Type to search

বোরো উৎপাদনে রেকর্ড: উৎপাদন ছাড়িয়েছে সর্বোচ্চ দুই কোটি ৭ লাখ টন

কৃষি

বোরো উৎপাদনে রেকর্ড: উৎপাদন ছাড়িয়েছে সর্বোচ্চ দুই কোটি ৭ লাখ টন

অপরাজেয়বাংলা ডেস্ক: বোরো ধানের বাম্পার ফলনে এবার রেকর্ড গড়েছে দেশ। হিট শক ও শিলাবৃষ্টির পরও এবছর দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ দুই কোটি ৭ লাখ টন ছাড়িয়ে গেছে বোরো উৎপাদন। বাংলাদেশের ইতিহাসে এর আগে একক কোন ফসলের এত উৎপাদন হয়নি। প্রাথমিক হিসাবে, এবছর বোরো চাল উৎপাদন হয়েছে ২ কোটি ৭ লাখ ২০ হাজার মেট্রিক টন। যা গত বছরের তুলনায় ১১ লাখ টনের বেশি। গত বছর দেশে বোরো চাল উৎপাদন হয়েছিল ১ কোটি ৯৬ লাখ টন। এবছরের এই উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রাকেও ছাড়িয়ে গেছে। এ বছর দেশে বোরোতে ২ কোটি ৫ লাখ মেট্রিক টন চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল।

করোনা মহামারীর মধ্যেই সারাদেশে বোরো ধান কাটা সম্পন্ন হয়েছে। সেই থেকেই দেশে এবার বোরো ধান উৎপাদনে সুখবর মিলেছে। বোরো ধানের উৎপাদন গত কয়েক বছরের বাম্পার ফলনকে ছাড়িয়ে গেছে। এই রেকর্ড উৎপাদন বৃদ্ধির কারণ হচ্ছে হাইব্রিড ধানের আবাদ বৃদ্ধি এবং উচ্চ ফলনশীল নতুন ধানের জাত আবাদ। যে কারণে হেক্টর প্রতি ফলনও বেড়ে গেছে। এবছর জাতীয় গড় ফলন পাওয়া গেছে প্রতি হেক্টরে ৪.২৯ মেট্রিক টন। গত বছর দেশে বোরো ধানের জাতীয় গড় ফলন ছিল প্রতি হেক্টরে ৩.৯৭ মেট্রিক টন। অর্থাৎ প্রতি হেক্টরে উৎপাদন বেড়েছে এবছর ০.৩২ মেট্রিক টন (৮.০৬ শতাংশ)। গত কয়েক বছরের ইতিহাসে যা সর্বোচ্চ। ফলে বোরো ধান উৎপাদনে দেশ এবার নতুন রেকর্ড গড়তে সক্ষম হয়েছে।

এবার বোরো ধান কাটার সময়ে চাল উৎপাদন ১০ লাখ টন বেশি হবে বলে প্রত্যাশা করছিলেন কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক। সম্প্রতি একটি অনুষ্ঠানেও তিনি বলেছেন, এ বছর বোরোতে ২ কোটি ৫ লাখ মেট্রিক টন চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। গত বছর উৎপাদন হয়েছিল ১ কোটি ৯৬ লাখ টন। আশা করছি গত বছরের তুলনায় কমপক্ষে ১০ লাখ টন উৎপাদন বেশি হবে এবার। এবার বোরো উৎপাদনে কৃষিমন্ত্রীর সেই প্রত্যাশাকেও ছাড়িয়ে গেছে। সর্বশেষ প্রাথমিক হিসাবে, এবছর বোরো চাল উৎপাদন হয়েছে ২ কোটি ৭ লাখ ২০ হাজার মেট্রিক টন। যা কৃষিমন্ত্রীর প্রত্যাশার চাইতেও এক লাখ টন বেশি।

এ প্রসঙ্গে কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, গত বোরো মৌসুমে ধানের ভাল উৎপাদন হয়েছিল, কিন্তু আউশ- আমন মৌসুমে দফায় দফায় দীর্ঘস্থায়ী বন্যা ও অতিবৃষ্টির কারণে উৎপাদন অনেক কম হয়েছিল। সেজন্য, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী এ বছরের শুরুতেই আমরা সর্বাত্মক পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিলাম, যে কোন মূল্যে বোরোতে উৎপাদন বাড়াতে হবে।

তিনি বলেন, বীজ, সারসহ নানা প্রণোদনা কৃষকদের প্রদান করা হয়েছে। মাঠ পর্যায়ে আমাদের কর্মকর্তারা আবাদ বৃদ্ধিতে কৃষকদের সহায়তা করেছেন। আমাদের এসব উদ্যোগের ফলে গত বছরের তুলনায় এবছর ১ লাখ ২০ হাজার হেক্টরের বেশি জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। একই সাথে, গত বছরের তুলনায় প্রায় ৩ লাখ হেক্টরের বেশি জমিতে হাইব্রিডের আবাদ বেড়েছে। যার ফলে গত বছরের তুলনায় এবছর বোরোতে বেশি উৎপাদন হয়েছে। যা এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের ইতিহাসে বোরো চাল উৎপাদনের সর্বোচ্চ রেকর্ড।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের মহাপরিচালক মোঃ আসাদুল্লাহ বলেন, এবার বোরো ধানের ফলন বেশি হয়েছে। কারণ হাইব্রিডের আবাদ এবার বেড়েছে। নতুন নতুন জাতেরও সম্প্রসারণ ঘটেছে। হাইব্রিড ধানের আবাদ এবার বেড়েছে তিন লাখ হেক্টর। প্রতি হেক্টরে হাইব্রিডের উৎপাদন প্রায় পাঁচ টন করে হয়। ফলে তিন লাখ হেক্টরে প্রায় ১৫ লাখ টন ধান বেশি উৎপাদন হয়েছে।

তিনি বলেন, এবার আবহাওয়া ভালো ছিল। উৎপাদনে তেমন কোন ক্ষতি হয়নি। করোনার মধ্যেও আমরা কৃষককে নানাভাবে সহায়তা করেছি। দেশের ইতিহাসে বোরো ধান বা চালের উৎপাদন এবারই এত বেশি হয়েছে। যা দেশে সর্বোচ্চ বোরো ধান উৎপাদনে রেকর্ড সৃষ্টি করেছে। করোনার মধ্যে এটি একটি বড় সুখবর।

সাফল্য এসেছে যেভাবে ॥ বোরো ধান দেশের প্রায় ১৭ কোটি মানুষের খাদ্য নিরাপত্তার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বছরে মোট উৎপাদিত চালের ৫৫ ভাগের বেশি আসে এ বোরো থেকে। কিন্তু, সফলভাবে এই ধান ঘরে ওঠানো খুবই চ্যালেঞ্জিং। বিশেষ করে, আকস্মিক বন্যা ও অতিবৃষ্টির কারণে হাওড়ের ধান ঠিকমতো ঘরে তোলা নিয়ে প্রতিবছরই আতঙ্কে থাকতে হয়। এর সাথে করোনা পরিস্থিতির জন্য ধান কাটার সময়ে যুক্ত হয়েছে চলাচলে বিধিনিষেধ বা লকডাউন। এ অবস্থায়, বোরো ধান কর্তনের জন্য যন্ত্র বিতরণ ও আন্তঃজেলা ধান কাটা শ্রমিক পরিবহনে ত্বরিতগতিতে উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। স্বাস্থ্যবিধি মেনে সারাদেশে জেলা প্রশাসনের সমন্বয়ের মাধ্যমে শ্রমিকদের যাতায়াত নির্বিঘœ রাখা হয়। একই সাথে, কম্বাইন হারভেস্টার, রিপারসহ ধান কাটার যন্ত্র জরুরীভিত্তিতে বরাদ্দ দেয়া হয়।

ফলে অত্যন্ত সফলভাবে এ বছর হাওড়ের বোরো ধান ও সারাদেশের বোরো ধান ঘরে তোলা সম্ভব হয়েছে। শুধু তাই নয়, অন্যান্য বছরের তুলনায় এবছর অনেক আগেই বোরো ধান কৃষকের ঘরে উঠেছে। করোনার সময়ে কৃষকেরা যে সফলভাবে বোরো ধান ঘরে তুলতে সক্ষম হয়েছেন, এটি অত্যন্ত আনন্দের ও স্বস্তির বিষয় মনে করছেন কৃষি বিশেষজ্ঞরা।

এবছরের ধান কাটা কার্যক্রম পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ধানকাটা মেশিন দ্রুত মাঠে দেয়া এবং সরকারী তত্ত্বাবধানে শ্রমিকের সময়মতো যাতায়াত সুগম করার ফলেই এ বছর দ্রুততার সঙ্গে ধান কাটা সম্ভব হয়েছে। এক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রেখেছে এক জেলা থেকে অন্য জেলায় শ্রমিকদের চলাচল নির্বিঘœ করা এবং কৃষি যন্ত্রপাতি সময়মতো সরবরাহ করা। এবছর শুধু হাওড়ভুক্ত ৭ জেলাতেই বহিরাগত শ্রমিক আনা হয়েছে প্রায় ৫০ হাজার (৪৯১০৮ জন)। এছাড়া, তিন হাজার বিশ কোটি টাকার ‘কৃষি যান্ত্রিকীকরণ’ প্রকল্পের আওতায় অঞ্চলভেদে ৫০-৭০ শতাংশ ভর্তুকি দিয়ে ধান কাটাসহ অন্যান্য কৃষি যন্ত্রপাতি কৃষকদেরকে দেয়া হচ্ছে। এটি সারাবিশ্বে একটি বিরল ঘটনা। কৃষি মন্ত্রণালয়ের সহায়তায় অত্যন্ত দ্রুত ও স্বচ্ছতার সাথে কৃষি যন্ত্রপাতি কিনে মাঠে ব্যবহার করা হয়েছে।

গতবছর ধান কাটতে কম্বাইন হারভেস্টার মাঠে নামানো হয়েছিল ১ হাজার ২৪০টি। এবছর আরও ১ হাজার ৬৬৬টি মাঠে নেমেছে। অর্থাৎ মোট ২ হাজার ৯০৬টি হার্ভেস্টার মাঠে দেয়া হয়েছে। রিপারও চলেছে মোট ৮৩৯টি। ধান কাটা মৌসুমে কৃষকদের দুঃখ-কষ্ট লাঘবের এসব কৃষিযন্ত্র নতুন মাত্রাযোগ করেছে। এতে একদিকে শ্রমিক সঙ্কট থাকলেও দ্রুত ধান কাটা সম্ভব হচ্ছে, অন্যদিকে উৎপাদন খরচ কমার ফলে কৃষক লাভবান হচ্ছে।

বোরো আবাদ ॥ এবছর হাওড়ভুক্ত ৭টি জেলায় বোরো আবাদ হয়েছে ৯ লাখ ৪৬ হাজার ৫৩৪ হেক্টর জমিতে; যা দেশের মোট আবাদের প্রায় ২০ শতাংশ। আর শুধু হাওড়ে বোরো আবাদ হয়েছে ৪ লাখ ৫১ হাজার ৭৭০ হেক্টর জমিতে, যা মোট আবাদের প্রায় ৯.২৫ শতাংশ। আর সারাদেশে এবছর ৪৮ লাখ ৮৩ হাজার ৭৬০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে।

গত বছর (২০২০ সালে) বোরো ধান আবাদ করা হয়েছিল ৪৭ লাখ ৫৪ হাজার ৪৪৭ হেক্টর জমিতে। আর এ বছর আবাদ হয়েছে ৪৮ লাখ ৮৩ হাজার ৭৬০ হেক্টর জমিতে। অর্থাৎ গত বছরের চেয়ে এবছর ১ লাখ ২৯ হাজার ৩১৩ হেক্টর বেশি জমিতে বোরো আবাদ বেড়েছে। শতকরা হিসাবে এই বৃদ্ধির হার ২.৭২ শতাংশ।

আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো, সার্বিক উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য হাইব্রিড জাতের ধানের চাষ বৃদ্ধিতে এবছর জোর দেয়া হয়েছিল। গত বছর হাইব্রিড ধান চাষের জমির পরিমাণ ছিল ৮ লাখ ৮৬ হাজার হেক্টর; বিপরীতে এ বছর অর্জিত হয় ১২ লাখ ১৩ হাজার ৪৪৯ লাখ হেক্টর। অর্থাৎ এবছর ৩ লাখ ২৭৪ হাজার হেক্টর বা ৩৬.৯৫ শতাংশ জমিতে হাইব্রিড ধান বেশি আবাদ হয়েছে। আবার হাইব্রিডের গড় ফলনও বেশি। সাধারণ উচ্চ ফলনশীল ধান যেখানে হেক্টরে পাওয়া ৪ টনের কিছু বেশি, সেখানে হাইব্রিড ধান উৎপাদন হয় হেক্টর প্রতি ৫ টন।

বোরো উৎপাদন বৃদ্ধির উদ্যোগ ॥ গত আমনে উপর্যুপরি বন্যায় ধানের যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল তা পুষিয়ে নিতে বোরোর উৎপাদন বাড়ানোর নির্দেশনা দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সে মোতাবেক কৃষি মন্ত্রণালয় বোরোর উৎপাদন ও উৎপাদনশীলতা বাড়াতে সর্বাত্মক পদক্ষেপ নেয়। সদ্য সমাপ্ত বোরো মওসুমে ধানের আবাদ আগের বছরের চেয়ে অন্তত ৫০ হাজার হেক্টর বাড়ানোর নির্দেশনা নিয়ে কাজ করে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট দপ্তর ও সংস্থা।

এ বছর (২০২০-২১) বোরো ধান চাষের লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ৪৮ লাখ ০৫ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে। যা ছিল গত বছরের আবাদের চেয়ে ৫০ হাজার ৭৫৩ হেক্টর বেশি। কিন্তু সরকারের দেয়া প্রণোদনা ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরসহ কৃষি মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সকল কর্মকর্তার অনুপ্রেরণামূলক কর্মকা-ের কারণে লক্ষমাত্রার বিপরীতে অর্জন দাঁড়ায় ৪৮ লাখ ৮৩ হাজার ৭৬০ হেক্টর। যা লক্ষমাত্রার চেয়ে ৭৮ হাজার ৫৬০ হেক্টর বা ১.৬৩ শতাংশ বেশি।

এছাড়া, এবছর হাইব্রিড ধানের আবাদ বৃদ্ধির জন্য কৃষকদের সরকারী প্রণোদনা দেয়া হয়। প্রতিবিঘা জমিতে চাষের জন্য ৬৪ জেলার ১৪ লাখ ৯৬ হাজার ৯৭০ কৃষককে বিনামূল্যে ৭৬ কোটি টাকার হাইব্রিড ধানের বীজ সহায়তা দেয়া হয় ২ লাখ হেক্টর জমি আবাদের জন্য।

আবার প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ নানা কারণে ক্ষতিগ্রহমশ কিছু প্রান্তিক কৃষক বোরো ধানের আবাদ করতে সমর্থ নাও হতে পারেন- এমন বিবেচনায় নির্দিষ্ট কৃষকগণকে চিহ্নিত করে ১ লাখ ৬০ হাজার চাষীকে ২১ হাজার ৩৭৬ হেক্টর জমিতে আবাদের জন্য বিনামূল্যে বীজ ও সার সহায়তা দেয়া হয়।

হিট শকে ক্ষতি ॥ হিট শকে ক্ষতি না হলে এ বছর বোরো চাল উৎপাদন আরও প্রায় ১ লাখ টন বেশি হতো। এবার বোরো মৌসুম চলাকালে ৪-১১ এপ্রিল পর্যন্ত মূলত ৬টি জেলায় ধানগাছ ‘হিট শক’ ও অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেমন ঝড়োহাওয়া বা শিলাবৃষ্টিতে আক্রান্ত হয়। কৃষি কর্মকর্তারা সরেজমিনে পরিদর্শন, পর্যবেক্ষণ ও পর্যালোচনা করে মোট ক্ষতিগ্রস্ত জমি পায় ২১ হাজার ২৯২ হেক্টর। এর ফলে চালের উৎপাদন কম হয় ৯৫ হাজার ৯৩৪ মেট্রিক টন। প্রাকৃতিক কিছু বৈরিতা থাকলেও কৃষকগণ সময়মতো সম্প্রসারণ কর্মীদের পরামর্শমতো ব্যবস্থা নিয়েছেন, জমিতে দ্রুত সেচের ব্যবস্থা করেছেন এবং বালাইনাশক ব্যবহার করেছেন বিধায় হিট শক ও অন্যান্য ক্ষতি কমিয়ে ফলন উঠিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে। তবে চাষাবাদকালীন পোকামাকড়- রোগবালাইয়ের কারণেও প্রতিবছর ধানগাছের এমন কিছু ক্ষতি অনেকসময় হয়ে থাকে। এবছর অবশ্য রৌদ্রোজ্জ্বল আবহাওয়া থাকার কারণে এ ধরনের ক্ষতি কম হয়েছে।

বেড়েছে গড় ফলন ॥ গত বছরের তুলনায় ফলনের পরিমাণও এবার বেশি হয়েছে। গত বছর দেশে বোরো ধানের জাতীয় গড় ফলন ছিল প্রতি হেক্টরে ৩.৯৭ মেট্রিক টন। শুধু হাওড়ে ছিল প্রতি হেক্টরে ৪.০৩ মেট্রিক টন। এবছর জাতীয় গড় ফলন পাওয়া গেছে প্রতি হেক্টরে ৪.২৯ মেট্রিক টন। অর্থাৎ প্রতি হেক্টরে উৎপাদন বেড়েছে এবছর ০.৩২ মেট্রিক টন (৮.০৬ শতাংশ)। জাতীয় গড় বৃদ্ধি হিসেবে এটি কিন্তু কম নয়।

এই ফলন বেশি হওয়ার কারণ হচ্ছে, এ বছর হাইব্রিড ধানের উৎপাদন যেমন বেশি হয়েছে, তেমনি উচ্চফলনশীল ধানের প্রচলন এবং সম্প্রসারণও বেশি হয়েছে। আগের বছরগুলোর জনপ্রিয় জাত ব্রি-২৮ বা ব্রি-২৯ এর চেয়ে কৃষি বিজ্ঞানীদের উদ্ভাবিত এবং বাংলাদেশের মাটিতে পরীক্ষিত উচ্চফলনশীল জাত যেমন- ব্রি-৭৪, ব্রি-৮১, ব্রি-৮৮, ব্রি-৮৯ এবং ব্রি-৯২ জাতের সম্প্রসারণ এবছর বেশি হয়েছে। ব্রি-৮১, ব্রি-৮৮, ব্রি-৮৯, ব্রি-৯২ জাতের ফলন প্রতি বিঘাতে গড়ে ৩০-৩২ মণ বা প্রতি শতাংশে ১ মণ পাওয়া গেছে।

বাংলাদেশে ধান ফসলের মধ্যে বোরো ধান উৎপাদন একটা সিংহভাগ অংশ দখল করে রেখেছে। এ ফসল উৎপাদনে শুরু থেকে ধান ঘরে উঠানো পর্যন্ত পরিকল্পনা, পরিচর্যা, বিভিন্ন রকমের উপকরণের ব্যবহারও বেশি করতে হয়। আবহাওয়া সবসময় অনুকুলও থাকে না। যে কারণে অনেকসময় শঙ্কায় থাকতে হয় যে ঠিকমতো ফসল ঘরে উঠবে কিনা। বর্তমান সরকারের সফলতার চাবিকাঠি কিন্তু ওই শঙ্কা বা পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে তার ওপর ভিত্তি করে পরিকল্পনা করা, তারপর তা বাস্তবায়ন করার ফলেই। এবারে বোরো ফসলের ক্ষেত্রেও তাই করা হয়েছে। অর্থাৎ কৃষি উৎপাদনে সমস্যা ও সম্ভাবনা যেখানে, সরকার সেখানেই সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে।

কৃষিমন্ত্রী ড. রাজ্জাক বলেন, অধিক জনঘনত্বের দেশে নিত্য ক্রমহ্রাসমান জমি থেকে কৃষি উৎপাদনের ক্রমবৃদ্ধি বিশ্বের কাছে বিস্ময়ের ব্যাপার। প্রধানমন্ত্রীর দেখানো পথেই কৃষির এই উন্নয়ন। কৃষি উন্নয়নে বঙ্গবন্ধুর দর্শন ও ধারা অব্যাহত রেখেছেন তাঁর সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা। তাঁর সফল সরকারের শাসনামলে সার্বিক কৃষিতে এই বিপ্লব ঘটেছে, আগামীতে এর আরও উন্নয়ন হবে, আমরা এটা আশা করতেই পারি। – জনকণ্ঠ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *