Type to search

যশোরে প্রায় অর্ধেক নমুনাই করোনা পজেটিভ

যশোর স্বাস্থ্যবিধি

যশোরে প্রায় অর্ধেক নমুনাই করোনা পজেটিভ

অপরাজেয় বাংলা ডেক্স : যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (যবিপ্রবি) জেনোম সেন্টারের পরীক্ষায় আজ প্রায় ৪৪ শতাংশ নমুনা পজেটিভ রেজাল্ট দিয়েছে; যা এযাবৎকালের রেকর্ড।

অণুজীববিজ্ঞানীরা বলছেন, সম্ভবত করোনাভাইরাসের নতুন মিউটেশন এই অঞ্চলে এসেছে, যা এই গরমেও যথেষ্ট কার্যকর। এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের রিসার্চ টিম ভাইরাসের জিন সিকোয়েন্সিংয়ের কাজ করছে। কাজ শেষ হলে বলা যাবে, ঠিক কোন ধরনের করোনাভাইরাস মানুষকে আক্রান্ত করছে।
আজ শনিবার যবিপ্রবি থেকে যে ফলাফল পাঠানো হয়েছে, তাতে দেখা যাচ্ছে, গেল রাতে তাদের ল্যাবে মোট ১৬১টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়; যেগুলো সন্দেহভাজন করোনা রোগীদের শরীর থেকে সংগ্রহ করা। এর মধ্যে ৭০টি নমুনাই পজেটিভ রেজাল্ট দিয়েছে। অর্থাৎ পরীক্ষিত নমুনার প্রায় ৪৪ শতাংশ পজেটিভ। করোনা শনাক্তের এতো উচ্চ হার এই ল্যাবে গত একবছরে আর দেখা যায়নি। বিষয়টি সুবর্ণভূমিকে নিশ্চিত করেছেন বিশ্ববিদ্যালেয়ের অণুজীববিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান ও পরীক্ষণ দলের সদস্য প্রফেসর ড. ইকবাল কবির জাহিদ।
এদিন যশোর জেলার মোট ১৩০টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এর মধ্যে ৬২টি পজেটিভ ফল দেয়। পজেটিভ ফলের হার ৪৭ দশমিক ৬৯ শতাংশ। অর্থাৎ যশোর স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে পাঠানো নমুনার প্রায় অর্ধেকই করোনাভাইরাস আক্রান্ত।
এছাড়া এদিন নড়াইল জেলার ছয়টি নমুনার মধ্যে একটি এবং মাগুরার ২৫টি নমুনার মধ্যে সাতটিতে কোভিড-১৯-এর অস্তিত্ব পাওয়া যায়। শতাংশের হারে নড়াইলের অবস্থা খুব খারাপ না হলেও মাগুরার অবস্থা উদ্বেগজনক।

পরীক্ষা সংক্রান্ত সকল তথ্য সংশ্লিষ্ট জেলাগুলোর সিভিল সার্জন অফিসে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
এদিকে, আজকের করোনা পরীক্ষার ফলাফল হাতে পাওয়ার পর যোগাযোগ করা হয় যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই অণুজীববিজ্ঞানীর সঙ্গে। তারা দুইজনই পরিস্থিতি যে উদ্বেগজনক, সেই বিষয়ে একমত হন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের অণুজীববিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. ইকবাল কবির জাহিদ সুবর্ণভূমিকে বলেন, করোনাভাইরাসের নতুন মিউটেশন এসেছে হয়তো; যেগুলো উচ্চতাপও সহনশীল। কিন্তু পরীক্ষা সম্পন্ন না করে নির্দিষ্ট করে বলা যাবে না।
চলতি সপ্তাহজুড়ে যশোর অঞ্চলে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা মোটামুটি ৩৬ থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে উঠানামা করছে। দুপুরের দিকে ৪২-৪৩ ডিগ্রি তাপমাত্রা অনুভূত হচ্ছে। আজ দুপুরে এই রিপোর্ট লেখার সময় যশোর শহরে তাপমাত্রা বিরাজ করছিল ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
গোটা দুনিয়ার বিজ্ঞানীদের অনেকেই বলেছিলেন, উচ্চ তাপমাত্রায় সম্ভবত করোনাভাইরাস টিকে থাকতে পারবে না অথবা দুর্বল হয়ে পড়বে। কিন্তু বাংলাদেশে গেল প্রায় এক সপ্তাহজুড়ে করোনাভাইরাসের দ্রুত ঊর্ধ্বগতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। দেশের অন্যতম উষ্ণ অঞ্চল যশোরেও একই অবস্থা। এখানকার পরীক্ষাগার থেকে প্রতিদিন যে ফলাফল প্রকাশ করা হচ্ছে, তাতে দেখা যাচ্ছে, করোনা পরিস্থিতি দ্রুত অবনতির দিকে ধাবমান।
এমন পরিস্থিতিতে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অণুজীববিজ্ঞানীরা কী করছেন? জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের অণুজীববিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. সেলিনা আক্তার সুবর্ণভূমিকে বলেন, ‘দুনিয়ায় করোনার নতুন নতুন ভেরিয়েন্ট আসছে। আমাদের এখানে আসলে কোন ভেরিয়েন্ট মানুষকে আক্রান্ত করছে, তা খুঁজে দেখতে  আমাদের রিসার্চ টিম কাজ করছে।’
একই বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. ইকবাল কবির জাহিদ সুবর্ণভূমিকে বলেন, ‘করোনার কোন ভেরিয়েন্ট মানুষকে আক্রান্ত করছে, তা নিশ্চিত হতে জিন সিকোয়েন্সিংয়ের কাজ চলছে। প্রথম দফা সিকোয়েন্সিং শেষ হলেও তা নিয়ে আমাদের মধ্যে কিছু কনফিউশন রয়েছে। সেই কারণে দ্বিতীয় দফা কাজ করা হচ্ছে। আশা করা যায়, শিগগির রেজাল্ট জানা সম্ভব হবে। সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার পথও খুলে যাবে।’
হঠাৎ করোনা আক্রান্তের উচ্চহার সম্বন্ধে ড. সেলিনা বলছেন, ‘এক-দুইদিনের ফলাফল দেখে এটা নিশ্চিত হওয়া যাবে না। স্বাস্থ্য বিভাগ নমুনা পাঠায় আমাদের ল্যাবে। যদি হাসপাতালে ভর্তি থাকা রোগী অথবা ভারতগামী রোগীদের নমুনা পাঠানো হয়, সেখানে স্বাভাবিকভাবেই আক্রান্তের সংখ্যা বেশি থাকবে। তবে গোটা দেশের মতো যশোরেও যে করোনা রোগীর সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে- এতে কোনো সন্দেহ নেই।’
এমন পরিস্থিতিতে জনসাধারণকে বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া বাড়ির বাইরে বেরুতে নিষেধ করছেন উল্লিখিত দুই অণুজীববিজ্ঞানী। ড. ইকবাল কবির জাহিদ বলেন, বাইরে বেরুলে সবাইকে অবশ্যই মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে কঠোরভাবে।

সূত্র, সুবর্ণভূমি