Type to search

মা-ছেলে হেলিকপ্টার বাড়ি ফিরলেন ! দেখতে জনতার ভিড়

নড়াইল

মা-ছেলে হেলিকপ্টার বাড়ি ফিরলেন ! দেখতে জনতার ভিড়

নড়াইল প্রতিনিধি
‘জমিজমা সব বিক্রি করে চার বছর আগে ছেলেকে বিদেশ পাঠিয়েছিলাম। মাসখানেক
আগে ছেলে জানালো ছুটিতে বাড়ি আসবে। ছেলে জানতে চাইল আমার জন্য কী আনবে?
কিছুটা সংকোচ নিয়ে মনে জমে থাকা আশার কথা জানালাম। বললাম, তুমি যেদিন
বাড়িতে আসবে তোমার সঙ্গে আমি ঢাকা থেকে হেলিকপ্টারে বাড়িতে আসতে চাই।
ছেলে সেই কথা রেখেছে। কিন্তু এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না, আমার ছেলে আমার সেই
স্বপ্ন পূরণ করেছে। নড়াইলের কালিয়া উপজেলার মাউলি ইউনিয়নের কাঠাদুরো
গ্রামের সৌদিপ্রবাসী ছেলে শরিফুল ইসলামের সঙ্গে বাড়ির পাশে হেলিকপ্টার
থেকে নেমে মা অলেকা বেগম এভাবেই নিজের অনুভূতি প্রকাশ করেন। অলেকা বেগম
আরও বলেন, আমরা খুব গরিব। আমার ছেলে স্বপ্ন পূরণ করে আমাকে যে আনন্দ
দিয়েছে তা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। দোয়া করি আমার সন্তানকে আল্লাহ অনেক
বড় করুক, অনেক ভালো রাখুক।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, অলেকা বেগমের পরিবার খুব কষ্টে দিনাতিপাত
করত। ভাগ্যের চাকা ঘুরাতে জমিজমা সব বিক্রি করে একমাত্র ছেলেকে সৌদি
পাঠান মা অলেকা বেগম। ছেলেকে বিদেশ পাঠানোর পর থেকে কিছুটা সচ্ছলতা আসতে
থাকে পরিবারটিতে। সোমবার ভোরে সৌদিপ্রবাসী শরিফুল হযরত শাহজালাল
আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণের আগেই মা অলেকা, বোনজামাই শওকত মোল্যা,
ছেলে তাজ বিমানবন্দরে হাজির হন।
এদিকে শরিফুল ইসলাম তার মাকে নিয়ে ঢাকা থেকে হেলিকপ্টারে আসবেন এ খবরে
এলাকার হাজারো উৎসুক জনতা ভোর থেকেই তাদের বাড়ির আঙিনায় ভিড় জমাতে থাকেন।
সকাল ১০টায় বেসরকারি বিমান সংস্থার একটি হেলিকপ্টারে রওনা হলেও ভুল তথ্য
দেওয়ার কারণে পাইলট তাদের বহনকারী হেলিকপ্টার নিয়ে বাগেরহাট জেলার
ফকিরহাটের কাঠাদুরো সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অবতরণের চেষ্টা করেন। পরে
সেখান থেকে পাইলট আবার ঢাকায় ফেরত যান।
পরবর্তীতে সঠিক লোকেশন জেনে বিকেলের দিকে পুনরায় রওনা দেওয়ার সিদ্ধান্ত
নেন। অবশেষে সৌদি প্রবাসী শরিফুল বাড়ির আঙিনায় মায়ের হাত ধরে হেলিকপ্টার
থেকে নামেন।
সৌদি প্রবাসী শরিফুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, শুধুমাত্র মায়ের ইচ্ছা
পূরণের জন্যই হেলিকপ্টারে এসেছি। অর্থনৈতিকভাবে এতটা স্বাবলম্বী না হলেও
মায়ের স্বপ্ন পূরণ করাটা আমার কাছে মুখ্য ছিল। শুধু আমি না, প্রতিটি
সন্তানেরই উচিত বাবা-মাকে দেখাশোনার পাশাপাশি তাদের স্বপ্ন পূরণ করা।
আমাদের দেওয়া ভুল লোকেশনের কারণে প্রথমে অন্য জায়গায় চলে গিয়েছিলাম।
ঢাকায় ফেরার পর মা-ও বলেছিল হেলিকপ্টারে উঠেছি, এখন আমরা গাড়িতে চলে যাই।
কিন্তু তখন আমার কাছে মনে হয়েছিল মা তো বাড়ির পাশে নামতে চেয়েছিল। তাহলে
টাকা যায় যাক, মায়ের ইচ্ছা পূরণ করবো। বাবা বেঁচে নেই। মা যতদিন বেঁচে
থাকবেন এমনি করে সেবা করবো।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *