Type to search

ভবদহের দাবি আদায়ের লক্ষে খুলনার পানি উন্নয়ন বোর্ডের সামনে বিক্ষোভ

অভয়নগর

ভবদহের দাবি আদায়ের লক্ষে খুলনার পানি উন্নয়ন বোর্ডের সামনে বিক্ষোভ

প্রিয়ব্রত ধর:
যশোর জেলার ৪ টি ও খুলনা জেলার একটি উপজেলার বিস্তৃর্ণ জনপদ দীর্ঘ চার দশকের অধিক সময় ধরে স্থায়ী জলাবদ্ধতায় আক্রান্ত। জলাবদ্ধতায় আক্রান্ত জনপদের ২ শতাধিক গ্রামের ১০ লক্ষাধিক জনগণ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে পানি উন্নয়ন বোর্ড,পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়, ঠিকাদার, রাজনৈতিক দুর্বিত্তায়ন,সুবিধাভোগী চাটুকার ও ঘের মালিকদের সমন্বয়ে গড়ে ওঠা চক্রবূহ্যের চাকায় পিষ্ঠ।
আর এই দৃশ্যমান  চক্রটি অকার্যকর ভবদহ নামক স্লুইসগেটকে পূঁজি করে সরকারের কোটি কোটি টাকা লুটপাটের জন্য নিজেদের মনগড়া কল্পনাপ্রসূত প্রকল্প বাস্তবায়নে জনগণকে জিম্মি করে আছে।
 ফলে ভবদহ নামক অকার্যকর স্লুইসগেটের জন্য গত ১৯ সেপ্টেম্বর -২০২১ তারিখ থেকে শুরু হওয়া কয়েকদিনের বৃষ্টিপাতে যশোর জেলার অভয়নগর, মনিরামপুর ও কেশবপুর উপজেলার ১২০ টি গ্রাম আংশিক ও সম্পূর্ণ তালিয়ে ৩ লক্ষাধিক লোক দীর্ঘ ২ মাস যাবত স্থায়ীভাবে পানিবন্ধী হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে।
অদ্যাবধি  ঘরবাড়ি,রাস্তাঘাট, স্কুল-কলেজ,মসজিদ-মন্দির,  গোরস্থান, শশ্মানঘাট পানিতে তলিয়ে আছে। ঘরে খাবার নেই,বসবাসের উপযুক্ত পরিবেশ নেই,চলাচলের রাস্তা নেই,মৃতের দাফনের জায়গা নেই, গো- খাদ্যের ব্যবস্থা নেই, এমনকি পয়ঃনিষ্কাশন ও বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা নেই এবং দীর্ঘদিন যাবত পানিতে বসবাসের ফলে নানারকম পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হয়ে অমানবিক জীবন যাপন করছে।কিন্তু আজ পর্যন্ত সরকারি, বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থা,মানবিক সংগঠনসহ রাজনৈতিক নেতাদেরও ত্রাণ নিয়ে পাশে দাঁড়াতে দেখা যায়নি।
প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা “ নদী বাঁচলে, বাঁচতে দেশ”- এই স্লোগানকে অগ্রাহ্য করার ফলে ভবদহ নামক স্লুইসগেট থেকে মোহনা পর্যন্ত ৬০/৭০ কিলোমিটার নদী ভরাট হয়ে পানি বের হওয়ার পথ বন্ধ হয়ে গেছে।
উল্লেখিত পরিণতির কথা বার বার বলা সত্ত্বেও পানি উন্নয়ন বোর্ড ও পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়,স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাাহ সরকারের উচ্চ পর্যায়ের মন্ত্রী, আমলারা কর্ণপাত না করায় আজ ১৫ নভেম্বর-২০২১ রোজ সোমবার  সকাল ১১ ঘটিকায় ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির আহ্বানে দূর্গত এলাকার কয়েক শতাধিক নারীপুরুষ  দক্ষিণ-অঞ্চলের পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন।
শিক্ষক শিবপদ বিশ্বাসের সঞ্চালনায় ও ভবদহ  সংগ্রাম কমিটির আহবায়ক রনজিত বাওয়ালীর  সভাপতিত্বে  অনুষ্ঠিত বিক্ষোভ কর্মসূচিতে বক্তব্য রাখেন কমিটির প্রধান উপদেষ্টা ইকবাল কবির জাহিদ, যুগ্মআহ্বায়ক গাজী আব্দুল হামিদ, সদস্য সচিব চৈতন্য কুমার পাল, সংগ্রাম কমিটির নেতা অধ্যাপক অনিল বিশ্বাস, হাজিরহাট আঞ্চলিক কমিটির সদস্য সচিব কার্ত্তিক বকসি , সুন্দলী আঞ্চলিক কমিটির আহবায়ক সাধন বিশ্বাস, যুগ্ম আহ্বায়ক নীলকন্ঠ মন্ডল,মশিয়াহাটি আঞ্চলিক কমিটির আহবায়ক উৎপল বিশ্বাস,  মনোহরপুর ইউনিয়ন আঞ্চলিক কমিটির আহবায়ক শেখর বিশ্বাস, সংগ্রাম কমিটির নেতা, ডাঃ শহিদুল হক, রাজু আহমেদ,  ব্রজেন সরকার, মহেন্দ্রনাথ রায়, তৃষা চামেলি, শান্তনু চক্রবর্তি, প্রমুখ।
বক্তরা বলেন, অতিদ্রুত দূর্গত এলাকার সকল নদ-নদীসহ আমডাঙ্গাখাল প্রশস্ত ও গভীর করে খনন ভৈরব নদের সাথে সংযুক্ত করে টিআরএম ( টাইডাল রিভার্স ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম)  চালু করা না গেলে ভবদহ এলাকার স্থায়ী জলাবদ্ধতা যশোর শহরকে অতিক্রম করে যশোর  সেনানিবাস পর্যন্ত বিস্তৃত হবে এবং এই  জনপদের বিপুল সংখ্যক লোক গৃহহীন হয়ে বাস্তুচ্যুত হবে।
বিক্ষোভ কর্মসূচি শেষে  ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির নেতৃবৃন্দ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলীর মাধ্যমে ১. অবিলম্বে বিল কপালিয়ায় টিআরএম প্রকল্প গ্রহন ও ভরাট হওয়া হরি নদীর পানি অপসরণ করা, ২. জমি অধিগ্রহণ করে আমডাঙ্গা খাল গভীর ও প্রসস্থ করে খালের পূর্বাংশের দুই পাশে স্থায়ী টেকসই প্রাচীর নির্মাণ করা এবং ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করা, ৩. বাড়িঘরের পানি নামানোর জন্য এখনই ভবদহ স্লুইজগেটের ২১ ভেন্টের সকল কপাট খুলে দিয়ে ভাটির সময়  নদীর ৭/৮ কিলোমিটার চ্যানেল কাটার ব্যবস্থা করা,৪. প্রস্তাবিত ৫০ কোটি টাকার সেচ প্রকল্প বাতিল করা,৫. ভবদহ এলাকার বিভিন্ন প্রকল্পে দূর্ণীতি,অনিয়ম এবং কপালিয়ার বিলে টিআরএম প্রকল্প বাস্তবায়নের সরকারি সিদ্ধান্ত বানচালকারীদের বিচারের আওতায় আনা, ৬. সমগ্র কাজ সেনা বাহিনীর তত্ত্বাবধানে করা এবং ভবদহ নিয়ে আন্দোলন করা সকল সংগঠনকে কাজ মনিটরিংতে সম্পৃক্ত করা এবং ৭. উজানে নদী সংযোগের ব্যবস্থা করার দাবি সম্বলিত  স্মারকলিপি প্রধানমন্ত্রীর বরাবরে প্রেরণের জন্য প্রদান করেন।