Type to search

ভবদহে পানিতে নেমে হাজারো নারী পুরুষের মানববন্ধন

অভয়নগর

ভবদহে পানিতে নেমে হাজারো নারী পুরুষের মানববন্ধন

স্টাফ রিপোর্টার: ত্রাণ চাই না পানি সরাও, স্থায়ী সমাধানের জন্য টি আর এম (টাইডল রিভার ম্যানেজমেন্ট) বাস্তবায়ন কর দাবিতে ভবদহের মশিয়াহাটী বহুমুখি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মাঠে হাজারো নারী পুরুষের মানববন্ধন পালিত হয়েছে। সোমবার সকাল সাড়ে দশটা থেকে সাড়ে ১২টা পর্যন্ত চলে এ মানববন্ধন। এলাকা ঘুরে ও মানববন্ধনে আসা লোকদের কাছ থেকে জানা গেছে, পলি জমে শ্রী , হরি নদী ভরাট হয়ে যাওয়ায় এ বছর এক বিন্দু পানি নিষ্কাশন হচ্ছে না। যার দরুন এলাকায় দেখা দিয়েছে জলাবন্ধতা। ইতো মধ্যে প্রায় একশত গ্রাম পনিতে তলিয়ে গেছে।

 

 

রান্নাঘরে পানি। পানিতে সয়লাব গোয়াল। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পানি। পানি উঠেছে ধর্মীয় উপাসনালয়ে। এই পানি সরানোর দাবিতে ফুঁসে উঠেছে পানিবন্দী মানুষ। দাবি তুলছেন, ভবদহ জলাবদ্ধার স্থায়ী সমাধানের জন্য টিআরএম(টাইডলি রিভার ম্যানেজমেন্ট-জোয়ারাধার) বাস্তবায়নের। আর এ দাবিতে কোমর পানিতে দাঁড়িয়ে মানববন্ধন করেছেন হাজারো নারী-পুরুষ। সোমবার সকালে যশোরের অভয়নগর উপজেলার মশিয়াহাটী বহুমুখী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মাঠে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটি এই মানববন্ধনের ডাক দেয়।

 

 

এ সময় তাঁরা বিভিন্ন স্লোগান দেন ও বিক্ষোভ প্রদর্শণ করতে থাকেন। তাঁদের হাতে ভবদহ সমস্যার স্থায়ী সমাধান চাই, ত্রাণ চাই না, পানি সরাও, ভবদহ অঞ্চলে মহাবিপর্যয়ের অশনিসংকেত, মাঘী পূর্ণিমার আগেই বিল কপালিয়ায় টিআরএম প্রকল্প অবিলম্বে বাস্তবায়ন কর, এলাকার সকল নদী-খাল পুনরুদ্ধার ও অবমুক্ত করতে হবে, জলাবদ্ধতা নিরসনে সংস্কার কাজে দুর্নীতির বিচার করতে হবে, ভবদহ স্লুইসগেটের ২১ ও ৯ ভেন্টের মাঝ দিয়ে সরাসরি নদী সংযোগ দিতে হবে, আমডাঙ্গা খাল প্রশস্ত ও গভীর করে খনন করতে হবে, ক্ষতিগ্রস্থদের পুনর্বাসন চাই, অপরিকল্পিত মাছের ঘের নয়, পানিপ্রবাহের সকল বাঁধ উচ্ছেদ করতে হবে, এলাকার সকল নদী-খাল পুনরুদ্ধার ও অবমুক্ত করতে হবে লেখা প্লাকার্ড বহন করে তারা।

মানববন্ধন চলাকালে বক্তব্য রাখেন ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির আহবায়ক রনজিৎ বাওয়ালী, প্রধান উপদেষ্টা ইকবাল কবির জাহিদ, যুগ্ম আহবায়ক গাজী আব্দুল হামিদ, সদস্য সচিব চৈতন্য পাল, অনিল বিশ্বাস, কনৌজ চন্ডাল, শিবুপদ বিশ্বাস, কানু বিশ্বাস, মানব মন্ডল, কার্তিক বকশি, রাজু আহমেদ, পল্লী ডাক্তর শহিদুল ইসলাম,উত্তম কুমার বিশ^াস, উৎস কুমার, শেখর বিশ^াস, কার্তিক বকসি, সুকৃতি রায়, প্রদীপ হালদার. অনির্বান ধর,
প্রমুখ। বক্তারা বলেন, এক মহাবিপর্যয় জলাবদ্ধতার আশংকায় আমরা শঙ্কিত। ইতিমধ্যে এলাকার শতাধিক গ্রাম পানিতে তলিয়ে গেছে। এ সংখ্যা প্রতিদিন বাড়ছে। পানিবন্দী হয়ে পড়েছে প্রায় দুই লাখ মানুষ। আর একটু বৃষ্টিপাত হলে কেশবপুর, মনিরামপুর, অভয়নগর উপজেলা শুধু নয় যশোর সদর উপজেলা ও শহরের এক অংশ এবং সেনানিবাস পর্যন্ত জলাবদ্ধতা বিস্তৃত হবে। এই এলাকার মানুষ কীভাবে বাঁচবে সেটাই এখন প্রশ্ন। অপরদিকে নদী শুকিয়ে আছে। ভবদহ স্লুইসগেট থেকে বারো আউড়িয়া মোহনা পর্যন্ত ৫০-৬০ কিলোমিটার বিপদজনকভাবে ভরাট হয়ে গেছে। আমরা বারবার সরকার, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডকে অবহিত ও ক্ষোভ-বিক্ষোভ করলেও তাতে ভূরুক্ষেপ করা হয়নি। যথাসময়ে বিল কপালিয়া ও অন্যান্য বিলে টিআরএম চালু করলে এই পরিস্থিতির উদ্ভব হতো না। এই জনপদ মানবিক-অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা পেত। সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে বিল কপালিয়ায় টিআরএম বাস্তবায়নের দাবি জানাচ্ছি। আমরা আজ বাধ্য হয়ে পানির মধ্যে দাঁড়িয়ে মানববন্ধন করছি। পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের ভ্রান্তনীতি ও দুর্নীতি লুটপাটের কারণে ৪০ বছরের অধিক কাল ধরে ভবদহ অঞ্চলের মানুষ মহা বিপর্যয়ের আবর্তে ঘুরপাক খাচ্ছে। জলাবদ্ধতা মানুষের নিত্যসাথী। ভ্রান্ত নীতি ও কায়েমী স্বার্থের হাতে জনপদের মানুষ জিম্মী। যে নীতি এ অঞ্চলের ভূ-প্রাকৃতিক বৈশিষ্ঠ, নদী পানি ব্যবস্থাপনা, জীব বৈচিত্র ও জীবন যাত্রা প্রণালী বিপর্যস্ত করে স্থায়ী সংকট সৃষ্টি করে। ভবদহ স্লুইসগেটের মাধ্যমে নদীকে হত্যা করা হয়েছে। এটা একটা মরণফাঁদ। এর কোন কার্যকারিতা নেই। এই প্রকল্প গ্রহণের ক্ষেত্রে পরিবেশ ও জনমত সমীক্ষার নীতিমালা না মেনে জনমতকে উপেক্ষা করে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় ৮০৮ কোটি টাকার প্রকল্প উত্থাপন করেছে, যা সরকারি নীতিমালার চরম লঙ্ঘন। প্রকল্পে তিন-ফসলী বিলগুলোকে জলাশয় দেখানো হয়েছে, যা চরম মিথ্যাচার ছাড়া কিছু নয়। পলিবাহিত নদী কেটে নদী রক্ষার যুক্তি অবৈজ্ঞানিক ও অর্থ লোপাটের ফন্দি ছাড়া কিছু নয়। নদী কেটে নদী বাঁচানো যায় না। সমস্যার স্থায়ী সমাধানের পথে না গিয়ে সমস্যাকে জিইয়ে রেখে প্রতি বছর নদীতে পাইলট চ্যানেল খননের নামে অর্থ অপচয়, দুর্নীতি ও অনিয়মের ব্যবস্থা অব্যাহত রাখা হয়েছে। প্রতি বছর নদীতে পাইলট চ্যানেল খনন করা হয় তার ফলাফল শূন্য। ভবদহ স্লুইসগেটের ৯-ভেন্টের সামনে ৬০০ মিটার খোঁড়াখুড়ি হয়েছে তার কোন কার্যকারিতা নেই। সেখানে মাছচাষ করছে ভবদহ ক্যাম্পের পুলিশ।