Type to search

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর আয়কর ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’

শিক্ষা

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর আয়কর ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’

শনিবার (০৩ জুলাই) সমিতির চেয়ারম্যান শেখ কবির হোসেন স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে এ দাবি জানানো হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বর্তমানে বৈশ্বিক করোনা দুর্যোগের কারণে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই করছে। শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা, ক্যাম্পাস ভাড়া প্রদান করা অনেক ক্ষেত্রেই অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি নিয়মিত পাওয়া যাচ্ছে না, বৃত্তি ও টিউশন ফিসের ওপর ছাড় দিয়ে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করতে হচ্ছে। তাছাড়া এইচএসসি পরীক্ষা সময়মত না হওয়ার কারণে শিক্ষার্থী সংকটও দেখা দিয়েছে। এমতাবস্থায়, ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভূত আয়ের ওপর ১৫ শতাংশ হারে আয়কর আরোপের সিদ্ধান্ত সংশ্লিষ্ট সকল মহল এবং শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের মধ্যে ব্যাপক উৎকণ্ঠার সৃষ্টি করেছে।

এতে বলা হয়, শিক্ষা খাতকে অতীব গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনায় প্রাথমিক শিক্ষা থেকে শুরু করে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত শিক্ষা ব্যবস্থার সকল স্তরে সরকার বিপুল অংকের ভর্তুকি ও অর্থ সহায়তার দিয়ে থাকে। যার ধারাবাহিকতায় সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সমূহকে জাতীয় বাজেট থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা অর্থ বরাদ্দ দেয়া হলেও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ কোনো প্রকার সরকারি বরাদ্দ কিম্বা অনুদান পায় না। উপরন্তু, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা, শিক্ষা সামগ্রী ও বিজ্ঞানাগারের যন্ত্রপাতি ক্রয়, জমি ক্রয় এবং ক্যাম্পাস নির্মাণ সামগ্রীর উপর সরকারি ভ্যাট ও কর হিসেবে শত শত কোটি টাকা রাজস্ব পরিশোধ করা হয়। চলমান বৈশ্বিক করোনা দুর্যোগের কারণে নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ যখন আর্থিক প্রণোদনা ও দীর্ঘমেয়াদি ঋণ সহায়তার জন্য সরকারের কাছে বারবার আবেদন জানিয়ে আসছে সেসময় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপর আয়কর আরোপের সিদ্ধান্ত ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’ হিসেবে প্রতীয়মান। যা সরকারের উচ্চশিক্ষা প্রসারের নীতির সাথে সাংঘর্ষিকও বটে।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০১০ অনুযায়ী ট্রাষ্টের অধীনে পরিচালিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ অলাভজনক প্রতিষ্ঠান বিধায় ইতোপূর্বে ২০১৫ সালে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর ভ্যাট আরোপ করা হলে প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত উদ্যোগে তা রহিত করা হয়।  এছাড়া বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ ট্রাস্ট আইন ১৮৮২ অনুযায়ী ট্রাষ্টের অধীনে পরিচালিত অলাভজনক প্রতিষ্ঠান বিধায় ২০১০ সালে এসআরও এর মাধ্যমে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর কর ধার্য করা হলে হাইকোর্ট কর্তৃক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপর কর আরোপের বিষয়টি স্থগিত রয়েছে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, কোম্পানি আইন ১৯৯৪ এর আওতায় লাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচালিত মেডিক্যাল কলেজ ও ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের সাথে ট্রাস্ট আইনে ১৮৮২ অনুযায়ী পরিচালিত অলাভজনক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপর একই আওতায় সমভাবে আয়কর আরোপের সিদ্ধান্ত প্রচলিত আইনের পরিপন্থী।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০১০ অনুযায়ী বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভূত আয় থেকে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণ, ল্যাব-লাইব্রেরির উন্নয়ন, শিক্ষক নিয়োগ, গবেষণা কার্যক্রম ইত্যাদি পরিচালনা করতে হয়। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন অনুযায়ী উদ্ভূত আয় থেকে কোন প্রকার অর্থ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতাগণ গ্রহণ করতে পারেন না। এক্ষেত্রে ১৫ শতাংশ হারে আয়কর আরোপ করা হলে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো রুগ্ন হয়ে পড়বে এবং এসব প্রতিষ্ঠানের কাঙ্খিত উন্নয়ন যেমন বাঁধাগ্রস্ত হবে তেমনি করের চাপে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা ব্যয়ও বৃদ্ধি পাবে।

এতে আরও বলা হয়েছে, উচ্চ শিক্ষার মাধ্যমে আগামী দিনের মানসম্পদ উন্নয়নে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অবদান তথা বিপুল সংখ্যক শিক্ষক, কর্মকর্তা কর্মচারীর কর্মসংস্থান এবং শিক্ষার্থীদের স্বল্প খরচে দেশে থেকে আন্তর্জাতিক মানের উচ্চশিক্ষা গ্রহণের সুযোগ তৈরির বিবেচনায় বাংলাদেশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতির পক্ষ থেকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপর আরোপিত ১৫ শতাংশ আয়কর প্রত্যাহারের জন্য সদাশয় সরকারের প্রধানমন্ত্রীর কাছে সনির্বন্ধ অনুরোধ ও দাবি জানাচ্ছি।

সূত্র, বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম