Type to search

ভূমিকম্প ঝুঁকিতে যত জেলা

অন্যান্য

ভূমিকম্প ঝুঁকিতে যত জেলা

 

অপরাজেয়বাংলা ডেক্স: দেশে ভূমিকম্পের প্রবণতা বাড়ছে। সবচেয়ে বেশি ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকার মধ্যে রয়েছে সিলেট। গত কয়েক দিন উল্লেখযোগ্য হারে সিলেটে ভূকম্পন অনুভূত হয়েছে। সিলেটের ঘনঘন ভূমিকম্প আতঙ্ক ছড়াচ্ছে সারা দেশেই। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভূমিকম্পের দিক থেকে সিলেট ছাড়াও রাঙামাটি, বান্দরবান, কক্সবাজার, ঢাকা ও চট্টগ্রাম জেলা মাঝারি ঝুঁকিপূর্ণ এবং পশ্চিম ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল সর্বাপেক্ষা কম ঝুঁকিপূর্ণ।

নেচার জিওসায়েন্স জার্নালের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে বড় ধরনের ভূমিকম্পের ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে। ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকার মানচিত্র অনুযায়ী সিলেট ও চট্টগ্রাম উচ্চ ঝুঁকিপ্রবণ অঞ্চল। এতে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, ভূমিকম্পের অন্যতম প্রধান কারণ হলো ভূত্বকীয় পাত (টেকটনিক প্লেট)। বাংলাদেশ তিনটি প্লেটের সংযোগস্থলে রয়েছে। ইন্ডিয়ান ও বার্মিজ প্লেটের মধ্যে অবস্থান করছে সিলেট। সিলেটের উত্তরে রয়েছে ডাউকি ফল্ট। টেকটনিক প্লেটগুলোয় প্রচুর শক্তি জমা হচ্ছে। আর জমে থাকা এসব শক্তি যে কোনো সময় ভূমিকম্পের মাধ্যমে বেরিয়ে আসতে পারে। ফলে অতিমাত্রায় ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে রয়েছে বাংলাদেশ।

যুক্তরাষ্ট্র, বাংলাদেশ ও সিঙ্গাপুরের গবেষকরা বলছেন, সিলেট, রাঙামাটি, বান্দরবান, কক্সবাজার, ঢাকা ও চট্টগ্রাম জেলা মাঝারি ঝুঁকিপূর্ণ এবং পশ্চিম ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল সর্বাপেক্ষা কম ঝুঁকিপূর্ণ। ডাউকি ফল্ট বা সিলেট থেকে চট্টগ্রামের পাহাড়ি অঞ্চলে গত ৫০০ থেকে ১ হাজার বছরে বড় ধরনের কোনো ভূমিকম্প হয়নি। ফলে সাম্প্রতিক ভূমিকম্পগুলো বড় ধরনের ভূমিকম্পের পূর্বাভাস দিচ্ছে।গবেষক দলের প্রধান নিউইয়র্কের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ববিদ মাইকেল স্টেকলার টমসন বলেন, এ ধরনের ভূমিকম্প কবে ঘটতে পারে সে পূর্বাভাস আরও গবেষণা না করে দেওয়া সম্ভব নয়। ১০ বছরের তথ্য বিশ্লেষণ করে একটি কম্পিউটার মডেল তৈরির মাধ্যমে তারা দেখিয়েছেন বাংলাদেশ ও ভারতের পূর্বাংশের ভূগাঠনিক প্লেট উত্তর-পূর্ব দিকে সরে গিয়ে মিয়ানমারের পশ্চিমাঞ্চলের ভূগাঠনিক প্লেটে চাপ সৃষ্টি করছে, যাতে সৃষ্টি হচ্ছে অস্থিরতা।

গবেষক দলের অন্যতম সদস্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থ অবজারভেটরির পরিচালক ও ভূতত্ত্ববিদ অধ্যাপক সৈয়দ হুমায়ুন আখতার বলছেন, গঙ্গা ও ব্রহ্মপুত্র অববাহিকায় ১৯ কিলোমিটার গভীর পলি জমে বাংলাদেশের যে ভূখ- তৈরি হয়েছে তা সেই ভূমিকম্পের প্রভাবে জেলাটিনের মতো কেঁপে উঠতে পারে এবং কিছু কিছু জায়গায় তরলে পরিণত হয়ে গ্রাস করতে পারে ইমারত, রাস্তাঘাট আর মানুষের বসতি। তাদের এ গবেষণায় প্রায় ৬২ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাকে এ ভূমিকম্পের ঝুঁকির আওতায় বলা হয়েছে।

সিলেটে দফায় দফায় ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠাকে বড় ধরনের ভূমিকম্পের পূর্বাভাস বলে মনে করছেন কোনো কোনো বিশেষজ্ঞ। তাদের মতে ৮ মাত্রার ভূমিকম্প হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে বাংলাদেশ। আর এ মাত্রার ভূমিকম্প হলে ঢাকা শহরে ১ থেকে ২ লাখ মানুষের প্রাণহানি হবে। তাই জরুরি ভিত্তিতে ভবনগুলোর ভূমিকম্প প্রতিরোধক্ষমতা পরীক্ষা করার পরামর্শ দিয়েছেন তারা। ভূমিকম্পের কারণে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি ও ঝুঁকি কমাতে সচেতনতা মহড়া বাড়ানোর ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন তারা।

উল্লেখ্য, ২৯ মে সাতবার এবং ৩০ মে একবার সিলেটে ভূমিকম্প অনুভূত হয়। ৭ জুনও এখানে দেড় মিনিটের মধ্যে দুই দফা ভূমিকম্প হয়েছিল। বাংলাদেশে ভূমিকম্পপ্রবণ ‘ডাউকি ফল্ট’ লাইনে থাকা সিলেট অঞ্চলে এর আগে উচ্চমাত্রার ভূমিকম্প হয়েছিল ১৮৯৭ সালে। রিখটার স্কেলে ৮ মাত্রার ওপরে থাকা সেই ভূমিকম্পে সিলেটে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল।সূত্র,বিডি প্রতিদিন

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *