Type to search

রাজার ছেলে-মেয়েদের দুধ দিয়ে গোছল করাতেন! রাজারস্মৃতি‘পাতালভেদী রাজা’ নড়াইলে প্রত্ততত্ত্ব অধিদপ্তরের খনন কাজ

নড়াইল

রাজার ছেলে-মেয়েদের দুধ দিয়ে গোছল করাতেন! রাজারস্মৃতি‘পাতালভেদী রাজা’ নড়াইলে প্রত্ততত্ত্ব অধিদপ্তরের খনন কাজ

 

নড়াইল  প্রতিনিধি
রাজা নেই, রাজ্য নেই, নেই রাজবাড়ীর চিহৃ, তবুও আছে রাজার স্মৃতি
‘পাতালভেদী রাজা’। ভূগর্ভ বা পাতালের এই বিশেষ সুড়ঙ্গ পথ এই রাজার নামে
বিশিষ্টতা লাভ করেছে। এই রাজার কোনো নাম জানা না গেলেও  পাতালের সুড়ঙ্গ
পথের জন্য লোকে ‘পাতালভেদী রাজার বাড়ি’ বলে থাকেন।
নড়াইলে রূপকথার সেই পাতালভেদি রাজার বাড়ির পুরাকীর্তি অনুসন্ধানে
প্রথমবারের মত খনন কাজ শুরু হয়েছে। খননে ইটের আকার ও কারুকার্য ঐ স্থান
এবং আশেপাশের্^র ভৌগোলিক কাঠামো দেখে প্রতœতাত্ত্বিকরা প্রাথমিকভাবে
অনুমান করছেন এটি আদি ঐতিহাসিক যুগের কোনো প্রতœস্থান ছিল।
নড়াইল শহর হতে সাত মাইল উত্তরে নবগঙ্গা নদীর তীরে সদরের হবখালী ইউনিয়নের
নয়াবাড়ি গ্রাম। কিংবদন্তি অনুযায়ী এই গ্রামেই বসবাস করতেন বিখ্যাত এক
রাজা। এই রাজা সম্পর্কে ইতিহাসে তেমন কোন তথ্য পাওয়া যায়না। সরেজমিনে
গিয়ে দেখা গেছে, প্রতœস্থানের খনন কাজ দেখতে আশে পাশের কয়েক গ্রামের
অসংখ্য উৎসুক গ্রামবাসী ভীড় করছেন এবং  তারা রূপকথার মতো বিভিন্ন গল্প
শোনান।
কথিত রাজার বাড়ি উঁচু ডিবি এবং তার চারপার্শে মেহগিনি ও কলা গাছের চাষ
করা হয়েছে। এছাড়া ডিবির নীচে ও চারপাশের্^ দীঘি-পুকুরের সমস্ত জায়গা এখন
ভরাট হয়ে গেছে এবং স্থানীয় মানুষ নিজেদের দাবি করে ধানসহ বিভিন্ন ফসলের
চাষ করছেন ।
খনন কাজ দেখতে আসা স্থানীয় নয়াবাড়ি গ্রামের মিকাইল মোল্যা (৯০), শাহীনুর
মোল্যা (৭০), সিদ্দিক মোল্যা, আমেনা বেগম (৭৫), মাতোয়ারা বেগম (৫০)
জানান, আমরা দেখেছি  ৪০ বছর আগেও এসব জায়গা ছিল গভীর জঙ্গলে ভরা। রাতের
বেলায় ভয়ে এখানে কেউ আসতো  না। এখানে বিশাল বিশাল গাছগাছালি ছিল। প্রায়
তিন একর জুড়ে একটি বিশাল আম গাছ ছিল। আমরা সে গাছ থেকে আম পেড়ে খেয়েছি।
এ রাজবাড়ি থেকে এ গ্রামের মানুষ ইচ্ছামতো  ইট নিয়ে ব্যবহার করেছে। এর
চারপাশের্^ দীঘি ছিল, যা আমরা দেখেছি। বাবা-দাদাদের কাছ থেকে শুনেছি, এই
রাজার রাজপ্রাসাদ শত্রুমুক্ত রাখতে চারপাশের্^ ছিল বিশাল দীঘি। এখানে
একটি গভীর পুকুর ছিল, যার নাম ছিল দুধ পুকুর, রাজার ছেলে-মেয়েদের বিভিন্ন
সময় দুধ দিয়ে গোছল করাতেন। এই দুধ পুকুরের পাশেই একটি সুড়ঙ্গ পথ ছিল।
রাজা ও তার পরিবার বহিঃশত্রুর আক্রমন থেকে রক্ষা পেতে দূর্গবাড়ির পূর্বে
নবগঙ্গা নদীর ঘাট পর্যন্ত আধা কিঃমিঃ চুনসুড়কির গাথুনি বিশিষ্ট ইটের
খিলান দ্বারা ভূগর্ভস্থ এক সুড়ঙ্গ পথ ছিল, যে পথে তারা যাতায়াত করতেন।
স্থানীয় জায়গার মালিক ফরিদ খন্দকার (৭০) এ ভিটা তাদের বাপ-দাদাদের ভিটা
দাবি করে বলেন, এখানে তাদের শরিকদের ৫০ শতাংশ জমি রয়েছে। খনন কাজে তাদের
কোনো আপত্তি নেই। তবে সরকার যদি নিয়ে নেয় তাহলে এ জায়গার ক্ষতিপূরণ দাবি
করেন।
এখানে কর্মরত শ্রমিক আব্দুর রহমান জানান, উপরি অংশের কোনো স্থাপনার কোনো
চিহৃ নেই। এখন নীচের দিকে আমাদের খনন কাজ চলছে। প্রতিদিন আমরা এখানে ১২জন
শ্রমিক ৪টি স্পটে খনন কাজ শুরু করেছি।
প্রতœতত্ব অধিদপ্তর খুলনা অঞ্চলের সহকারী পরিচালক খনন কাজের ভারপ্রাপ্ত
কর্মকর্তা মোঃ গোলাম ফেরদৌস  বলেন, প্রায় ৩২ একর জায়গার ওপর
শনিবার (১ এপ্রিল) থেকে এখানে খনন কাজ শুরু হয়েছে। পরীক্ষামূলকভাবে ১৫দিন
কাজ চলবে। এরপর সম্ভাব্যতা যাচাই করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ইটের
ধরণ ও চারপাশের্^র ভৌগোলিক কাঠামো দেখে মনে হচ্ছে এটি আদি ঐতিহাসিক যুগের
প্রতœস্থান ছিল এবং এর যথেষ্ট রাজনৈতিক, সামাজিক,সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয়
গুরুত্ব রয়েছে। প্রথম অবস্থায় খনন কাজের ইটের আকার ও কারুকার্য দেখে মনে
হয়েছে এটা সুলতানী বা মোঘল আমলের। তবে আরও খনন করলে বোঝা যাবে এর আগে
অন্য কোনো আমলের স্থাপত্য ও রাজত্ব ছিল কিনা। যেহেতু প্রতœতত্ত্ব
অধিদপ্তর একটি গবেষণাধর্মী প্রতিষ্ঠান সেহেতু এখনও স্পষ্ট করে কিছু বলার
সময় আসেনি।