের খবর। যশোর থেকে মানুষ নৌপথে খুলনায় যেতে পারবেন। যা এখানকার মানুষের কাছে স্বপ্নের মতো। পানি উন্নয়ন বোর্ড শেষ পর্যন্ত যশোরের মানুষের নৌযানে চলাচলের স্বপ্ন পূরণ করেছে।
তবে, এখনো পর্যন্ত দু’পাড়ের অনেকেই ময়লা আবর্জনা ফেলছে নদের পানিতে। যে কারণে নদের সৌন্দর্যহানি হচ্ছে। পাশাপাশি পানি প্রবাহে বিঘ্ন ঘটবে। এখনই ময়লা ফেলা বন্ধ করতে না পারলে খননকৃত নদ ভরাট হতে থাকবে।
ইতিহাস ঘেঁটে জানা গেছে, প্রায় শত বছর আগে ভৈরব নদ যশোর জেলার মধ্য দিয়ে আঁকাবাঁকা পথ ধরে খুলনা হয়ে পশুর নদীর সাথে মিলিত হয়ে বঙ্গোপসাগরে হারিয়ে যায়। এই নদে এক সময় লঞ্চ, স্টিমারসহ নানা ধরনের নৌযান চলাচল করতো। চলতো বড় বড় জাহাজও। এরপর পার হয়েছে কমপক্ষে আট যুগ। তারপর থেকে আফরা ঘাট পর্যন্ত শৌর্যবীর্য হারায় ভৈরব। কেবল শৌর্যবীর্য হারায় বললে ভুল হবে, অনেকাংশ ভরাট হয়ে যায়। আবার কোথাও কোথাও স্থানীয় লোকজন ভৈরবের বুকে ফসল চাষ করা শুরু করেন। এই অবস্থা দেখে হা হুতাশ করতেন অনেক প্রবীণ।
হযরত খানজাহান আলীর (রাঃ) সময় যশোরের হামিদপুরের বালুর ঘাট, বালিয়াডাঙ্গাসহ এই অঞ্চল ভৈরবের পানিতে থৈ থৈ করতো। সময়ের ব্যবধানে প্রমত্তা ভৈরব ক্ষীণকায় অবস্থার মধ্যে পড়ে। যশোরের মানুষ কয়েক দশক ধরে ভৈরবের যৌবন ফেরানোর দাবি তোলেন। এই দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন সংগ্রামও চলছে।
স্থানীয় মানুষের দাবির মুখে ভৈরব সংস্কারে সরকার ২৭৯ কোটি টাকার প্রকল্প গ্রহণ করে। সেই প্রকল্পের আওতায় যশোর পানি উন্নয়ন বোর্ড ৯৬ কিলোমিটার নদ খনন করেছে। খনন কাজের সময় ২৯ টি ব্রিজের নীচে কাজ করা ছিল জটিল বিষয়। এসব ব্রিজের নীচে কাজ করে এলজিইডি। খননের পর ভৈরবে জোয়ার-ভাটা শুরু হয়েছে। বর্তমানে জোয়ারের পানি যশোর শহরের নীলগঞ্জ ব্রিজ পর্যন্ত আসছে। রোববার সরেজমিনে জোয়ারের পানি দেখা যায়। প্রায় একশ’ বছর পর ভৈরবে জোয়ার-ভাটা দেখে যারপরনাই খুশি দু’পাড়ের বাসিন্দারা।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা রোববার জানিয়েছেন, এখনো চারটি ব্রিজের নীচে কাজ চলছে। এগুলো হচ্ছে, রাজারহাট, দাইতলা, রূপদিয়া ও ছাতিয়ানতলা। এই চারটি ব্রিজের কাজ শেষ হলে ভৈরবে পরিপূর্ণ জোয়ার-ভাটা চলবে বলে কর্মকর্তারা বলছেন। তারা জানান, দড়াটানা, কাঠেরপুল, ঢাকা রোড ও নীলগঞ্জ ব্রিজের পিলারের কারণে শহর অংশে জোয়ার-ভাটা বিঘ্নিত হবে। এই পিলারগুলো অপসারণের জন্য এলজিইডির কাছে প্রস্তাব দিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। এখন এলজিইডিকে দ্রুত পিলার অপসারণের কাজে হাত দিতে হবে। তাহলেই যশোরবাসী পরিপূর্ণ জোয়ার-ভাটা দেখতে পাবে।
সূত্র জানায়, ভৈরব খনন প্রকল্পে এখনো পর্যন্ত ১৮-১৯ কোটি টাকার কাজ বাকি রয়েছে। এই টাকায় ভৈরব নদের যশোর শহর অংশের পাড়ে সৌন্দর্য বর্ধন করা হবে বলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। এই কাজ শেষ হলে পুরো প্রকল্পের কাজের সমাপ্তি টানা হবে। তখন যশোরের মানুষ অন্য রকম এক ভৈরব দেখতে পাবেন। বহুকাল পর নৌযানে যেতে পারবেন বিভিন্ন জায়গায়। পাওয়া যাবে অন্য রকম এক আনন্দ।
এ ব্যাপারে যশোর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী তাওহীদুল ইসলাম বলেন, ভৈরবে জোয়ার-ভাটা চালু হয়েছে। চারটি ব্রিজে কাজ চলছে। এই চারটি ব্রিজের কাজ শেষ হলে জোয়ার-ভাটায় গতি পাবে। তখন যশোর থেকে খুলনা পর্যন্ত নৌপথে যাওয়া যাবে। যা যশোরবাসীর দীর্ঘদিনের চাওয়া ছিল।